মুফতী জসিম উদ্দীন 17 April, 2024 07:46 PM
শুরুতে আমরা জেনে নেই ট্রান্সজেন্ডার কী?
ট্রান্সজেন্ডার মূলতঃ একটি সমকামী আন্দোলনের অংশ। এটি বিশ্বে এলজিবিটি (LGBT) আন্দোলন নামে সমধিক পরিচিত।
এলজিবিটি (LGBT) কী?
এটি হচ্ছে একটি গুচ্ছ শব্দ যার দ্বারা চার সমকামীকে বুঝায়।
L দ্বারা Lesbian (লেসবিয়ান) মেয়ে- মেয়ে দ্বারা যৌনসঙ্গম করা । এটি সমকামী।
G দ্বারা Gay (গে) ছেলে- ছেলে দ্বারা যৌনসঙ্গম করা । এটি সমকামী।
B দ্বারা bisexual (বাইসেক্সুয়াল) উভকামী । একজন পুরুষ চাইলে সে মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের সাথে যৌনসঙ্গম করতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে একজন নারীর ক্ষেত্রেও তাই।
T. দ্বারা Transgender (ট্রান্সজেন্ডার) আত্ম - অনূভূত পরিচয়। অর্থাৎ নিজেকে মনে মনে জন্মগত লিংগের বিপরিত ধারণা করা।
ট্রান্সজেন্ডারের অর্থ কী?
Trans মানে রুপান্তর, gender মানে অন্তর্নিহিত বিশ্বাস বা আত্ম অনূভূত পরিচয় বা মানসিক অবস্থা। অর্থাৎ কেউ মানসিকভাবে বা মনে মনে নিজেকে জন্মগত লিংগের সাথে অমিল মনে করা।
রুপান্তরটি তিনভাবে হতে পারে:
(ক) সামাজিক রুপান্তর — যেমন : নামের পরিবর্তন, নতুন সম্বোধন, বেশভূষা পরিবর্তন, মেকআপ শুরু করা বা বাদ দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবার ,বন্ধু বান্ধবদের জানানোর দ্বারা ট্রান্সজেন্ডার হওয়া যায়।
(খ) আইনগত রুপান্তর — জন্ম সনদে সেক্স আইডেন্টি পরিবর্তন করে জেন্ডার আইডেন্টি গ্রহণ, এন.আই.ডি, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে নাম পরিবর্তন করা।
(গ) মেডিকেল রুপান্তর — অত্যন্ত ব্যয়বহুল হরমোন ট্রিটমেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের সার্জারি করে অবয়ব পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু আমেরিকা এবং ব্রিটেনের তথ্যানুযায়ী ট্রান্সজেন্ডার যৌনাঙ্গ ( পেনিস বা যোনি) অক্ষত থাকে। যদিও শরীরের উপরিভাগ (স্তন, মুখাবয়ব ইত্যাদি) পরিবর্তন করে ফেলে।
(তথ্যসূত্র: ড. মোহাম্মাদ সরওয়ার সাহেবের আর্টিকেল থেকে সংগৃহীত)
ট্রান্সজেন্ডারের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
ট্রান্সজেন্ডারের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; সমকামিতাকে প্রমোট করা। অর্থাৎ কোন ছেলে যদি নিজেকে মনে মনে বিপরিত লিঙ্গের ধারণা করে তাহলে রাষ্ট্র তার দাবীকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য থাকবে। ফলে সে ট্রান্সজেন্ডার মেয়ে (বাস্তবে ছেলে) অন্যত্র অন্য ছেলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে এবং ছেলে ছেলে সমকামিতায় লিপ্ত হবে।
ট্রান্সজেন্ডারের মধ্যে শরীয়ত বিরুদ্ধ কয়েকটি জিনিস পাওয়া যায় : (ক) সমকামিতা (খ) মানব অঙ্গের বিকৃতি (গ) পুরুষ- মহিলার সাদৃশ্য।
(ক) সমকামিতা কুরআন দ্বারা নিষিদ্ধ
হজরত লূত আঃ কে আল্লাহ তায়ালা জর্ডানের সাদূম এলাকায় নবী করে পাঠান । এসব এলাকার লোকজন একটি নির্লজ্জ কুকর্মে লিপ্ত ছিল। তারা সমকাম (Homosexuality) করত। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ;
وَلُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِہٖۤ اَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَۃَ مَا سَبَقَکُمۡ بِہَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنَ الۡعٰلَمِیۡنَ . اِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ شَہۡوَۃً مِّنۡ دُوۡنِ النِّسَآءِ ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ مُّسۡرِفُوۡنَ .
