মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনাররা বিকালঙ্গ, কাজ করার শক্তি নেই : জিএম কাদের
রহমত নিউজ ডেস্ক 16 May, 2023 10:16 PM
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সরকার যাকে চাইবে সেই নির্বাচিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের সদিচ্ছা দরকার। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পক্ষাঘাতগ্রস্থ। নির্বাচন কমিশনারদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, নির্বাচন কমিশনাররা হচ্ছেন বিকালঙ্গ, তাদের কাজ করার শক্তি নেই। তাদের হাত-পা বিকালঙ্গ। গাইবান্ধায় কারচুপির জন্য নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তদন্তে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং অভিযুক্তদের পুরুস্কৃত করা হয়েছে। সরকারী তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা নেই নির্বাচন কমিশনের। সরকার দলীয় প্রার্থীদের জন্য যারা কারচুপি করেছে, তাদের তো শাস্তি দেবে না সরকার।
আজ (১৬ মে) মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপ্টন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, লুৎফর রেজা খোকন, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির আহবায়ক এএনএম রফিকুল ইসলাম সেলিম ও সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এসএম হাসেম, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ শামসুল হক, ফখরুল আহসান শাহজাদা, আলহাজ্ব মোঃ বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নাসির উদ্দিন সরকার, কাজী আবুল খায়ের।সম্মেলনে মোহাম্মদপুর থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি পদে এএনএম রফিকুল আলমকে সভাপতি ও এসএম হাসেমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে ১৯৯১ সালে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার দাবীতে আন্দোলন করেছিলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তখন কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়নি। পল্লীবন্ধু তাদের দাবি মেনে নিয়েছিলেন। বিএনপি ১৯৯৬ সালে আবার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চেষ্টা করেছিলো। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে যায়নি। আমরা আন্দোলন করেছিলাম। তত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি আন্দোলন করেছিলো। আবার ওয়ান ইলেভেন এর আগে ইচ্ছেমত তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তৈরী করে বিএনপি নির্বাচন করতে চেয়েছিলো। আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনও সংবিধান মেনে হয়নি। এখন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে। আসলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শুধু ক্ষমতার জন্য লড়াই করে। ক্ষমতায় গেলেই সংবিধানের কথা বলে আর ক্ষমতার বাইরে গেলে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তোলেন। আমরা সরকারের আওতার বাইরে নির্বাচন চাই। আমরা একটি ভালো নির্বাচন চাই। প্রয়োজনে সব দল মিলেই সিদ্ধান্ত নেবো। নির্বাচনে আমরা জনগণের রায় দেখতে চাই। এতে জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালের পর থেকে জাতীয় সংসদের কোন ক্ষমতা নেই। সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সরকার যা বলবে তাই হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই এই ধারার সুবিধাভোগী। বর্তমান সংসদে গান, কবিতা আবৃতি এবং নাটকের অংশ চর্চা চলে। সংসদে আলাপ-আলোচনায় ব্যক্তি পূজা চলে, স্মৃতিচারণ চলে। এই সংসদ কী বিনোদন কেন্দ্র? নাকি নাট্যশালা? সংসদে কোন জবাবদিহিতা নেই। একজন মন্ত্রী বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা নেই, বাজারে গেলে কান্না পায়। যার পয়সা আছে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় কোন পণ্য কিনতে পারে না। সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। আবার বলেছেন, কিছু লোক সিগারেট খেতে পারতো না তারা এখন ব্যাংকের মালিক। তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ না, আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়েছেন। এসব একজন মন্ত্রীর কথা। বিসিসির রিপোর্টে বলেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তিন বছরে আয় করতে পারেনি, খরচ উঠবে কবে? এই অবস্থায় নাকি আরো একটি স্যাটেলাইট আসবে। যেটির অর্ধেক দিবে সরকার আর অর্ধেক ঋণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তিন বছরে তিনশো কোটি টাকা আয় করেছে, কিন্তু কত টাকা ব্যয় করেছে তা কিন্তু বলেনি। আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব নেই। এটি যদি ১৮ বছর চলে তাহলে আয় হবে ১৮শো কোটি টাকা। কিন্তু ব্যয় হলো ৪ হাজার কোটি টাকা। টিভি চ্যানেলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বেশি টাকা এই স্যাটেলাই ব্যবহার করতে হচ্ছে। অথচ, অন্যদেশের স্যাটেলাইটে অনেক কম টাকা দিতে হতো।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ক্ষমতায় বসাবে দেশের মানুষ, বিদেশীরা নয়। বিদেশীরা কি কাউকে ক্ষমতায় বসাতে বলেছে? তারা বলেছে দেশে যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। দেশের মানুষ যাকে চাইবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এমন কথা ওবায়দুল কাদের সাহেব মাইন্ড করেন কেন? কেন আপনাদের খারাপ লাগে? তার মানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ক্ষমতার পালাবদল হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আপনারা চান না। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের মানুষের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। লুটপাট এখন ওপেন সিক্রেট। আইএমএফ বলেছে দেশের মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে, রিজার্ভ আরো কমবে। ৯১ সালের আগে তিন দলীয় জোটের রুপরেখায় মানুষকে অনেক আশা দেয়া হয়েছিলো। গণতন্ত্র দেয়া হবে, বৈষম্য থাকবে না, দরিদ্র বিমোচন করা হবে। দেশে মধু এবং দুধের বণ্যা বয়ে যাবে। এমন মিথ্যাচার করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে তিন দলীয় জোটের রুপরেখায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ৯১ সালের পর গণতন্ত্র হত্যা করেছে। সাংবিধানিকভাবেই গণতন্ত্র চর্চা করার সুযোগ নেই। দলীয়করণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিপিড়ন করেছে। দুটি দল দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের মানুষের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। দেশের মানুষ তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়। আমাদের অতিত ঐতিহ্য আছে, দেশের মানুষ জানে আমরাই দেশে সুশাসন দিতে পারবো। আমরা দেশের মানুষের সামনে আশার আলো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই। জাতীয় পার্টিকে ধংস করতে দুটি দল এক সাথে আঘাত করেছে। দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে।