| |
               

মূল পাতা জাতীয় বিচারের জন্য কাউকে যেন চোখের পানি ফেলতে না হয় : প্রধানমন্ত্রী


বিচারের জন্য কাউকে যেন চোখের পানি ফেলতে না হয় : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     28 December, 2021     07:47 PM    


সকলের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করবে। ন্যায় বিচার মানুষের প্রাপ্য। সেটা যেন সব সময় পায় সেটা আমরা চাই। কারণ আমরা ভুক্তভোগী। তাই আমরা জানি বিচার না পাওয়ার কষ্টটা কি। আমরা যারা ১৫ই অগাষ্টে সব হারিয়েছিলাম, আমার মতো বাবা মা হারিয়ে যেন কাউকে বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে না হয়। সেটাই আমরা চাই। সেটা আপনারা নিশ্চিত করে দেবেন। আর আমি যতক্ষণ সরকারে আছি এর জন্য যা যা দরকার আমরা করবো।

আজ (২৮ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ ও ‘বঙ্গবন্ধু এন্ড জুডিসিয়ারি’ শীর্ষক বাংলা ও ইংরেজীতে মুজিব স্মারক গ্রস্থ এবং ‘ন্যায়কন্ঠ’ শীর্ষক মুজিববর্ষের স্মরণিকা’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহয্যে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।  অ্য্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারপতি এবং স্মারক গ্রন্থ এবং স্মরণিকার সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুজিব স্মারক গ্রন্থ এবং স্মরণিকার ওপর অনুষ্ঠানে ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রচারিত হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের সকল শহিদ এবং বিজয়ের এই মাসে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

বিচারকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিচারকদের থাকার ব্যবস্থা, তাদের চলার ব্যবস্থা, সব ধরনের ব্যবস্থা, সুযোগ সুবিধা আমরা আমাদের সাধ্যমত আমি করে দিয়েছি। আমরা আইন কমিশন গঠন করি। বিচারকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আমি প্রতিষ্ঠা করে দেই। এখনতো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রেনিং নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। অন্য দেশে কিভাবে হয় সেটা আমাদের দেশের মানুষের জানা উচিত, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ যাতে বিচার পায় সেজন্য লিগ্যাল এইড কমিটি করে তাদের জন্য বিচার প্রাপ্তির ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। জনসাধারণকে আইনগত সহায়তা প্রদানের বিষয়েও তাঁর সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরেপ্রধানমন্ত্রী বলেন, এনেক্স ভবন করে দিয়েছি। পাশাপাশি প্রত্যেকটা জেলা কোর্ট নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছে তাঁর সরকার। পাকিস্তান আমলে আইন ছিল, বিচার প্রক্রিয়ায় মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। জাতির পিতা সেই আইন পরিবর্তন করে সুযোগ দিলেন। কিন্তু আমি এসে দেখলাম আমাদের উচ্চ আদালতে কোন মহিলা নেই। আমি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানালাম যে, সেখানে মহিলাদের সুযোগ দিতে হবে। এ সময় জনসাধারণের জন্য বিচারের রায় বাংলায় লেখার ওপর পুনরায় গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইংরেজীতে লেখা বিচারের রায় আসামীরা কি কতটুকু বোঝে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং ইংরেজীতে রায় লেখার সাথে সাথে এটার বাংলায় অনুবাদটা যাতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহবান জানান। এজন্য আলাদাভাবে ট্রান্সলেটর নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। আইন কমিশনের বের করা শব্দকোষ এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের বিয়োগান্তক অধ্যায় তুলে ধরে দীর্ঘদিন বিচার না পাবার জন্য আক্ষেপ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল- তারা তাদের দেশে ফিরতেও বাঁধা সৃষ্টি করে এবং খুনীদের বিচারের হাত থেকে রক্ষায় ইনডেমনিটি অ্যাক্টও জারি করে। ছয় বছর প্রবাসে জীবন কাটাতে বাধ্য হবার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা এবং ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে বহু বছর বিচার না পেয়ে মনে অনেক দুঃখ ছিল। যা হোক, এই হত্যার বিচার পেয়েছি। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার রায় কার্যকর হওয়ায় বিচার বিভাগ, দল ও দেশবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে এখন আরেকটা দায়িত্ব রয়ে গেছে। চক্রান্তটা খুঁজে বের করা। এটা একদিন বের হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। ৯৬ সালে তিনি প্রথম সরকার গঠনের পরই কেবল এদেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সেনাছাউনি থেকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার কাজটা তিনি করতে পেরেছেন। পাশাপাশি বিচার বিভাগের অধিকারের জন্য বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য এবং দেশের মানুষের উন্নয়নে জন্য অনেক কাজ করেছেন।

