মূল পাতা আন্তর্জাতিক উপমহাদেশ কাশ্মীরে সাংবাদিকদের ওপর ক্র্যাকডাউন: সবাই ভাবে ‘এটিই হয়তো শেষ রিপোর্ট’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক 04 September, 2023 12:26 PM
সুলতান পরিবারের বাস শ্রীনগরের কেন্দ্রস্থলে বাটামালুতে । তাদের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিলের ৫ তারিখ দিনটা ছিল একটা আনন্দের দিন। ভারত শাসিত কাশ্মীরে সে দিনটা ছিল বসন্তকালের এক রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন। সাড়ে তিন বছর ধরে থানা-পুলিশ-আদালতে ঘোরাঘুরি করার পর সেদিন তারা একটা ভালো খবর পেয়েছেন। খবরটা হলো - সাংবাদিক আরিফ সুলতান , যিনি ওই পরিবারে একজন স্বামী, পিতা ও পুত্র - তিনি অবশেষে জামিন পেয়েছেন। তিনি কখন বাড়ি ফিরবেন তার অপেক্ষায় ছিলেন আত্মীয় স্বজনরা। কিন্তু তাদের অপেক্ষা যখন কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনে পরিণত হলো তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। এর কারণ - এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ আসিফের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল আরেকটি অভিযোগ। তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি, বরং তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কাশ্মীর রাজ্যের বাইরে আরেকটি কারাগারে - যেখানে তাকে দেখতে যাওয়াটাও সমস্যাজনক। তার পিতা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, ‘আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু আদালতে আমরা লড়াই করে যাবো। সবাই জানে যে সে নির্দোষ তাই শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতবো।’ এসব কথা চলার মধ্যেই ঘরে ঢুকে তার কোলে উঠে বসলো পাঁচ বছরের নাতনি আরিবা। তার বাবা গ্রেফতার হবার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস।
৬ বছরে ৭ সাংবাদিদের কারাভোগ
মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে ১৯৮৯ সাল থেকে। এখানেই জঙ্গী তৎপরতাকে সহায়তার দায়ে আসিফ সুলতান প্রথম অভিযুক্ত হয়েছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইন ইউএপিএ-র আওতায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় - যাতে জামিন পাওয়া খুবই কঠিন। দ্বিতীয় মামলাটিও জননিরাপত্তা আইন বা পিএসএ নামে আরেকটি বিতর্কিত আইনের আওতায়। এটিতে কোন মামলা ছাড়াই কাউকে দুই বছর পর্যন্ত বন্দী রাখা যায়। মোহাম্মদ সুলতান তার ছেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে আসিফকে তার কাজের কারণেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে গ্রেফতার হবার এক মাস আগে একজন ভারত-বিরোধী জঙ্গির ওপর একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন আসিফ। তার বাবা বলেন, আসিফ একজন পেশাদার রিপোর্টার, জঙ্গিবাদ নিয়ে লেখার জন্যই তার জেল হয়েছে। জঙ্গিদের সাথে তার কোন সংশ্রব নেই। তাকে আটক করে সরকার এটা দেখাতে চায় যে তাদের অপছন্দ এমন কোন বিষয় নিয়ে কেউ যেন লেখার সাহস না পায়।
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অনুসন্ধান করতে বিবিসি এক বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছে। অভিযোগে বলা হয়, এ অঞ্চলে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে ও তাদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে এক অশুভ কার্যক্রম চালাচ্ছে। কাশ্মীরের সাংবাদিকদের সাথে আমাদের দেখা করতে হয়েছে গোপনে। প্রতিশোধের শিকার হবার ভয়ে তারা তাদের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ করেছেন। অনেকবার সেখানে গিয়ে আমরা দুই ডজনেরও বেশি সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে কেউ রিপোর্টার, কেউ বা সম্পাদক, কেউ ফটোসাংবাদিক। তারা অনেকেই জাতীয় বা আঞ্চলিক মাধ্যমে কর্মরত - কেউ আবার স্বাধীনভাবে কাজ করেন। তারা সবাই সরকারের কর্মকাণ্ডকে তাদের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেন। আসিফ কারাভোগ করছেন পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। তার মতই আরো অন্তত সাত জন কাশ্মীরী সাংবাদিক ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত জেলে গেছেন। তাদের মধ্যে চার জন - আসিফ সহ - এখনো বন্দী।
