| |
               

মূল পাতা জাতীয় এখনই বাংলাদেশ-ভারতে বন্ধুত্ব বাড়ানোর উপযুক্ত সময় : ভারতের রাষ্ট্রপতি


এখনই বাংলাদেশ-ভারতে বন্ধুত্ব বাড়ানোর উপযুক্ত সময় : ভারতের রাষ্ট্রপতি


রহমত ডেস্ক     16 December, 2021     10:39 PM    


ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতে বন্ধুত্ব বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়। দুই দেশের ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ বিশেষ করে যুবকদের ধারণা, সৃজনশীলতা, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির জগতে যৌথভাবে বিশ্বব্যাপী অগ্রগামী উদ্যোগ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বাংলাদেশ-ভারতের উদ্ভাবকদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নতুন সমাধান খুঁজে বের করার জন্য আহ্বান জানাতে হবে। দুই দেশের আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক সেরা ধারণাগুলো খুঁজে বের করতে চিন্তাবিদদের আমাদের নিজস্ব অনন্য সাফল্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য অনুরোধ জানাতে হবে। আন্তঃসংযোগের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ধারণা ও উদ্ভাবনের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের সুযোগ তৈরি করতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। উৎপাদন ও পরিবহন সংযোগের সমন্বিত সরবরাহ শৃঙ্খলের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে দুই দেশের ব্যবসাগুলো উৎসাহিত করতে হবে, যা আমাদের উপ-অঞ্চলকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম উৎপাদন কেন্দ্র এবং পণ্য ও পরিষেবাগুলোর জন্য বিশ্বের বৃহত্তম বাজার হতে সক্ষম করবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও বন্ধুত্ব আরও গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

আজ (১৬ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যের শুরুতে রামনাথ কোবিন্দ বাংলায় বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। বক্তব্যের মাঝামাঝি তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার কয়েক চরণ আবৃত্তি করেন।

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা দেশের নাগরিকদের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি করেছে। ভৌগোলিক সুবিধা ও বাংলাদেশের চমৎকার অর্থনৈতিক সাফল্য সমগ্র উপ-অঞ্চল ও বিশ্বকে উপকৃত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে, ঘনিষ্ঠ উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংযোগ স্বল্প সময়ের মধ্যে সোনার বাংলা গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মতো এত মহাকাব্যিক ত্যাগের সাক্ষী মানবসভ্যতায় খুব কমই হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রতিটি ভারতীয় বিশেষ করে আমার প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। গতকাল সাভারে লাখো শহীদের স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন ছিল গভীর আবেগময় অভিজ্ঞতা। আমি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সারাংশ শুনে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি। এটি সর্বদা ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনাকে উদ্দীপিত করে। তাই ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্বতালিকায় ন্যায়সঙ্গতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তিনি বলেন, বলেন, বাংলাদেশের সংগ্রাম ভারতে যে মাত্রায় সহানুভূতি ও তৃণমূল স্তরের সমর্থন লাভ করেছে তার পরিমাণও ইতিহাসে বিরল। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের জনগণকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য তাদের হৃদয় দ্বার উন্মুক্ত করেছে। ভাইবোনদের প্রয়োজনের সময়ে তাদের সাহায্য করা আমাদের জন্য সম্মানের ও পবিত্র দায়িত্ব ছিল। ইতিহাস সর্বকালে দুই দেশের বন্ধুত্বের এই অনন্য ভিত্তির সাক্ষ্য দেবে যে, গণযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই যুদ্ধের কয়েকজন সাক্ষী (ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই) এখানে দর্শকদের মধ্যে রয়েছেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও রয়েছেন এবং তারা আমাদের বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের শক্তির জীবন্ত সাক্ষ্য, যা পাহাড়কেও টলাতে পারে। বিজয়ের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপনে এ সফর অনন্য সম্মানের। এটি আমাদের বন্ধুত্বের সত্যিকারের প্রতিফলনও বটে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতো করোনা মহামারি শুরুর পর ভারতের বাইরে এটিই আমার প্রথম সফর। মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত।

তিনি আরো বলেন, ৫০ বছরের কিছু আগে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু সেসময় সমালোচক ও নিন্দাকারীদের কাছে এটি অসম্ভব স্বপ্ন বলে মনে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেন মুক্তির সম্ভাবনাকে বাতিল বলে মনে হচ্ছিল। একটি নিষ্ঠুর, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সুসজ্জিত শত্রু, যারা কোনো কিছুতেই থামবে না, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাংলাদেশের প্রতিকূলতা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্ব, সুস্পষ্ট নৈতিক দৃঢ় প্রত্যয় ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য তার অদম্য দৃঢ়তা ছিল সত্যিকার অর্থে পট পরিবর্তনকারী। এরপর বিশ্ব একটি মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছাকে কোনো শক্তি দ্বারা দমন করা যায় না, তা যতই নৃশংস হোক না কেন।

সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, একজন যুবক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নৈতিক সাহসে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। অন্যান্য লাখো মানুষের মতো আমিও তার বজ্রকণ্ঠে ও সেই সময়ে বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা বহনকারী উপলব্ধিতে বিদ্যুতায়িত হয়েছিলাম। আমার প্রজন্মের লাখ লাখ ভারতীয়ের মতো আমরা একটি অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ে উল্লসিত হয়েছিলাম এবং বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাস ও সাহসে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যা শুধু রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন নয় বরং একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রও বটে। দুঃখের বিষয়, জীবদ্দশায় তার দর্শন বাস্তবায়িত হতে পারেনি। স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে, বুলেট ও সহিংসতা এমন ধারণা নির্বাপিত করতে পারে না, যা মানুষ কল্পনায় ধারণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনায় দৃঢ় সংকল্পের কথা উল্লেখ করে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময় গুপ্ত হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে, তিনি অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে এসব মোকাবিলা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয় ও তার বিদ্রোহী চেতনার দ্বারা চালিত হয়েছেন, যেমনটি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পরিশ্রমী ও উদ্যোগী জনগণ বঙ্গবন্ধুর আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ভারত সব সময় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। আমরা বন্ধুত্বের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক, ছাত্র বিনিময় ও সহযোগিতার একাধিক ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এগুলো সবই পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সার্বভৌম সমতা ও নিজ নিজ দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই, গভীর বন্ধুত্বের নিশ্চয়তা দেয়।  বাংলাদেশ একটি বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উর্বর জমি ও নদীবিধৌত অনন্য দেশ। এটি কবি, শিল্পী, পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের দেশ। ঐতিহাসিকভাবে এই ভূখণ্ডের মানুষ সবসময় শিল্প ও পাণ্ডিত্যকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশ সর্বদা জাতীয় পরিচয়ের প্রভাবশালী ও ঐক্যবদ্ধ উপাদান-মন, সংস্কৃতি ও ভাষার সাধনাকে প্রাধান্য দিয়েছে।