| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক আফ্রিকা মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে


মরক্কোর ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে


রহমত নিউজ ডেস্ক     10 September, 2023     10:26 AM    


মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পটি শুক্রবার রাতে আঘাত হেনেছিলো।  মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আরো প্রায় সমসংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে এবং এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে। দেশটিতে এত প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১.১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারো ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূ- কম্পন অনুভূত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের ভিডিও দেখা যাচ্ছিলো। তবে লোকজনকে সতর্ক সংকেত শুনে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে দেখা গেছে। একজন স্থানীয় কর্মকর্তা তার এলাকাতে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন। মারাক্কেশ শহরের পুরনো অংশে কিছু ভবন ধ্বসে পড়েছে বলে সেখানকার একজন অধিবাসী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।

মরক্কোতে যেন মানবিক সহায়তা পাঠানো সহজ হয়, সেজন্য আলজেরিয়া তাদের এয়ারস্পেস ব্যবহার করতে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব চলার পর ২০২১ সালে আলজেরিয়া মরক্কোর সাথে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে ভূমিকম্পের পর আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে 'ভাতৃপ্রতিম মরক্কান মানুষকে সহায়তার জন্য' তারা মানবিক সহায়তা ও লোকবল সরবরাহ করতে প্রস্তুত।

ভেবেছিলাম সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে
ভূমিকম্পের প্রথম ধাক্কাটি যখন অনুভূত হয়, মারাকেশে ছুটি কাটাতে যাওয়া বৃটিশ নাগরিক আযা লেমার তখন শহরের রাস্তায় হাঁটছিলেন। তিনি বলেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে শহরে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমি অনুভব করছিলাম যে মাটি কাঁপছিল। দেখতে পাচ্ছিলাম যে রাস্তার পাথর সরে যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড আগে পার করে আসা একটি বাড়িকে দেখছিলাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে।

ভূমিকম্পের সময় মারাকেশ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরের বন্দর নগর কাসাব্লাঙ্কাতেও কম্পন অনুভূত হয়। কাসাব্লাঙ্কা শহরের একজন বাসিন্দা লা মাতিন পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ঐ সময় আমি ঘুমাচ্ছিলাম। আমার অ্যাপার্টমেন্টের দরজা কেঁপে ওঠে। আমি ভেবেছিলাম চোর এসেছে। পর মুহুর্তেই শুনি প্রতিবেশীরা চিৎকার করছে। এরপর আমরা বের হয়ে আসি বাড়ি থেকে। এখন অনেক মানুষই মানুষ খোলা জায়ঘায় থাকছে। সবাই ভয় পাচ্ছে আরো একটি কম্পনের। পাশাপাশি চোর-ডাকাতের আতঙ্কও রয়েছে।

মরক্কো এর আগেও বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে। ২০০৪ সালে দেশটির উত্তর-পূর্বের আল হোসেইমা অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৬২৮ জন মারা গিয়েছিল। আর ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এর থেকে ধারণা করা যায় যে এবারের ভূমিকম্পেও হতাহতের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়তে পারে। মরক্কোর গতকালের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল অ্যাটলাস পর্বতমালার মধ্যে। ঐ অঞ্চলে এমন অনেক দুর্গম গ্রাম রয়েছে যেখানে পৌঁছানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।কাজেই এই ভূমিকম্পের আসল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী, তা নিশ্চিতভাবে জানতে বেশ কয়েকদিন লেগে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্পে অনেকে মারা গেছে আল হৌজ, মারাক্কেশ, আজিলাল সহ কয়েকটি শহরে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়। এছাড়া আরো অনেককে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় মানুষ বলছেন, ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনে লোকজন এখনো ঘরের বাইরে রাস্তা বা খোলা জায়গায় অবস্থান করছে।

সংবাদ সংস্থা এএফপিকে আব্দেলহাক আল আমরানি জানান, মানুষ ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত। শিশুরা কাঁদছে ও তাদের অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে, বিদ্যুৎ ও ফোন সংযোগ প্রায় দশ মিনিটের মতো বন্ধ ছিলো। এএফপি ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি পরিবারের আটকে পড়ার খবর দিয়েছে। এছাড়া অনেক মানুষকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল এটলাস পর্বতমালার অনেক দূরের একটি এলাকায় হলেও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে সেখান থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী রাবাত ছাড়াও কাসাব্ল্যাংকা ও এসাউইরাতে। উৎপত্তিস্থলের কাছে পর্বত এলাকার সাধারণ ভবনগুলো হয়তো টিকে নেই এবং অনেক দূরের এলাকা হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সময় লাগতে পারে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরেজমিন অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে যে ভূমিকম্পে বহু পুরনো ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজধানী রাবাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দেলোয়াফি লাফতিফ সংবাদ সম্মেলনে জানান যে ক্ষতিগ্রস্থদের একটা বড় অংশই রয়েছে দুর্গম এলাকায়। সেসব এলাকায় অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মারাকেশের হাসপাতালগুলোতে বিপুল পরিমাণে মানুষ আসছে এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নাগরিকদের রক্তদান করার আহ্বান জানিয়েছে শহরের কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং মরক্কোকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ জানিয়েছেন, তার দেশ মরক্কোকে ‘প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোয়ান সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি মন্তব্য করেছেন যে তার দেশ সহায়তার জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র অফিসের এক বার্তায় বলা হয়েছে যে নেতানিয়াহু ‘মরক্কোর মানুষকে সকল প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ’ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স’এ মন্তব্য করেছেন যে, “যুক্তরাজ্য সম্ভাব্য সকল পন্থায়” মরক্কোর সহায়থা করবে। এছাড়াও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ সহ বিশ্বনেতারা সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

ভৌগলিক অবস্থানের হিসেবে মরক্কো আফ্রিকা আর ইউরোপের মধ্যে রয়েছে। আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের ওপর এই দেশটির প্রভাব রয়েছে। আটলান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের উপকূল রয়েছে এই দেশটির সাথে। দেশটির মধ্যে রুক্ষ পাহাড়ও রয়েছে। এই দেশের সংস্কৃতিতে আরব, বেরবার, ইউরোপীয় ও আফ্রিকান প্রভাব রয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৪০ লক্ষ এবং আয়তন প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।