অর্থ: এবং লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে নিজ সম্প্রদায়কে বলল: “ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বের কেউ করেনি। তোমরা কাম-তৃপ্তির জন্যে নারী ছেড়ে পুরুষদের নিকট গমন কর। তোমরা তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়। (সূরা আরাফ , আয়াত : ৮০,৮১)
লূত আঃ তাদেরকে শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলেন কিন্তু কিছুতেই নিজেদের নির্লজ্জতা পরিত্যাগ করতে রাজি হল না । পরিশেষে তাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করা হল এবং গোটা জনপদটিকে উল্টিয়ে দেওয়া হল। বর্তমানে মৃত সাগর (Dead sea) নামে যে প্রসিদ্ধ সাগর আছে, বলা হয়ে থাকে সে জনপদটি এর ভেতর তলিয়ে গেছে অথবা তা এর আশপাশেই ছিল, কিন্তু তার কোনও চিহ্ণ অবশিষ্ট নেই। মাআরিফুল কুরআন খন্ড : ৩/৪৫২
(খ) মানব অঙ্গের বিকৃতি শয়তানী কাজ
* কুরআন শরীফে আছে,
وَلَاٰمُرَنَّہُمۡ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلۡقَ اللّٰہِ
অর্থ : এবং আমি (শয়তান) তাদেরকে শিক্ষা দিব, ফলে তারা আল্লাহর সৃজিত বস্তুসমূহের আকৃতি বিকৃত করবে। সূরা : নিসা, আয়াত নং : ১১৯
* মানব অঙ্গের বিকৃতি হাদিস দ্বারা নিষিদ্ধ :
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ ، لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ تَعَالَى،
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি, বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা লানত করেছেন সে সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীর কেটে উল্কি আঁকে এবং যারা এ অংকনের কাজ করে। আরো লানত করেছেন যারা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ভ্র কাটে এবং যারা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কাটে। আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করে। বুখারি শরীফ হাদিস নং ৫৯৩১
(গ) পুরুষ- মহিলা একে অপরের সাদৃশ্য নিষিদ্ধ
হাদিসে বর্ণিত আছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالْمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ.
অর্থ : হজরত ইবনে আব্বাস রাযি, সূত্রে বর্ণিত : তিনি বলেন, নবীজি অভিশাপ দিয়েছেন নারীদের বেশধারণকারী পুরুষদের উপর এবং পুরুষদের বেশধারণকারী নারীদের উপর। বুখারী শরীফ হাদিস নং ৫৮৮৫ , আবু দাউদ শরীফ ৪০৯৭
ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া এক নয়
দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোসহ বিশ্ব মিডিয়া হিজড়াদেরকে ট্রান্সজেন্ডার বলে পরিচয় দিচ্ছে। অথচ এটি ভুল। বরং দুটো ভিন্ন। ট্রান্সজেন্ডার কৃত্রিম, এবং মনস্তাত্তি¡ক। হিজড়া জন্মগত জেনেটিক সমস্যা বা ডিসঅর্ডার।সম্প্রতি ভারতের হিজড়া জনগোষ্ঠির সভাপতি নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তা ছাড়া হিজড়া সম্প্রদায়কে বুঝানোর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গ যার ইংরেজী— থার্ড জেন্ডার শব্দ নিদিষ্ট করে দেয়া আছে।
ট্রান্সজেন্ডারের ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি কী?
ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা অধিকার খসড়া আইন বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশে চলে আসা লিঙ্গভিত্তিক সিস্টেমকে দরহম বরহম করে দিবে। পশ্চিমা বিশ্বে এ মতাদর্শ পলিসি বাস্তবায়নের ফলে তাদের সামাজিক ,স্বাস্থ ও আইনগত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও এই সমস্যা শুরু হবে এবং রাষ্ট্রীয় শৃংখলা বিঘ্নিত হবে।
সামাজিক ক্ষতি কী?
মুসলিম পারিবারিত আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকারসূত্রে মেয়ে ছেলের অর্ধেক পাবে। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার সুরক্ষা আইনে — ট্রান্সজেন্ডার ম্যানকে পুরুষের মত এবং উইম্যানকে নারীর মত ভাগ দিতে বলা হয়েছে। এখন কোন জন্মগত মেয়ে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ দাবী করে পুরুষের মত ভাগ চাইলে সমাজ তাকে রাষ্ট্রীয় আইনের কারণে দিতে বাধ্য থাকবে। ফলে সামাজিক হানাহানি বৃদ্ধি পাবে।
এমনিভাবে দেশীয় আইনে প্রকৃত নারীদের জন্য সেইফ জোন হিসেবে শিক্ষাখাতে পৃথক আবাসন ব্যবস্থা , আলাদা টয়লেট এবং চাকরির ক্ষেত্রেও স্বতন্ত্র কৌটার কথা আছে। ট্রান্সজেন্ডারের ফলে প্রকৃত নারীরা হেনস্থার শিকার ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। যেটি ভয়াবহ সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করবে।
পরিশেষে আলেম উলামাসহ সবার কাছে করজোড় অনুরোধ! আপনারা ইতিহাসের ঘৃণ্য এই মতবাদকে মুলোৎপাটনে সম্মিলিতভাবে কাজ করুন।
লেখক: মুফতী জসিম উদ্দীন
উস্তায: জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া কামরাঙ্গীরচর ,ঢাকা ১২১১
Email: josimuddinfeni018@gmail.com - 01837292647