জামিন হলেই নতুন মামলায় আবার গ্রেফতার
একটি ডিজিটাল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ফাহাদ শাহকে সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সন্ত্রাসবাদ প্রচার-প্রসারের। এর এক মাস আগেই গ্রেফতার করা হয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সাজাদ গুলকে। তিনি তার কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন যাতে স্থানীয় লোকদের ভারতবিরোধী শ্লোগান দিতে দেখা যায়।তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়। দু'জনের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের জামিন হলেই অন্য কোন একটা নতুন মামলায় তাদের আবার গ্রেফতার করা হয়েছে। সাংবাদিক আটকের সবশেষ ঘটনাটি ঘটে এ বছর মার্চ মাসে। সন্ত্রাসে অর্থ যোগানের সাথে সম্পর্ক থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয় ইরফান মেরাজকে - যার কাজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বেরিয়েছে। কাশ্মীরে আরো অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব ব্যাপারে বিবিসি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে কথা বলার জন্য অনেক চেষ্টা করলেও জবাব পাওয়া যায়নি। মে মাসে শ্রীনগরে জি২০-র সভার সময় বিবিসি ওই অঞ্চলের শীর্ষ প্রশাসক মনোজ সিনহাকে মিডিয়ার ওপর ক্র্যাকডাউন বিষয়ে প্রশ্ন করে। তিনি বলেন, প্রেস সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করছে। তার ভাষায় - সাংবাদিকদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে সন্ত্রাস বা সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার দায়ে, তাদের সাংবাদিকতা বা রিপোর্ট লেখার জন্য নয়।
কাশ্মীরে সাংবাদিকতার মৃত্যু হয়েছে
বিবিসি এমন অনেক বর্ণনা শুনেছে যা মনোজ সিনহার দাবির সাথে মেলে না। একজন সাংবাদিক বলেন, এখানে পুলিশের ডাক পাওয়া একজন সাংবাদিকের জন্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা, এবং এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে রিপোর্টাররা তাদের রিপোর্টের জন্য আটক হয়েছেন। আমার করা একটি রিপোর্টের ব্যাপারে আমি পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেতে শুরু করি। তারা বার বার জিজ্ঞেস করতো যে, এ রিপোর্ট আমি কেন করেছি? তারা বলতো, তারা আমি ও আমার পরিবারের ব্যাপারে সবই জানে, যা খুবই ভয়ের ব্যাপার। আমার সব সময় মনে হতো - আমি গ্রেফতার বা নির্যাতনের শিকার হবো কিনা।
যে সাংবাদিকদের সাথে বিবিসির কথা হয়েছে তাদের ৯০ শতাংশই বলেছেন তাদের অন্তত একবার পুলিশ তলব করেছে। অনেকে একই রিপোর্টের জন্য কয়েকবার ডাক পেয়েছেন। কেউ বলেছেন, পুলিশ ভদ্রভাবেই কথা বলেছে। অন্যরা বলেছেন, তারা ক্রোধ ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। একজন সাংবাদিক বলেন, আমরা এই ভয়ের মধ্যে থাকি যে যেকোনো রিপোর্টই হয়তো হবে আমার শেষ রিপোর্ট - এর পরই আমাকে জেলে যেতে হবে।
আরেকজনের কথা - কাশ্মীরে সাংবাদিকতার মৃত্যু হয়েছে, তা কবরে চলে গেছে। আমাদের সাথে কথা হওয়া প্রতিটি সাংবাদিকই বলেছেন গত কয়েক বছরে তারা অসংখ্যবার পুলিশের ফোন পেয়েছেন - যার উদ্দেশ্য ছিল 'রুটিনমাফিক ব্যাকগ্রাউন্ড চেক'। একবার আমার সামনেই এরকম একটি ফোন আসে। সেই সাংবাদিকটি তার ফোনের স্পিকার অন করে দিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তাটি তার পরিচয় দিয়ে সাংবাদিককে তার নাম, ঠিকানা ও কর্মস্থল জানতে চাইলেন। এসব তথ্য জানতে চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কর্মকর্তাটির স্বর বন্ধুসুলভই ছিল - কিন্তু তিনি তখন একে একে ওই সাংবাদিক ও তার পরিবারের যাবতীয় তথ্য পড়ে শোনাতে লাগলেন - কে কী করে, কোথায় থাকে, কোথায় পড়ে, কী ডিগ্রি পেয়েছে, কী চাকরি করে এমনকি একজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামও বললেন। সাংবাদিকটিকে আমি জিজ্ঞেস করলাম এই কল পাবার পর তার কেমন লাগছে। তিনি বলেন, এটা চিন্তার বিষয়, তার মানে তারা আমাকে এবং আমার পরিবারের ওপর নজর রাখছে, কী কারণে তারা ফোন করেছে, এর পর কী হবে - কে জানে!
সাংবাদিকরা বলেন, তারা কোন বাড়ির মালিক, কোন ব্যাংকে তাদের একাউণ্ট, তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস কী - এসব প্রশ্নও করা হয়েছে। কাশ্মীরে সাংবাদিকদের সাথে অপরাধীর মত আচরণ করা হয়, তাদের দেশ-বিরোধী, সন্ত্রাস সমর্থক, পাকিস্তানপন্থী বলে ডাকা হয়। তারা বোঝে না যে আমাদের কাজ সব পক্ষের মতামত তুলে ধরা।
কাশ্মীর অঞ্চলটি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ দুটি দেশ এবং চীনও কাশ্মীরের বিভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত শাসিত কাশ্মীরে সক্রিয় জঙ্গী গ্রুপগুলোর ঘাঁটি পাকিস্তানে এবং তারা সেখানকার গুপ্তচর সংস্থাগুলোর সমর্থন পায় বলে মনে করা হয় - যে অভিযোগ ইসলামাবাদ বরাবর অস্বীকার করে।কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের - যা কিছু অংশে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ক্রোধ এবং পাকিস্তান-পন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন উস্কে দিয়েছে।
সাংবাদিকরা বলছেন, ভারতীয় সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, জঙ্গী গ্রুপ, প্রশাসন বা নিরাপত্তা বাহিনী সম্পর্কিত রিপোটিং দমন করতে চাইছে। আমাদের সাথে কথা বলার সময় বেশির ভাগ সাংবাদিকই বলেছেন, আসিফ সুলতানের গ্রেফতারের পর পুলিশি নজরদারি বেড়েছে।
বিশেষ করে ২০১৯ এর অগাস্ট মাসে - হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং প্রদেশটিকে দুইভাগে ভাগ করার পর পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে এ রাজ্যে কোন নির্বাচিত সরকার নেই। এর ফলে সরকার যা খুশি করে পার পেয়ে যাচ্ছে, বলছেন সাংবাদিকরা। এর মধ্যে চারজন কাশ্মীরী সাংবাদিক প্রকাশ্যে জানিয়েছেন যে, তাদেরকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এ তালিকায় আরো অনেকে আছেন বলে বিবিসি জানতে পেরেছে, কিন্তু তা প্রকাশ করা হয় নি। এর আইনি ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করলে পুলিশ কোন জবাব দেয়নি। অনেক সাংবাদিকের পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না, অনেকের পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কিছু সাংবাদিকের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। সরকার বলছে তারা ভারতের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বলে মনে করা হয়।
এক সাংবাদিক বলেন, আমরা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আছি, আমরা সবাই নিজেদেরকে নিজেরাই সেন্সরশিপ করছি। আমি আমার রিপোর্ট একবার সাংবাদিক হিসেবে পড়ি, তার পর পুলিশের মত পড়ি এবং নানা তথ্য বাদ দিয়ে একে আরো নরম করতে থাকি। এখানে সাংবাদিকতা বলে তেমন কিছু আর নেই, বেশিরভাগই সরকারের জনসংযোগের মত।
এখন সম্পাদকেরা বলছেন - তারা কী ছাপবেন আর কী বাদ দেবেন তা নিয়ে প্রশাসন প্রায়ই নির্দেশনা দেয়। তাদের বলা হয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের 'জঙ্গি' না বলে 'সন্ত্রাসী' শব্দটি ব্যবহার করতে। স্থানীয় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বিজ্ঞাপনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে, নির্দেশনা না মানলে এসব অর্থ বন্ধ করে দেয়া হবে। একজন সম্পাদক বলেছেন, তিনি প্রতিদিন যা করছেন তা তার পছন্দ নয়, কিন্তু তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে যারা কাজ করেন তাদের কী হবে?
স্থানীয় পত্রপত্রিকা পড়লে এটা স্পষ্ট বোঝা যায়। তারা প্রায় সবাই সরকারি প্রেস রিলিজ প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপায়, আরো থাকে সরকার বা নিরাপত্তা বাহিনীর বিবৃতি। সরকারের জবাবদিহি করার মতো কোন রিপোর্ট প্রায় থাকেই না। জুন মাসে পুলাওয়ামায় একটি মসজিদে ঢুকে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগান দিয়েছে এমন একটি অভিযোগ ওঠে। পর দিন এখানকার অল্প কয়েকটি পত্রিকা খবরটি দেয় স্থানীয় রাজনীতিবিদ মেহবুবা মুফতির বরাত দিয়ে যিনি এর তদন্ত দাবি করেন। পরবর্তী দিনগুলোতে আরো কিছু পত্রিকায় এটি বের হয় এভাবে যে - ভারতীয় সেনাবাহিনী ঘটনাটির তদন্ত করছে।ঘটনাস্থল থেকে তেমন কোন রিপোর্টিং প্রায় ছিলই না।
পুলিশ ও জঙ্গি - দু'দিক থেকেই ভয়ে সাংবাদিকরা
সাংবাদিকদের সাথে বিবিসির কথা হলে তারা বেশির ভাগই বলেন তারা রাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ভয়ে আছেন। কেউ কেউ বলেন তাদের জঙ্গিদের দিক থেকেও হুমকি রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর ওয়েবসাইট থেকে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত আছে। হুমকি পাওয়া একজন সাংবাদিকের সাথে বিবিসির কথা হয়। তিনি বলেন, কাশ্মীরে একজন সাংবাদিকের জীবন হচ্ছে ছুরির ওপর দিয়ে হাঁটার মত। আমরা সব সময়ই ভয়ে থাকি। কীসের ভয় - জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার দিকে ছুটে আসা বুলেটের ভয়। আমার পাশে কোন মোটরসাইকেল দাঁড়ালে আমার ভয় হয় যে, কেউ হয়তো বন্দুক বের করে আমাকে গুলি করবে, আর তার পর কে একাজ করলো তা কোন দিন জানা যাবে না।
এর আগে ২০১৮ সালে একজন সম্পাদক সুজাত বুখারিকে শ্রীনগরে তার অফিসের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ বলেছে এটা জঙ্গিরাই করেছে। পাঁচ বছর পরও ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়নি।
প্রেসক্লাব এখন বন্ধ
সংঘাতবিক্ষুব্ধ কাশ্মীরে একটি জায়গা ছিল যেখানে সাংবাদিকরা অবাধে একসাথে হতে পারেন, সেটি হলো শ্রীনগরের প্রেস ক্লাব। সাংবাদিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষারও জায়গা এটিই। গত বছর সরকার এটি বন্ধ করে দিয়েছে। এটি এখন পুলিশের একটি অফিস। হুমকি পেলে সাংবাদিকরা যে কোথাও যাবেন তার আর সুযোগ নেই। বিদেশী সাংবাদিকদের কাশ্মীরে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি দরকার হয়, তবে তা পাওয়া খুবই বিরল। মে মাসে জি২০ সম্মেলনের সময় কয়েক বছর পর প্রথমবারের মত বিদেশী সাংবাদিকদের শ্রীনগরে যেতে দেয়া হয় - তবে তাদের গতিবিধি ও কাজের আওতা ছিল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। গত এক দশকে সারা ভারতেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব হয়েছে - তবে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তা ঘটেছে চরম মাত্রায়। সুলতান পরিবারের বাড়ির বৈঠকখানায় সযত্নে রাখা আছে কাশ্মীর ন্যারেটরের একটি সংখ্যা - যাতে আসিফ সুলতান কাজ করতেন। তার বাবা ম্যাগাজিন খুলে আসিফের ছবি সহ তার করা একটি রিপোর্ট দেখালেন। তার নাতনিকেও বললেন, কার ছবি এটা। আরিবা বললো, আমার বাবা, সে জেলে আছে।
মোহাম্মদ আশা করছেন, আরিবা বয়ঃপ্রাপ্ত হবার আগেই যেন আসিফ মুক্তি পান। আমি বুড়ো হচ্ছি, কিন্তু ওর জন্য আমি বাবা ও দাদু দুই ভূমিকাই পালন করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আর কতদিন পারবো?