সব ক্ষেত্রেই সরকার সাফল্য অর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সেই উন্নয়নের ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে।অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে আমরা একটা জায়গায় আসতে পেরেছি, এই উন্নয়নের যেন অব্যাহত থাকে। চিরদিন আমিও থাকবো না কিন্ত বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয় এটাই আমি চাই। আমরা যেন এগিয়ে যেতে থাকি এবং যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল সেই আদর্শ যেন বাস্তবায়ন করতে পারি। এদেশের প্রতিটি গৃহহীনকে ঘর করে দেয়া, খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা- সব ক্ষেত্রেই আজকে সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, আরো সামনে এগিয়ে যাবার আকাঙ্খাও ব্যক্ত করেন তিনি।

আজ (২ আগস্ট) মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরস্থ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের নিয়মিত সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেভাবে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি সেভাবেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছি বলেই ঠিক যখন ২০২০ সালে জাতির পিতা জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি তখনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন। তবে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একটানা তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারার কারণে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি এবং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই আমাদের ওপর জনগণের যেমন আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে তেমনি আমারও জনগণের প্রতি সেই আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। সরকার স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি আশু করণীয় নির্ধারণ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাঁর সরকার ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যে রুপকল্প -২০২১ ঘোষণা করেছিল তা বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছে। আজকের অর্জনের পেছনে পরিকল্পনা কমিশনের একটা বিরাট অবদান রয়েছে।

 তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঔপনিবেশিক আমলের শাসন কাঠামোকে পরিবর্তন করে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন এবং সেজন্য পদক্ষেপও নিয়েছিলেন যার সুফল দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন এবং এদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ যেন কারো মুখাপেক্ষী না থেকে আত্মমর্যাদাশীল ভাবে গড়ে ওঠে সেটাই ছিল তাঁর চিন্তা এবং দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি এদেশের যে মাটি ও মানুষ আছে তা দিয়েই বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। এজন্য তাঁর যেমন আত্মবিশ্বাস ছিল তেমনি মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল গভীর ভালবাসা। কারণ, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাঁর নির্দেশে যার যেটুকু সামর্থ্য ছিল তাই নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই আঘাত আসলো, তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হলো। বাংলাদেশে আবার মেনে এলো স্থবিরতা।

তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করেনি তবে, ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। মানুষেন তখন গণতান্ত্রিক অধিকার বা ভোটের অধিকার কিছুই ছিলনা, প্রতি রাতে কারফিউ থাকতো। ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল। আমরাই আন্দোলন সংগ্রাম করে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেই। আপনজন হারানোর ব্যথা বুকে ধারণ করে কেবল বাবার যে স্বপ্ন, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তাঁর পথ চলা। আপনজন হারানোর যে ব্যথা, বেদনা, কষ্ট তা সহ্য করা যায় না। কিন্তু আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকে এদেশের মানুষকে ভালবাসতে এবং মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন তিনি। তাছাড়া তাঁর সঙ্গে যেটুকু কথা বলার সুযোগ পেতাম এই একই গল্প হতো কীভাবে এই দেশের মানুষের উন্নতিটা হবে। কাজেই আমারও সেই প্রচেষ্টা।

তিনি আরো বলেন, আমরা যাঁরা ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি তাদের কোন বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিলনা। মামলা করার বা বিচার চাওয়ার সে অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আমাদের প্রতি যে অবিচারটা হয়েছিল যেভাবে মানবাধিকার লংঘণ করা হয়েছিল জানি না তা আর কেউ স্মরণ করে কি-না। ’৯৬ সালে আওয়ামী সরকারে এসে সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের পরই কেবল মামলার সুযোগ পাই। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, খুনীদের পুরস্কৃত করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা, কি না করা হয়েছে। কত অন্যায় কাজ এদেশে হয়েছে। হত্যা হলে যে কেউ বিচার চাইতে পারে কিন্তু আমাদেরতো সে অধিকার ছিলই না বরং আমার চোখের সামনে দেখেছি জনগণের ভোট চুরি করে সেই খুনীদের খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এরশাদ তাদের রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হবার সুযোগ করে দিয়েছে। এই রকম অন্যায় অবিচার আমরা চোখের সামনে দেখে সবকিছু সহ্য করে, ধৈর্য্য ধরে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কারণ আমরা একটাই সম্পদ ছিল জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা এবং সেটাকে মূলধন করেই আমি এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। আর আজকে জনগণের সহযোগিতায় যতটুকু এগুতে পেরেছি তা দেখে আমার বাবার আত্মা নিশ্চয়ই শান্তি পাবে।