রহমত ডেস্ক 03 September, 2022 10:01 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দায়িত্ব সরকার নেওয়ার পর থেকেই চা শিল্পকে বিকশিত করার পাশাপাশি চা শ্রমিকরা যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে সে বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। বঙ্গবন্ধু যেমন নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি চা শ্রমিকদের প্রতি আমার আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। আমি সবসময় সেই অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। আমরা চা শ্রমিকদের সকল সমস্যা সমাধান এবং চা শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি, তাঁরা পঞ্চগড়ে নতুন করে চা চাষ শুরু করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তখন এই শিল্পের বিকাশ ও চা শ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
আজ (৩ সেপ্টেম্বর) শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মতবিনিময়কালে ভিডিও কনফারেন্সে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে যোগদানকারী চা শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন যেখানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং তাদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু যখন মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তখন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁকে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান করেন। জাতির পিতাই চা বোর্ডের প্রথম চেয়াম্যান ছিলেন। পরে ১৯৫৮ সালে তিনি গ্রেফতার হলে ২৩ অক্টোবর স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সে দায়িত্ব কেড়ে নেন। কিন্তু তিনি সেই সময়েই চা-বাগান এবং শ্রমিকদের অবস্থা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে চা শিল্প যেন নব উদ্যোমে যাত্রা শুরু করতে পারে সে পদক্ষেপও তিনি নেন। বঙ্গবন্ধু মতিঝিলে চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন এবং ‘টি অ্যাক্টের ৭ নম্বর ধারার সংশোধনীতে ‘টি লাইসেন্সিং কমিটি বিলুপ্ত করে কমিটির কার্যক্রমকে চা বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসেন। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণাগারও নির্মাণ করেন এবং বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধারও ব্যবস্থা করেন এবং ’৭০ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে চা শ্রমিকদের বিশাল সমাবেশেও তিনি ভাষণ দেন এবং চা শ্রমিকদের অধিকারের কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানীরা জ্বালাও পোড়াও এবং দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানা, রাস্তা-ঘাট, অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি চা বাগানেরও ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর পুণরায় এ শিল্পের পুনরুজ্জীবনে পদক্ষেপ নেন।
চা শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও মজুরি পুননির্ধারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগানের মালিকদের সাথে আলোচনা করে চা শ্রমিকরা যাতে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার তাদের দৈনিক মজুরি এবং অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আমরা মনে করি যে আমরা চা শ্রমিকদের দাবিগুলো উপলব্ধি করতে পারি। আপনাদের চাহিদাটা আমরা পুরণ করতে পেরেছি বলেই মনে করি। কেননা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেহেতু আপনাদেরকে নাগরিকত্ব দিয়ে গেছেন সেজন্য তাঁর কন্যা হিসেবে মনে করি আপনাদের প্রতি আমার একটা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। আর সেই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালনেরই চেষ্টা করি। আর মালিকরাও যাতে আপনাদের যথাযথ ভাবে দেখে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। তাঁর কথা মালিকরা মেনে নেওয়ায় তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান। মালিকরা তাদের কথা মেনে চলবেন এবং শ্রমিকদের প্রতি যত্নবান হবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে তিনি সত্যিই খুব খুশি এবং শ্রীমঙ্গলে চা বাগান পরিদর্শনকালে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি উপহার নিয়ে চা শ্রমিকরা গণভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে আসেন। যেটা তাঁর জন্য অনেক সম্মানের এবং চা শ্রমিকদের জমানো পয়সা এবং ভালবাসা দিয়ে প্রদান করা এত বড় উপহার আর কোনদিনও পাননি। সরকার সকলের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ সকল মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করছে এবং সকলকে গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে।
চা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা আমি করে দেব। এই মাটির ওপর আপনাদের অধিকারটা যেন থাকে সেই ব্যবস্থাটাই করে দিয়ে যাব ইনশাল্লাহ। চা বাগানের মালিকদের পরিচালিত স্কুলগুলো জাতীয়করণের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষসাধনের এবং চা শ্রমিকদের মাত্রিত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে চা শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রতিটি নাগরিকের সব রকম কষ্ট লাঘবে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। চা শিল্পটা যেন ধ্বংস না হয় সেজন্য তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে। যে ভরসাটা আমার ওপর রেখে আপনারা কাজে যোগ দিয়েছেন সেজন্য সত্যিই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। মতবিনিময়কালে চা শ্রমিকদের ছোট খাটো কয়েকটি প্রয়োজনের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে তা পূরণের নির্দেশ দেন তিনি।