রহমত নিউজ ডেস্ক 02 May, 2023 06:48 PM
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন আজকে না বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। আপনারা জানেন, একবার তাকে চারমাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। তখনও আপনাদের বারবার করে বলেছি যে, তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে আছে লিভার, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা। এই বিষয়গুলো সবাই জানেন। এরপরও যদি তারা এই সমস্ত কথা-বার্তা বলে, অপপ্রচার করে...এর অর্থই হচ্ছে তারা আবারও কোনো গভীর চক্রান্ত করছে। এর মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে (খালেদা জিয়া) তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কি না ও এ ধরনের পরিকল্পনা বা চক্রান্ত করছে কি না, সেটা আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পাওয়া একটা মৌলিক অধিকার, মেডিকেল বোর্ড বলেছে যে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। বাংলাদেশে তার সেই উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কোনও কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু এ ধরনের অপপ্রচারের মতো কথা বার্তা বলে। তারা অমানবিক আচরণ করছে। তারা দেশনেত্রীর সঙ্গে এবং জনগণের সঙ্গে একটা তামাশা করছে।
আজ (২ মে) মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে গতকাল ১ মে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিতক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহুমদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে। স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা আট মাসের বেশি সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে আটক। ইউএনবি সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলা হয়েছে। সরকার এই আইনের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সংবাদকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে।ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষে এই নিবর্তনমূলক আইনকে সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সভায় বিলটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল ২০২৩ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে। শিগগিরই তা আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। আইনটি প্রণয়নের কোনো পর্যায়েই অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি, প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠান, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে। এই আইনকে প্রচলিত শ্রম আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবী জনগণ যা কিছু অধিকার অর্জন করেছিল তা নাকচ করে দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত শ্রম আইনেই কোনো ধর্মঘট জনজীবন বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তা নিষিদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিরোধটি শ্রম আদালতে পাঠানোর কথা বলা আছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলেই লাখ কোটি শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষকে ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণার আওতায় রাখতে পারবে। কিন্তু তাদের ন্যায্য সমস্যা সমাধান বা প্রাপ্য আদায়ের কোনো বিকল্পের কথা আইনে রাখা হয়নি। বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত আইনটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। বিএনপি প্রস্তাবিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩’ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে।