রহমত নিউজ ডেস্ক 04 May, 2023 07:52 PM
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গত ২০১৮ সালের জরিপে রাজধানীতে ১০০ পুকুর থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২৯টি পুকুর রয়েছে। পুকুরগুলো ভরাট করে এই জায়গার ওপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। পুকুরগুলো মালিকানা সম্পত্তি হলেও এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ। কারণ এই পুকুরের মাধ্যমে আশেলপাশের কোথাও আগুনের ঘটনা ঘটলে এই পুকুরগুলো ওয়াটার সোর্স হিসেবে কাজ করে। যার ফলে রাজধানীতে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে পানির যোগানে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জলাশয়গুলো রক্ষা করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
আজ (৪ মে) বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ‘বারবার অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ: প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক নগর সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন-স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন-রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশন বা রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা। কি-নোট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স বা বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. মেহেদী আহসান।
সম্প্রতি বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মার্কেটগুলোতে অধিক দোকান বসানোর প্রবণতা দেখা দেয়। দেখা গেলো একটি মার্কেটে ১০০ দোকানের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু সেখানে বেশি লাভের আশায় দোকানগুলো ছোট করে ২০০ দোকান করা হচ্ছে। ফলে সেখানে সেখানে ১০০ দোকানের বিদ্যুৎ সাপ্লাইয়ের ক্যাপাসিটি সিস্টেম থাকলেও সেই একই লাইনে ২০০ দোকানের সাপ্লাই দেওয়া হয়। যা বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে অন্য অনেক সেবা নিশ্চিতে পিছিয়ে থাকে। ফলে লোডের কারণে ক্যবলগুলো হিট হয়ে গলে যায় এবং আগুনের ঘটনা ঘটে। অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে নিম্নমানের ইলেকক্ট্রিক পণ্য ব্যবহার না করে ভালো মানের ইলেকক্ট্রিক পণ্য বব্যবহার ও অন্তত ৬ মাস অন্তর অন্তর ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের লাইন চেক করার তাগিদ দেন। হিট অক্সিজেন এবং ফুয়েল এক জায়গা হলেই আগুনের সূত্রপাত তৈরি হয়। গত ২০১৭ সালের জরিপে রাজধানীতে ১১৯১টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ছিল। আমরা ঈদের আগে পূর্বের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ৯৮টি ভবন হালনাগাদ করে দেখতে পেয়েছি ৩৫টি ভবনই অতি ঝুঁকিপূর্ণে চলে গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পুকুর, জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে; তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ইতিমধ্যে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের কাজ শুরু করা হয়েছে। মান্ডা, জিরনিসহ বেশ কয়েকটি খাল উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জলাশয় রক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে ডিএসসিসি কাজ করছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থাপনা ও মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বঙ্গবাজারের স্বরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকায় পুকুর ও পানির উৎস না থাকা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। তখন এক প্রতিবেদনে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজারেরও বেশি। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ২ হাজার। কিন্তু ঢাকায় এখন পুকুরের সংখ্যা ১০০টিরও কম। জানা গেছে, যে এক হাজার ৯০০ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার ভরাট হয়ে গেছে, তাতে জমির পরিমাণ ৭০ হাজার হেক্টর। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল হারিয়ে গেছে। এটা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নিম্নভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০%-এর নিচে নেমে যাবে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় খালের সংখ্যা ৪৭টি। তবে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৫৬টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই মৃতপ্রায়। এর মধ্যে দখল হয়ে যাওয়া ২৬টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা দিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। বাকি খালগুলোর অস্তিত্ব তারা এখনো খুঁজে পায়নি। জানা গেছে, খাল দখলদারদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ঢাকা শহরের যে খালগুলোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ঢাকার চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা মিলিয়ে মোট ৭৭টি খালের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেছে।
কেবল পানির উৎসের জন্য নয়, ঢাকা শহরে বৃষ্টির সময় যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় তা থেকে রক্ষার জন্য খাল, পুকুর ও জলাধারগুলো উদ্ধার প্রয়োজন মন্তব্য করে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, আমরা যদি ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভর করে বসে থাকি তাহলে তো চরম সংকটে পড়ব। কারণ পানির স্তর তো নিচে নেমে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো গভীর নলকূপেও পানি পাওয়া যাবে না। আমাদের এখানকার যে শিল্প কারখানার ধরন তাতেও প্রচুর পানি প্রয়োজন। কারণ যেসব কারখানায় বর্জ্য বেশি হয়, দূষণ বেশি হয় সেগুলোই আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক কেজি জিনিস উৎপাদন করতে ২২০ কেজি পানি লাগে। আমাদের দুই সিটিতে যে ৪৭টি খালের হিসাব সরকারই দিচ্ছে, সেই খালগুলো আগে উদ্ধার করা হোক। আর সরকারি অনেক পুকুরও ভরাট হয়েছে। পার্কের অনেক পুকুর নাই। সেগুলো উদ্ধার করা হোক।