| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘আড়াই লাখ’ বীরাঙ্গনার নাম-পরিচয় রাষ্ট্রকেই প্রকাশ করতে হবে : জাফরুল্লাহ


‘আড়াই লাখ’ বীরাঙ্গনার নাম-পরিচয় রাষ্ট্রকেই প্রকাশ করতে হবে : জাফরুল্লাহ


রহমত ডেস্ক     28 December, 2021     09:48 PM    


বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা নয় মাস যুদ্ধ করেছি আর বীরাঙ্গনারা ১৯৭১ সালেও যুদ্ধ করেছেন এরপরও করেছেন এবং এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত আছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ‘আড়াই লাখ’ বীরাঙ্গনার নাম-পরিচয় রাষ্ট্রকেই প্রকাশ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আড়াই লাখ বীরাঙ্গনার কথা বলা হয়। কিন্তু স্বীকৃতি পেয়েছেন মাত্র ৪১৬ জন। এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কি হতে পারে। তাদেরকে সম্মান করতে না পারা অন্যায়। জয়গুনের কথাই ধরি, একটা ১০ বছরের মেয়েকে কয়েকমাস ধরে নির্যাতিত হতে হয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলছেন, তার চেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা কে আছেন? তার প্রতি পাকিস্তানিরা যতটুকু অত্যাচার করেছে তার থেকে বেশি করেছি আমরা। রাষ্ট্র সঠিকভাবে তাদের সহযোগিতা করছে না।

আজ (২৮ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা জয়গুন নাহার খনামকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়া সংবর্ধনা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক বদরুল হকের সভাপতিত্বে ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সভানেত্রী ফরিদা আখতার, নারী পক্ষের সদস্য লিপি লিলিয়ান রোজারিও, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের নিউরোসাইন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এইচ শাহরিয়ার সাবেত। এসময় উপস্থিত ছিলেন নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক জেবাহ্‌ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আকরাম হোসেন, অধ্যাপক শওকত আরমান প্রমুখ।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এবারই প্রথম সংবর্ধনা ও সম্মাননা পেলেন জয়গুন নাহার খানম। গত ১৩ নভেম্বর মেরুদণ্ড ব্যাথা নিয়ে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হন। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র বিনামূল্যে তার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। পাশাপাশি নারীপক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে এই বীরাঙ্গনাকে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অশ্রুভেজা চোখে একাত্তরে নিজের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস নির্যাতনের কথা তুলে ধরে জয়গুন নাহার বলেন, যুদ্ধ শেষে জন্ম হয় তার মেয়ের। এরপর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। পরিবার, সমাজের নানা কটু কথা শুনে দিন পার করতে হয় মা, মেয়েকে। এভাবে ৫০টা বছর কেটেছে। তিনি পাননি কোনো রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা। এখন বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার। যুদ্ধদিনে জয়গুনের ওপর নির্যাতনের বর্ননা শুনে উপস্থিত অতিথিরাও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন,  শুধু অস্ত্র কিংবা কলম নিয়ে যুদ্ধ করেই দেশ স্বাধীন হয়নি। আমরা যুদ্ধের সময় দেখেছি অনেকেই তাদের ঘরে আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। অনেকের ঘরে খাবার ছিল না। তারা না খেয়ে আমাদের খেতে দিয়েছে। পরে যখন পাকিস্তানিরা এসে বলতো মুক্তি আসছিল? তখন তারা বলতো, না তো তারা আসেনি। তখন পাকিস্তানিরা বুঝে ফেললে তাদের নির্যাতন করেছে। অনেক জায়গায় তাদের হত্যা করেছে। তাদের অবদান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বেশি ছিল। অনেকে বীরাঙ্গনা অর্থ সঠিকভাবে জানেন না। বীরাঙ্গনাকে খারাপভাবে ব্যবহার করেন। তাই আজকে আমরা মুজিবশতবর্ষ পালন করছি। তাই সরকারের উচিত বীরাঙ্গনাদের সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরা।

বীরাঙ্গনাদের সহযোগিতা করায় ‘নারীপক্ষ’র প্রশংসা করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নারীপক্ষ নিজে উদ্যোগী হয়ে বিভিন্নজনকে সহযোগিতা করেছে। আমাদের উচিত বীরাঙ্গনাদের নিয়ে গবেষণা করা এবং সঠিক তথ্য তুলে ধরা। আমাদের রাষ্ট্রকে অবশ্যই চাপ দেওয়া উচিত যে আমরা লাখো মা-বোনের হিসাব জানতে চাই। তাদেরকে আমরা জানতে চাই।