রহমত নিউজ 06 August, 2024 12:06 PM
পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছেন সোমবার দুপুরে। তবে তার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা, আইনপ্রণেতা ও মন্ত্রী। এছাড়াও দেশ ছাড়েন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শায়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার (৪ আগস্ট) রাতে দেশত্যাগ করেছেন। তিনি নয়াদিল্লিতে গেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানও রোববার রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে তার কাছের কয়েকজন জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শায়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানও পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নেতাদের অনেকেই সোমবার সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়েছেন বলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ হাসিনার আত্মীয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হন বলে বিমানসূত্রে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও গত সপ্তাহের শেষের দিকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
আইন মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব জানান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার মোবাইল ফোন দুটি বন্ধ করে দেশত্যাগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, 'সোমবার সকাল থেকে তাকে ঢাকায় পাওয়া যায়নি।'
সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী রাজধানীর বনানীর বাসায় অবস্থান করেন। তবে রাতেই তার দেশত্যাগ করার কথা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই নিজ বাসা বা সরকারি বাংলোতে না গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা যারা ঢাকায় রয়েছেন বা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেননি, তারাও স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন।
এছাড়া বিমানসূত্রে জানা গেছে, আরও বেশ কয়েকজন ভিআইপি এবং সিআইপির রোববার ভিআইপি লাউঞ্জের মাধ্যমে বিদেশ ভ্রমণের কথা ছিল। তাদের কেউ চলে গেছেন, যারা যেতে পারেননি তারা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন এ বছরের ১১ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে ভোটে বিএনপি জয়ী হলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যায়। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা।
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন করেন। তাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য হন। ওই নির্বাচনে (দশম সংসদ) বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি; শেখ হাসিনা ও তাঁর জোটসঙ্গীরা মিলে সরকার গঠন করেন। ২০১৮ সালে বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার ব্যাপক অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নেয়নি। নিজ দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করে ‘ডামি’ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রী হন। এ নির্বাচনকে বিরোধীরা ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দেন। এর সাত মাসের মধ্যে ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারযোগে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।