| |
               

মূল পাতা জাতীয় চূড়ান্ত বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে দাম বাড়ানোর আহ্বান


চূড়ান্ত বাজেটে তামাকপণ্যে কার্যকরভাবে দাম বাড়ানোর আহ্বান


রহমত ডেস্ক     18 June, 2022     06:56 PM    


আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাস হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে সিগারেটসহ সবধরনের তামাকপণ্যের ব্যবহার বাড়বে। স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে যাবে এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। সম্পূরক শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখায় এবং সুনির্দিষ্ট করপদ্ধতি চালু না করায় তামাক কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

আজ (১৮ জুন)  শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকের সহায়তায় প্রজ্ঞা-প্রগতির জন্য জ্ঞান এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা আয়োজিত তামাক কর বিষয়ক বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব মতামত তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদসহ তামাকবিরোধী নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে আরো অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশ এর সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর মো. আতাউর রহমান এবং গ্রান্টস ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ এবং দাবি তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

সংবাদ সম্মেলনে প্রজ্ঞা ও আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২.৫৬ শতাংশ। বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে যার প্রধান ভোক্তা মূলত তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী। মধ্যম, উচ্চ এবং অতি উচ্চ স্তরে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে যথাক্রমে ৩.১৭ শতাংশ, ৮.৮২ শতাংশ এবং ৫.১৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে (প্রভিশনাল) জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ (নমিনাল)। সিগারেটের দামবৃদ্ধি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় খুবই কম হওয়ায় সিগারেট আরো সহজলভ্য হবে এবং তরুণরা সিগারেট ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য থেকে চারটি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দৈনিক গড় খুচরা মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালের (৮ জুন) তুলনায় ২০২২ সালে (৮ জুন) সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪৫.১৮ শতাংশ, আটার দাম ৪৪.৬৩ শতাংশ, ডিমের দাম ৩৪.০৩ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ২৫.৪৩ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম ১৮.১৯ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬.৬৩ শতাংশ এবং মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১২.৫ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ২.৫৬ শতাংশ এবং জর্দা, গুল ও বিড়ির দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ এসব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, নিম্নস্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে কেবল খুচরামূল্য ১ টাকা বাড়ানোর কারণে বর্ধিত মূল্যের একটা অংশ কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী তামাকপণ্যে সম্পূরক শুল্কের পরিমাণ হবে খুচরামূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ। এছাড়াও তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সম্পূরক শুল্ক সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ না করায় কর আহরণে জটিলতা বাড়বে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকিসহ নানাভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বহুল ব্যবহৃত সস্তা সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে শলাকাপ্রতি মাত্র ১০ পয়সা এবং গুল, জর্দা ও বিড়ির দাম ১ পয়সাও বাড়ানো হয়নি। এভাবে তামাকের ব্যবহার কমবে না। আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে সরকারের রাজস্ব আয় বহুগুণ বাড়বে এবং তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম হবে।” বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে তামকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে। এতে রাজস্ব আহরণে জটিলতা কমবে, রাজস্ব প্রাপ্তি সম্পর্কে সঠিক পূর্বানুমান করা যাবে এবং সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সহজ তামাক করনীতি বাস্তবায়নের পথে একধাপ এগিয়ে যাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে :
সিগারেট : নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

বিড়ি : ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

জর্দা এবং গুল : প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হলে প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। একইসাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন সহজ হবে।