রহমত নিউজ ডেস্ক 03 May, 2023 09:41 PM
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিস্তৃতি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। আমরা মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। প্রতিবেশি অনেক দেশেই গণমাধ্যমের এ রকম বিস্তৃতি ঘটেনি এবং এমন অবাধ স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে কাজ করে না। স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বশীলতাকে যোগ করতে হয় তাহলেই গণমাধ্যম সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আর যদি স্বাধীনতার সাথে দায়িত্বশীলতা না থাকে তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সমাজের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি হয়। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক। গণমাধ্যম ব্যতিরেকে গণতন্ত্র হতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ব্যতিরেকে গণতন্ত্র কখনো পথ চলতে পারে না, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। সে কারণে গণতন্ত্রকে সংহত করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন।
আজ (৩ মে) বুধবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘মানবাধিকার সংরক্ষণ ও গণতন্ত্র সম্প্রসারণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মো: আইয়ুব ভুঁইয়া প্রমুখ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্র ও বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিকাশ, ন্যায়ভিত্তিক-বিতর্কভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্যে গণমাধ্যমের বিস্তৃতি এবং স্বাধীনতার ওপর জোর দিয়েছে, গত ১৪ বছরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনসহ সম্প্রচারে আসা টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা ৩৯টি, খুব সহসা আরো কয়েকটি সম্প্রচারে আসবে। বেসরকারি টেলিভিশন এবং বেতারের যাত্রাও শুরু হয়েছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন টিভি চ্যানেল ছিলো ১০টি আর দৈনিক পত্রিকা ছিলো সাড়ে ৪শ’ যা এখন ১২৬০। ২২টি বেসরকারি এফএম রেডিও’র লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, ১২টি সম্প্রচারে আছে, কয়েক ডজন কমিউনিটি রেডিও’র লাইসেন্স দেওয়া আছে যার বেশিরভাগই সম্প্রচারে আছে। অনলাইন গণমাধ্যম কয় শত কিম্বা কয় হাজার সেটি একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার। ইতিমধ্যে ২ শতাধিক অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে, পত্রিকা এবং টেলিভিশনের অনলাইনসহ সেটা আরো অনেক বেশি। এর ফলে আজকে হাজার হাজার সাংবাদিক গণমাধ্যমে কাজ করছে। আজকে যারা বিদগ্ধ সাংবাদিক তারা তাদের এই ‘ট্যালেন্ট’ প্রকাশ করার সুযোগ পেতেন না, যদি গণমাধ্যমের এ রকম ব্যাপক বিস্তৃতি না ঘটতো। আশেপাশের দেশে গণমাধ্যমের এ রকম বিস্তৃতি ঘটেনি এবং এ রকম অবাধ স্বাধীনতার মধ্যে কাজ করে না। কয়েকটি ছাড়া প্রায় সকল টেলিভিশন আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অনুমোদন পেয়েছে। আর সকল টেলিভিশনে প্রতিদিন রাতের বেলায় টক শো’তে সরকারের সমালোচনা হয়। সংবাদ যখন প্রকাশ করা হয় তখনও সরকারের ব্যাপক আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার কখনো হস্তক্ষেপ করে না। কারণ আমরা মুক্ত গণমাধ্যমে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমরা কথায় কথায় সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেই একটি জেলে পল্লী থেকে কিভাবে সিঙ্গাপুর উন্নত দেশে রূপান্তরিত হলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত প্রায় সব দেশের চেয়ে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু আয় বেশি। সিঙ্গাপুরের ৪টি চ্যানেল রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পত্রিকাও রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সব টেলিভিশন চ্যানেল ফিড একটা জায়গা থেকে আপলিংক করা হয়। কোনো কনটেন্ট পছন্দনীয় না হলে তা অফ করে দিয়ে বিজ্ঞাপন বা অন্য কিছু দেওয়া হয়। আমাদের দেশে তা নয়। মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীরা ৮০ দশক পর্যন্ত আমাদের দেশে পড়তে আসতো। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে যাচ্ছে। তারা কিভাবে এই জায়গায় এলো সেটি একটি বিস্ময়। সেখানে গণমাধ্যমের এই স্বাধীনতা নাই, বিস্তৃতিও নাই।
ইউরোপের দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রসঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে আমরা যুক্তরাজ্যকে অনুসরণের চেষ্টা করি। সেখানে প্রতি সপ্তাহে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশন কিম্বা কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার দায়ে গণমাধ্যমকে প্রতিনিয়ত মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয়। বিবিসিতে একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার কারণে পুরো বিবিসি টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ১৩০ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ একটি ভুল অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে এ ধরণের ঘটনা কখনো ঘটেনি। কন্টিনেন্টাল ইউরোপেও যুক্তরাজ্যের মতোই ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে গণমাধ্যমকে মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয়, শাস্তি পেতে হয়। পত্রিকায় পুঁজির দৌরাত্ম্য আজকে দেশে একটা সমস্যা’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যখন সংবাদ মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ হয়, সেই পুঁজির দৌরাত্ম্য সাংবাদিকদের ওপর খড়গ বসায়, তাদের কাজে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের পক্ষ থেকে কি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সেটি নিয়ে আমরা সবসময় আলোচনা করি কিন্তু আমি মনে করি সুস্থভাবে, অবাধে, ভয়হীন পরিবেশে কাজ করার ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের পুঁজির দৌরাত্ম্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। কয়েকজন সাংবাদিক নেতা প্রশ্ন রেখেছেন, ব্যাংকের মতো সংবাদ মাধ্যমের পরিচালনা পর্ষদে কেন সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে না, ইন্ডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর থাকবে না!
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় বলেছি আজকেও বলবো, একজন সাংবাদিক, গৃহিনী, চাকরিজীবী, কৃষক অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই এই আইন। অনেক সাংবাদিকও এই আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ক’দিন আগে একজন নারী সাংবাদিক তার চরিত্র হননের প্রতিকারের জন্য এই আইনে আরেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজকের আলোচনায় সাংবাদিকরাও বলেছেন, এ আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরণের আইন আজকে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ প্রণয়ন করেছে। অনেক দেশে এই আইন আমাদের চেয়ে কঠোর। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ছাড়া অন্যগুলোতে ফাঁসি নাই। কিন্তু সেখানে ডিজিটাল অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। যুক্তরাজ্যের লোকসংখ্যা আমাদের তিন ভাগের এক ভাগ, ৬ কোটির একটু বেশি। সেখানে প্রতি মাসে কয়েক ডজন মানুষ গ্রেপ্তার হয়। আমাদের দেশে হয় না। একজন গ্রেপ্তার হলে সেটা পত্রিকায় শিরোনাম হয়। সেই সাথে অবশ্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণে-অকারণে মামলা ঠুকে দেওয়া, সাথে সাথে আবার গ্রেপ্তার করা- এগুলো অবশ্যই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। সে ব্যাপারে আমি একমত। কোনো একটা গোষ্ঠিকে কোনো আইন থেকে বাদ দেওয়া সেটি সমীচীন হয় কিন্তু কোনো আইনের যেন অপপ্রয়োগ না হয় বা কারো ওপর অপপ্রয়োগ না হয় সেটি আমাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আগের তুলনায় অপপ্রয়োগ কমেছে, অপপ্রয়োগটা শূণ্যের কোটায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।