রহমত ডেস্ক 05 January, 2022 10:19 PM
একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের দশম দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে ছয়টি প্রস্তাব দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশ। দলটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—আইন প্রণয়ন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে ইসিকে ক্ষমতা দেওয়া, বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগ, নির্বাচনের সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদলের ক্ষমতা কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা।
আজ (৩ জানুয়ারি) সোমবার রাত ৮টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে তারা এসব প্রস্তাব পেশ করেন। পরে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-একাংশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলে ছিলেন জমিয়তের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস মানিকনগরী, যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন জাকারিয়া ও অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন কাসেমী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন এবং সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান।
সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে দলটির মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন করতে আইন প্রণয়নের কথা বলা আছে। তাই আমরা বলেছি—সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য একটি আইন প্রণয়ন করে সেই আইনের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। দেশের বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিলে বিশ্বস্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। নির্বাচনকালীন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রদবদলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছি আমরা। এছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কমিশনের ওপর ন্যস্ত করারও দাবি জানানো হয়েছে।
বঙ্গভবনে নেতৃবৃন্দদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটারদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন, এজন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
গত ২০ ডিসেম্বর চলমান সংলাপের প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি । এখন পর্যন্ত ১৫টি রাজনৈতিক দলের সাথে ১০ দিনে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি। এর মধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশ নেয়নি। এগুলো হলো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ।
৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্র (এলডিপি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল’র সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায় আলোচনা হবে। ১০ জানুয়ারি সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি-জেপির সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাথে সন্ধ্যা সাতটায়। মঙ্গলবার ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের সাথে এবং ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাথে। ১২ জানুয়ারি বিকেল চারটায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাথে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে এবং ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সাথে একই দিনে সন্ধ্যা ছটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি 'সার্চ কমিটি'র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।