| |
               

মূল পাতা জাতীয় শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন : ১৫ জেলায় নিহত ৪৪


শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলন : ১৫ জেলায় নিহত ৪৪


রহমত নিউজ     04 August, 2024     06:14 PM    


দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত  ১৪ জেলায় ৪৩ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে নরসিংদীতে ছয়জন, ফেণীতে পাঁচজন, সিরাজগঞ্জে চারজন, মুন্সিগঞ্জে তিনজন, বগুড়ায় তিনজন, মাগুরায় তিনজন, ভোলায় তিনজন, রংপুরে তিনজন, পাবনায় তিনজন, কুমিল্লায় দুজন, বরিশালে একজন, সিলেটে দুজন, জয়পুরহাটে একজন, ঢাকায় দুই, কিশোরগঞ্জে তিনজন রয়েছেন। 

ফেনীতে ৫ জন নিহত

ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ বেলা ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা অসহযোগের সমর্থনে মহিপাল এলাকায় বিক্ষোভ করছিলেন। দুপুর ২টার দিকে মহিপাল সেতুর নিচে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় মুহুর্মুহু গুলি, ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সংঘর্ষে নিহত পাঁচজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ছাড়া তিন গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ ৪ জন নিহত

রায়গঞ্জ উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

সংঘর্ষে চারজনের মারা যাওয়ার বিষয়টি আজ বেলা সাড়ে ৩টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমিমুল ইহসান। 

আমিমুল ইহসান বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় আওয়ামী লীগের ১৫থেকে ২০ জন নেতাকর্মীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন সরকারের মরদেহ পরিবারের লোকজন নিয়ে গেছেন। অন্য তিনজন হলেন—উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার, আলম ও প্রদীপ কুমার।

মাগুরায় নিহত ৩

জেলা শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বিসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে অর্ধশত আহত হয়েছে। নিহত অন্য দুজন হচ্ছেন মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের ফরাদ হোসেন এবং মোহাম্মদপুরের বালিদিয়ার সুমন আহমেদ।

ভোলায় সংঘর্ষে নিহত ৩

ভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে আজ রোববার তিনজন নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

বিএনপির দাবি, তাদের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দাবি, তাদের এক যুবলীগ কর্মীকে বিক্ষোভকারীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলামসহ ১৫ জন ভর্তি হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু বলেন, বিক্ষোভকারীরা যুবলীগের কর্মী মো. মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। 

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম বলেন, পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগের হামলায় তাঁদের দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন।

রংপুরে কাউন্সিলরসহ নিহত ৩

নগরীতে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু জানান, নিহতের একজন রংপুর সিটি করপোরেশেনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার নাম হারাধন রায়।

পাবনায় নিহত ৩

পাবনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়।  এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে শিক্ষার্থীরা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের জেবি মোড়ে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সমাবেশে পেছন থেকে অতর্কিত গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (১৯), মাহবুবুল হোসেন (১৬) ও ফাহিম (১৭) নিহত হন।

মুন্সীগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩

আজ সকালে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট ও কৃষি ব্যাংক মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। পরে সকাল ১০টার দিকে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে সুপার মার্কেট থেকে কৃষি ব্যাংক এলাকাজুড়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় কাজে যাওয়ার পথে দুজন নির্মাণ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ছাড়া আরও একজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এই ত্রিমুখী সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল। তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পর্যবেক্ষণ করে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

কুমিল্লায় বাসচালকসহ নিহত ২

কুমিল্লার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নিউমার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি বাসচালক বলে জানা গেছে। অপরদিকে, দাউদকান্দি ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের এরশাদ মিয়া নামে এক সদস্য নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের সুপার খায়রুল আলম। 

বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা নিহত

বরিশালে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার তথ্য মিলেছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ এস এম সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে, তা তিনি জানাননি। বলেছেন, ওই নেতার মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম টুটুল চৌধুরী। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ দিপু জানিয়েছেন, টুটুল বরিশাল মহানগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।

সিলেটে দুজন নিহত

সিলেটের গোলাপগঞ্জে পুলিশ-বিজিবি-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। তবে, পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। আজ রোববার (৪ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ পৌরশহরের ধারাবহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত দুজন হলেন, ধারাবহর গ্রামের মো. মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩) ও উপজেলার শিলঘাটের বাসিন্দা সানি আহমদ (১৮)।

দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শাহিন আহমদ।