| |
               

মূল পাতা ইসলাম সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান; ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?


সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান; ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?


মুফতি কামরুল ইসলাম     02 February, 2022     09:24 PM    


সারোগেসি আসলে একটি সহায়ক প্রজনন-ভিত্তিক পদ্ধতি। যেখানে কাঙ্খিত বাবা-মা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া করেন। ওই গর্ভধারিণী মাকে বলা হয় সারোগেট। ওই নারীরাও অর্থের বিনিময়ে অন্যের শিশু গর্ভে ধারণ করেন। সারোগেসির অর্থ হলো অন্যের সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করা। গর্ভকালীন সময়ে ওই দম্পতি সারোগেট মায়ের গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ যত্ন নেয় ও সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেয়। সন্তান ধারণের জন্য নারী ও পুরুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। তবে সারোগেসির জন্য শুধু সারোগেট মাকে প্রয়োজন। প্রথমে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। এরপর যে দম্পতি সন্তানের মা-বাবা হতে চাচ্ছেন, ওই পুরুষের শুক্রাণু নিয়ে আইভিএফ কৌশলের মাধ্যমে সারোগেট নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।  বর্তমানে এই পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ করার প্রবণতা পৃথিবীর এক শ্রেণির মানুষের মাঝে বাড়ছে। মানুষকে এই পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে, বহু বড় সেলিব্রেটিরা নিজেদের দেহাবয়ব ঠিক রাখতে এ পদ্ধতি গ্রহণ করছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ অনেক সমকামিরাও পরিবার শুরু করার জন্য এই পদ্ধতিতে সন্তান নিচ্ছে, যা সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মহান আল্লাহ জৈবিক চাহদিা পূরণ ও সন্তান গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেনে। পবত্রি কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
هوالذي خلقلكم من نفس واحدة وجعل منها زوجها ليسكن إليها فلما تغشاها حملت حملا خفيفا فمرت به ـ فلما أثقلت دعوا الله ربهما لئن ءاتيتنا صالحا لنكونن من الشاكرين
“তিনিই তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সঙ্গে সংগত হয় তখন সে এক হালকা র্গভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর র্গভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে র্প্রাথনা করে, যদি আপনি আমাদরে এক র্পূণাঙ্গ সন্তান দান করনে তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।” (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৯)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
والذين هم لفروجهم حافظون ـ إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم فإنهم غير ملومين ـ فمن ابتغى وراء ذلك فأولئك هم العادون
“আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষতি, নিজেদের স্ত্রী বা অধকিারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত, অতঃপর কউে এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী”। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫-৭)

উল্লখিতি আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ, জৈবিক চাহদিা পূরণ ও বংশ বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে বিশেষভাবে স্ত্রীকে চিহ্নিত করেছেন। এবং অধকিারভুক্ত দাসীর মাধ্যমে এই চাহদিা পূরণরে বৈধতা দিলেও বর্তমানে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এখন আর রাস্তাটি খোলা নইে। অতএব বর্তমান যুগে জৈবিক চাহদিা পূরণ ও সন্তান গ্রহণরে একমাত্র মাধ্যম নিজের বিবাহিত স্ত্রী। এর বাইরে কারো মাধ্যমে এসব চাহদিা পূরণ নিষিদ্ধ। যদি কেউ এর বাইরে গিয়েএসব চাহিদা পূরণ করে, তবে সে কোরআনরে ভাষ্যমতে সীমালঙ্ঘনকারীদরে অর্ন্তভুক্ত হবে।

বর্তমান প্রচলিত সারোগেস পদ্ধতি তথা গর্ভভাড়ার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের কারণে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এক. সারোগেস পদ্ধতির মাধ্যমে বংশপরিক্রমায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। দুই. পরপুরুষের বীর্য পরনারীর জরায়ুতে প্রবেশ করানোয় জিনার সাদৃশ্য হয়।

হাদসি শরিফে এসেছে-  لا يحل لامرئ يؤمن بالله واليوم الآخر أن يسقى ماءه زرع غيره  নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেনে, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কয়োমত দবিসরে প্রতি বশ্বিাস রাখে তার জন্য নজিরে পানি (বীর্য) দিয়ে অপরের ক্ষেত সেচ করা বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩১)

তিন. সারোগসেরি মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুর মা আসলে কে হবেন, তা আইনি জটলিতা রয়েছে। পবত্রি কোরআনরে বিধান অনুযায়ী জন্মদাতা নারীই হয় সন্তানরে মা। পবত্রি কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, إن أمهاتهم إلا اللائي ولدنهم “তাদরে মা তো শুধু তারাই, যারা তাদরে জন্ম দিয়েছে"। (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ২)

ফলে সারোগটে মায়ের অনেক আত্মীয়-স্বজন এই সন্তানরে নিকট-আত্মীয় বলে বিবেচিত হবে। যাদের ও যাদের সন্তানদের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এই সন্তানরে জন্য হারাম হবে। কিন্যত যেহেতু সারোগটে মা তার ভাড়া পাওয়ার পর সন্তানকে ভাড়াদাতাদের কাছে হস্তান্তররে পর তাদরে মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ না-ও থাকতে পারে, তখন এই শিশু বড় হয়ে কীভাবে শনাক্ত করবে যে যার সঙ্গে তার বিয়ে হচ্ছে, সে ওই সারোগটে মায়ের সূত্রে তার কোনো হারাম আত্মীয় হয়ে যায় কি না? সারোগটে মায়েদের তো এমন আরো অনকে সন্তান থাকতে পারে, যারা পরস্পর ভাই-বোন হবে, তাদের মধ্যে বিয়ে বন্ধনও হারাম হবে, কিন্তু বড় হওয়ার পর এগুলো শনাক্ত করাও তো সম্ভব হবে না।

এই জটিলতাগুলো সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো, একদিকে যেমন মা-বাবার শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহাররে কারণে তাঁদরেই মা-বাবা বলা যায়, অন্যদকিে র্গভ ভাড়াদাতা (সারোগটে মা) র্গভধারণরে কারণে তাঁকেও মা বলতে হয়। এক কথায় বলতে গেলে এ ধরনের পদ্ধতি উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি ডেকে আনবে। মানব বংশধারার পবত্রিতাকে হুমকিতে ফেলবে। সন্তানের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

অতএব, উল্লেখিত আলোচনার দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে যে, সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার মাধ্যমে সন্তান জন্মদান ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েয ও শরীয়ত বিরোধী একটি কাজ। যা পরিত্যাগ করা মুসলিম নর-নারীর জন্য কর্তব্য। তাই প্রতিটি মুসলমানরে উচিত, এসব বিষয়ে সর্তক থাকা। মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে শয়তানের সূক্ষ্ম প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা