রহমত নিউজ ডেস্ক 21 June, 2023 08:52 AM
বাজেটের গতানুগতিক সব সমালোচনা নাকচ করে দিয়ে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির পেশাই সমালোচনা করা এবং এভাবেই তারা ফান্ড যোগাড় করে। তাদের গতানুগতিক সমালোচনা বাজেট ঘাটতি নিয়ে। অথচ আমাদের বাজেটে ঘাটতি যেখানে ৫.২ শতাংশ সেখানে ভারতের বাজেট ঘাটতি ৫.৯, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬, যুক্তরাজ্যের ৫.৫ শতাংশ। অর্থাৎ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েই শুধু নয়, ভারতের চেয়েও আমাদের বাজেট ঘাটতি কম।
বুধবার (২১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নির্ধারিত বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সরকারি দলের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, মেরিনা জাহান, হাবিব হাসান, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সুবর্ণা মুস্তাফা, নুরুল আমিন, আমিরুল আলম মিলন, আনোয়ারুল আজিম আনার, ছলিম উদ্দিন তালুকদার, নাসির উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, মুহিবুর রহমান, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, এম আবদুল লতিফ এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দিন আহমেদ আলোচনায় অংশ নেন।
বাজেটকে জনবান্ধব এবং কল্যাণমুখী অভিহিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর অন্যতম হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকায় দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসবেন, এর মধ্যে ভাতা পাবেন ২ কোটি মানুষ। এবং এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ, জিডিপির ২.৫২ ভাগ। ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই দেশে চালু হবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত টিআইবি বলে এসেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনা নেই। আর বিএনপি বলেছে বাজেট নিয়ে গণমানুষের কোনো আগ্রহ নেই, বাজেট উচ্চাভিলাষী। টিআইবি বরাবর প্রায় একই কথা এবং বিএনপিও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কখনো ভাঁওতাবাজির বাজেট, বাস্তবতা বিবর্জিত, কল্পনাবিলাসী, বাস্তবায়ন অযোগ্য এসব বলে এসেছে। অথচ গত ১৪ বছরে তাদের মতে আমাদের ‘উচ্চাভিলাষী’ বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ। করোনা মহামারি না থাকলে ৯৮ শতাংশ হতো।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বর্ণনা করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম এবং ওশানিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয়। জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রগতি সাধনকারী শীর্ষ তিন দেশের অন্যতম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকেও গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় ও বিশ্বের ১৬৭ দেশের মধ্যে ৭৩তম। সাইবার সিকিউরিটি সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং ইজরাইলের মতো দেশকেও পেছনে ফেলে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ৩২তম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন সূচকেও ভারত (৬০তম) ও পাকিস্তানকে (৫২তম) পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৬তম স্থান অর্জন করেছে। বিশ্ব সুখী সূচকেও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ গত বছরে ৭ ধাপ এগিয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৪তম, যেখানে ভারত ১৩৬তম, পাকিস্তান ১২১তম, শ্রীলংকা ১২৭তম।
বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশংসা করে বিশ্বনেতাদের ও বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন সংস্থার উক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনাকে নিয়ে ‘এই নারী একটি শক্তির নাম’ শিরোনাম নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিশ্ব উদাহরণ বাংলাদেশ আশা ও প্রবৃদ্ধির দেশ। বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ‘হোয়াট বাংলাদেশ ক্যান টিচ আদারস’ শিরোনামে নিবন্ধ ছেপেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকালে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, আমরা আপনাকে বহু বছর ধরে দেখে আসছি। অর্থনৈতিক নেতৃত্বে সফল আপনি আমাদের এবং আমার সন্তানদের জন্য প্রেরণাস্বরূপ। একইভাবে প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রমুখ।