| |
               

মূল পাতা সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমান নেতৃত্বাধীন ওলামায়ে কেরাম ভীতু নন, ভয়ের কাল গত হয়ে গেছে


বর্তমান নেতৃত্বাধীন ওলামায়ে কেরাম ভীতু নন, ভয়ের কাল গত হয়ে গেছে


রহমত টোয়েন্টিফোর ডটকম     07 December, 2020     06:12 PM    


তারেকুল ইসলাম


আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, মুফতি ফয়জুল করীম ও মাওলানা মামুনুল হক সাহেবদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সো-কল্ড সংগঠন।

প্রথমে হুমকি-ধমকি দিয়ে এবং মাহফিল করতে না দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এতে কাজ না হওয়ায় এখন মামলা দিয়ে ভিন্ন পন্থায় আগাচ্ছে মূর্তিবাদী সেকুলাররা।

ওদের মামলা-মোকদ্দমাতেও কাজ হবে বলে মনে হয় না। কারণ বর্তমান নেতৃত্বাধীন ওলামায়ে কেরাম ভীতু নন। ভয়ে তারা নিশ্চুপ হয়ে যাবেন বলে মনে করিনা। ভয়ের কাল গত হয়ে গেছে।

আর মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে ঢোকানো গেলেও উপরোক্ত আলেমদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয়না। বর্তমান সিচুয়েশন আপাতদৃষ্টিতে সরকারের অনুকূলে নেই। কারণ, খুব লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ভাস্কর্য ইস্যুটাকে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জামায়াত-শিবির, রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ইত্যাকার প্রচলিত প্রপাগান্ডা দিয়ে মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। দৃশ্যত, এসব রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা পরাজিত হয়েছে ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ ধর্মীয় বয়ানের কাছে।

যাই হোক, বিশেষত শেখ হাসিনাকে খুবই কৌশলী বলে জানি। নিশ্চয়ই তিনি পরিস্থিতির মতিগতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আমার মনে হচ্ছে, তিনি শুরুতেই হার্ডলাইনে যেতে চাননি বা এখনো চাচ্ছেন না হয়ত। কিন্তু ভাস্কর্য ইস্যুটা এখন আর নিছক ধর্মীয় প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নেই, বরং একইসাথে বিষয়টি আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক ইগোর সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। কারণ এবারের ভাস্কর্য বিতর্কটা দেবী থেমিসের মতো কোনো অরাজনৈতিক মূর্তিকে কেন্দ্র করে হলে আওয়ামী সরকারের পক্ষে মেনে নিতে তেমন সমস্যা হতো না। কিন্তু বিধি বাম; এখনের ভাস্কর্য ইস্যুটা বঙ্গবন্ধুকেন্দ্রিক, ফলে রাজনৈতিকও বটে!

একদিকে ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট, আরেকদিকে রাজনৈতিক ইগো। সম্ভবত এরকম দো-টানায় পড়ে এখনতক শেখ হাসিনা চলমান ভাস্কর্য বিতর্কে কোনো ধরনের বক্তব্য না দিয়ে সময় ও কৌশল নিচ্ছেন। প্রথমে ওনার মন্ত্রী ও নেতাকর্মীরা হুমকি-ধমকি দিয়ে এবং মাহফিল করতে না দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় এখন মামলা দিয়ে ওলামায়ে কেরামকে চাপে ফেলার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে বলেই আমর ধারণা।

মামলা-পরবর্তী বল এখন ওলামায়ে কেরামের কোর্টে। এখন ওনারা এটা কিভাবে ডিল করবেন সেটার ওপর নির্ভর করবে সিচুয়েশন কোন দিকে গড়াবে। ওনারা কি নিরব হয়ে যাবেন, নাকি মামলাকে পাত্তা না দিয়ে তাদের বক্তব্য ও দাবি বিষয়ে আরো এগোতে থাকবেন– দেখা যাক।

আর আপাত দৃশ্যমান যে, বর্তমান নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমগ্র ওলামায়ে কেরাম ভাস্কর্য ইস্যুতে মোটামুটি এক। এখন মামলা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমস্ত বিভাজন একপাশে রেখে ওলামায়ে কেরামের পক্ষে সাংগঠনিকভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ গিলোটিনের খড়গ এখন সবার ওপরই ঝুলছে।

আর বঙ্গবন্ধুকেন্দ্রিক ভাস্কর্য-বিতর্কটি এখন হাসিনা সরকারের জন্য চরম ইগোর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকার তার এই ইগোকে পরিহার করে ওলামায়ে কেরামের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন থেকে সরে আসবে, নাকি মামলায় কাজ না হলে ধাপে ধাপে সরকার আরো হার্ডলাইনে যাবে–সেটা এখনো দেখার বাকি।

লেখক, অনলাইন এক্টিভিস্ট