রহমত ডেস্ক 10 June, 2022 09:39 PM
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা তুলে ধরে উন্নয়নমুখী চিন্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আগামী বাজেট কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে কারণ অনেক উত্থান-পতন হবে। আমরা সব বাধা অতিক্রম করে সফল হতে পারব, ইনশাআল্লাহ। আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে যখন সমগ্র বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত, তখন বাংলাদেশের কোনো ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচক ভালো ছিল।
আজ (১০ জুন) শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবগণ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৭.৫ শতাংশ এবং গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে। এই বাজেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বাজেটে দারিদ্র্য দূরীকরনে দরিদ্র শ্রেণীর ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই বাজেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ব্যবসায়ি এবং স্বল্প আয়ের লোকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য সহায়ক হবে। আমরা এমন ভাবেই এই বাজেট প্রণয়ন করেছি। বিগত তিন মেয়াদকালে তার দায়িত্বপালনকালে জনগণ প্রতারিত হয়নি। জনগনের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন, আমরা প্রতিটি মানুষ এবং প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের কথা বিচেনায় রেখে এই বাজেট প্রণয়ন করেছি।
তিনি বলেন, সরকার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যাতে কোনও অমিল না ঘটে সে লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও সামগ্রিক বাজেটের আকার বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় জিডিপির শতাংশে হ্রাস পেয়েছে, সরকার সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রনীতিতে তার ফোকাস সরায়নি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম এখন কম হলেও আমদানি পণ্যের দাম নির্ভর করে বিশ্ববাজারের দামের ওঠানামার ওপর।তবে, আমি আশা করি, বাজারে অস্থিতিশীলতা বেশি দিন থাকবে না। সরকারের অবশ্যই কিছু প্রচেষ্টা থাকবে এবং সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবে না। আমরা ‘সবাইকে সাথে নিয়ে এটি মোকাবেলা করতে সক্ষম হব’। সরকার এটাকে ‘কালো টাকা’ না বলে ‘অপ্রকাশিত অর্থ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ‘আমরা সেই অপ্রকাশিত টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কর ক্ষমা কোন নতুন ধারণা নয় এবং ইন্দোনেশিয়া ২০১৬ সালে এই ধরনের সুযোগ দিয়ে বিদেশ থেকে প্রায় ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে এনেছিল। এই ধরনের সুবিধা দিতে গিয়ে আমরা কোনো প্রশ্ন তুলব না এবং কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। অনেক সময় সিস্টেমের কারণে অর্থ ও সম্পদ অপ্রকাশিত থেকে যায়।
অর্থমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ১৭টি দেশ এ ধরনের সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে। মাঝে মাঝে গরমিল হয়, আমি কখনো বলিনি যে, টাকা পাচার হয় না। বরং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই জেলে গেছে... আমরা পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট সকলেই আগামী বাজেটে এ ধরনের সুযোগ কাজে লাগাবেন এবং এভাবে তাদের অর্থ ও সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারায় ফেরত পাঠাবেন। আমার বিশ্বাস তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। কিন্তু যারা হুন্ডির সাথে জড়িত তারা সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকবে। একমাত্র উপায় হলো সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে চলা। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পিকে হালদারকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।