তাঁর সরকার ক্ষমতায় না এলে বা তিনি বেঁচে না থাকলে এদেশে কোনদিন বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার হতো কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, তখন গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার বা মানবাধিকারটা কোথায় ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না এলে দেশে সেই ইনডেমনিটি বা সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই থেকে যেত। বাবার হত্যাকান্ডের বিচার চাইতে মামলা করার জন্য তাঁকে, তাঁর মতন আপনজন হারাদের ক্ষমতায় আসতে হয়েছে’, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার বিচার পাওয়ার অধিকার হরণ করা হয়েছিল এবং আমরা সরকারে আসার পরই এই বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যদিও এই বিচারের রায় দিতে গিয়ে বা বিচার করতে যেয়ে উচ্চ আদালতে অনেকেই সেই সাহসটা পাননি, একটা পর্যায়ে সরে গেছেন।’

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকা প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও কয়েকজন খুনী পালিয়ে আছেন, তাদেরকেও খোঁজা হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে যে, আমেরিকার মত দেশ সবসময় ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটাধিকারের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, আমরা যে ন্যায় বিচার পাইনি- তারপরে যখন বিচার হলো, সেই খুনীদের আশ্রয় দিয়ে বসে আছে। তিনি সরকারে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে যে কজন রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতায় এসেছেন তাঁদের কাছে খুনীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কথা বলেছেন,‘আমি বার বার বলেছি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে আপনারা কিভাবে আশ্রয় দেন। আপনাদের জুডিসিয়ারি কিভাবে একজন খুনীতে আশ্রয় দেয়? আমেরিকায় খুনী রাশেদ এবং কানাডায় মেজয় নূর আশ্রয় নিয়ে আছেন। বিচার বিভাগের অধিকারের জন্য, বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কি করেছি, সেটা আর আমি এত বেশি বলতে চাই না। তবে আমি এইটুকু বলবো যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমরা নিশ্চিত করেছি।

করোনাভাইরাসের মধ্যে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য তাঁর সরকারের ভার্চুয়াল কোর্ট করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরফলে বিচার কার্য স্থবির হতে পারেনি অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অন্য সরকারগুলোর মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগে কখনো হস্তক্ষেপ করেনি, আমরা কখনো বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করিনি, এর আগে অনেক ঘটনা আছে আপনারা জানেন। দেখা গেছে ফলস সার্টিফিকেট এর ব্যবহার বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কি রায় দেওয়া হবে সেটা নিয়ে আলোচনা, এ রকম বহু ন্যাক্কারজনক ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।‘অন্তত আমি এটুকু বলতে পারি আমরা সরকারে আসার পর, অন্তত এই পরপর তিনবার এখন আমরা ক্ষমতায় বা এর আগে একবার ছিলাম, আমরা কিন্তু সেটা করার সুযোগ দেইনি। সব সময় একটা ন্যায়ের পথে যেন সবাই চলতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনারা দেখবেন, একের পর এক আমরা কাজ করে গেছি। দ্বিতীয়বার যখন ক্ষমতায় এসেছি তখন আমরা দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৯ পাশ করে বিচার বিভাগ পৃথিকীকরণের কাজটি স্থায়ী রূপ দেই। এমনকি অর্থনৈতিক ভাবেও যেন বিচার বিভাগ স্বাধীনতা অর্জন করে সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু আমি ‘৯৬ সালে এসে করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এসে সব রকম সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এর মাঝে আপনারা জানেন, বিভিন্ন জেলায় বোমা মেরে বিচারকগণকেও হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের সব সময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে। আমাদের দেশটাও যেমন বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলবে, সাথে সাথে একটি দেশের সমস্ত অঙ্গগুলোও যেন সেইভাবে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, আমরা সেটাই করতে চাই। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির শুরু হওয়ার কথাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশ ডিজিটাল হবে এবং আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হবো। আজকে আমাদের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা দীর্ঘদিন ধরে সেই ২০০৮ এর নির্বাচনের পর ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এই উন্নতি করতে পেরেছে।

বিএনপি-জাময়াতের দু:সময়ের খন্ডচিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নতির জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপ্টা মোকাবেলা করতে হয়েছে। কখনো সেই হেফাজতকে নিয়ে এসে তাদেরকে নিয়ে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, জ্বালাও পোড়াও করা, কখনো অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করা, কখনো নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন করা, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সেটাও সফলভাবে আমরা করে আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা।