রহমত নিউজ 06 November, 2023 03:02 PM
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য এক হাজার ৮২ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
কেসিসির ৩৩ বছরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৬ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা এবং সরকারি বরাদ্দ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হতে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৬ কোটি ৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬১ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা, সংশোধিত বাজেটে যার আকার দাঁড়ায় ৬৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৮১ শতাংশ। বাজেটে রাজস্ব তহবিলের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯২ কোটি ১১ লাখ ৩৮ টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে দাঁড়ায় ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিজস্ব তহবিলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ১৪৭ শতাংশ। উন্নয়ন তহবিল তথা সরকারি অনুদান ও দাতা সংস্থার বিশেষ প্রকল্পে বিগত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। পাওয়া যায় ৪১৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৬২ শতাংশ।
মবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে তিনি এ বাজেট ঘোষণা করেন। কেসিসির বাজেট প্রস্তুত ও পরিচালনা কমিটির আহবায়ক মো. আলী আকবরের (টিপু) সভাপতিত্বে ও কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কেসিসির প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা, কেসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র বাজেটের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে কেসিসি মেয়র বলেন, বাজেটে এবারও নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সব স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য এবং নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ ও সীমানা সম্প্রসারণের মাধ্যমে করপোরেশনের আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি একটি উন্নয়নমুখী বাজেট। বাজেটে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ, ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশক নিধন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, ধর্মীয় উপাসনালয়-পার্ক-বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা ও জবাবদিহি বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কেসিসি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি কেবল সরকারি বা বিদেশি সাহায্য ও ঋণের ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না। কেসিসিকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
তিনি জানান, কেসিসির নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে রাজস্ব তহবিল থেকে নগরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে মোট ৬১ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাত থেকে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং মশক নিধনের জন্য কনজারভেন্সি খাতে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কেসিসি মেয়র জানান, বাজেটে এডিপির জন্য থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং নগরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব খুলনা ওয়াসার হলেও বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি পানির চাহিদা মেটানোর জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপকে সাবমারসিবল পাম্পে রূপান্তর করার জন্য এ খাতে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ভেটেরিনারি খাতে ৫০ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, কনজারভেন্সি খাতে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৭৯ কোটি ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকার উন্নয়ন সহায়তা পাওয়ার আশা করা যায়। জাতীয় এডিপিভুক্ত তিনটি প্রকল্পে ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা খুলনা সিটি করপোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সম্ভাব্য এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে।
এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: