| |
               

মূল পাতা ইসলাম স্বামীর মানসিক যত্ন ও পরিচর্যায় স্ত্রীর দায়িত্ব


স্বামীর মানসিক যত্ন ও পরিচর্যায় স্ত্রীর দায়িত্ব


আবদুস সাত্তার আইনী     27 June, 2022     08:16 PM    


স্বামীর জন্য এ অধিকারের রূপরেখা প্রদান করে শরীয়ত মূলত নারীকেই মর্যাদাবান করেছে এবং তার অবস্থান উঁচু করেছে। কেননা এর মাধ্যমে শরীয়ত প্রমাণ করেছে যে, স্ত্রী হচ্ছে পুরুষের মানসিক শান্তি ও স্বস্তির উৎস। শুধু তাই নয়, স্ত্রী তার মায়া-মমতা ও প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে স্বামী ও সন্তানের মানসিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারে।

এ কারণে রাসূলুল্লাহ সা. ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন, পুরুষের অর্জিত শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার নেককার স্ত্রী, যে স্বামীর পার্থিব জীবনের সমূহ কষ্ট ও যন্ত্রণা লাঘবে সহায়তা করে এবং পরকালীন মর্যাদা লাভে উৎসাহিত করে :
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী জিহ্বা এবং পার্থিব ও পরকালীন কাজে সহায়তাকারী স্ত্রী মানুষের অর্জিত শ্রেষ্ঠ সম্পদ।’ (তাবারানী)

রাসূলুল্লাহ সা. স্বামীর সঙ্গে হাসি-খুশি থাকা ও আমোদ-প্রমোদ করা এবং তাকে মানসিক স্বস্তি দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিতে নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যে কোন নারী এ কাজগুলো করলে পরকালীন জীবনে উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে।

রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর স্ত্রীগণ তাঁর সঙ্গে যে আচরণ করতেন তাতে আমরা স্বামীর মানসিক পরিচর্যার প্রায়োগিক পদ্ধতি দেখতে পাই। খাদীজা রা. রাসূলুল্লাহ সা.-এর দাওয়াতে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈষয়িক ও মানবিক সমর্থন যুগিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা.-এর নবুওয়ত লাভের পূর্বে তাঁর চোখে সমস্যা হলে খাদীজা রা. ঝাড়ফুঁক দিয়ে তা সারানোর চেষ্টা করতেন।

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আমি একমাস হেরা গুহায় নির্জনবাস করেছি। একমাস পূর্ণ হলে নিচে নেমে এলাম। পাহাড়ি উপত্যকার মাঝামাঝি পৌঁছে শুনলাম কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে তাকালাম, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। একটুপর আবার ডাক শুনলাম। এবারও আমি এদিক ওদিক তাকালাম; কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। কিছ্ক্ষুণপর আবার ডাক শুনলাম। এবার আমি ওপর দিকে তাকালাম। দেখি তিনি (জিবরাইল আ.) শূন্যে তাঁর আসনে বসে আছেন! তিনি আমাকে তাঁর বুকের সঙ্গে জোরে চেপে ধরলেন। আমি ঘরে ফিরে খাদীজাকে বললাম, তোমরা আমার গায়ে চাদর জড়িয়ে দাও। তারা তিনি আমাকে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিলো এবং আমার মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢাললো। ... তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেন,
يَا أَيُّهَا الْمُدّثِّرُ۞ قُمْ فَاَنْذِرْ ۞ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ۞ وَ ثِيَابَكَ فَطَهِّرْ۞
অর্থাৎ ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! ওঠো, আর সতর্ক করো এবং তোমার প্রতিপালকের মহত্ত¡ ঘোষণা করো এবং তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো।’ (সূরা ম্দ্দুাস্সির : ১-৪)। (সহীহ মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ সা. খাদীজা রা. সম্পর্কে বলেছেন, ‘ আল্লাহ আমাকে তাঁর উত্তম বিকল্প দান করেননি; যখন মানুষ আমাকে (রাসূলুল্লাহ মানতে) অস্বীকার করেছে তখন সে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে। যখন মানুষ আমাকে মিথ্যাবাদী বলেছে তখন খাদীজা আমাকে সত্যবাদী বলে স্বীকার করেছে। যখন মানুষ আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন খাদীজা আমাকে তার ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছে। যখন অন্য সকল নারী আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন আল্লাহ আমাকে খাদীজার গর্ভে সন্তান দিয়েছেন। ’ (মুসনাদে আহমাদ)

আলী ইবনে হুসাইন রা. বলেন, মক্কায় রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওপর অহী নাযিল হবার পূর্বে (অর্থাৎ নবুওয়ত লাভের পূর্বে) কখনো কখনো তাঁর চোখে সমস্যা দেখা দিত। তখন খাদীজা রা. মক্কার এক বৃদ্ধের কাছে সংবাদ পাঠাতেন। বৃদ্ধ লোকটি এসে রাসূলুল্লাহ সা.-এর চোখে মুখের লালা ছিটিয়ে দিতো। রাসূলুল্লাহ সা. এতে আপত্তি করতেন না। নবুওয়ত লাভ করার পরও তাঁর চোখে সমস্যা দেখা দিল। তখন খাদীজা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার চোখে লালা ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য ঐ বৃদ্ধকে ডাকবো কি? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, : এখন আর প্রয়োজন নেই।’ (কানযুল উম্মাল)

রাসূলুল্লাহ সা.-এর ঘুমের সময় যেন আরাম হয় এবং কোনভাবে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য তাঁর স্ত্রী যায়নাব বিনতে জাহ্শ্ রা.-এর ব্যাকুলতা চোখে পড়ার মত ছিল। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা. আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় (শিশু) হুসাইন আমার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। আমার আশঙ্কা হচ্ছিলো, সে নবীজীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেবে। তাই আমি তাকে কিছু একটা দ্বারা ব্যস্ত করে রাখলাম। অতঃপর আমি একটু অন্যমনস্ক হলে সে এসে রাসূলুল্লাহ সা.-এর পেটের ওপর বসে পড়লো এবং নবীজীর নাভীর ওপর প্রস্রাব করে দিল। এ দৃশ্য দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ সা. জেগে উঠে বললেন, পানি নিয়ে আস। আমি পানি নিয়ে এনে প্রস্রাবের স্থানে ঢেলে দিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ছেলে শিশুর প্রস্রাব হলে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে আর মেয়ে শিশুর প্রস্রাব হলে জায়গাটি ধুয়ে ফেলতে হবে।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবদুর রাজ্জাক)