রহমত ডেস্ক 14 April, 2022 09:39 PM
পৃথিবীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুস্পষ্ট ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পৃথিবীর সুরক্ষার লক্ষ্যে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের মহাসাগর ও ইকোসিস্টেম রক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে। উন্নত জীবনের লক্ষ্যে মহাসাগর ও সাগরের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য আমরা একটি নতুন পথ তৈরিতে পিছপা হবো না।
আজ (১৪ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার পালাউয়ের কোররে ৭ম ‘আওয়ার ওশেন কনফারেন্স’ এ বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। ১৩ থেকে ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই ৭ম আওয়ার ওশেন কনফারেন্সটি যৌথভাবে আয়োজন করছে রিপাবলিক অব পালাউ ও যুক্তরাষ্ট্র। সম্মেলনে অন্যান্যের সাথে অংশ গ্রহণ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সিনেটর জন এফ কেরি। জন কেরির আমন্ত্রণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র দূষণ, সমুদ্র সম্পদের বেপরোয়া আহরণ ও উপকূলীয় আবাস ও জলজ সম্পদ ধ্বংস করার কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেম সেবা প্রদানে মহাসাগরের সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডে মহাসাগর, সাগর ও সমুদ্র সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে এবং এগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। এসডিজি ১৪ অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ অবৈধ, অনবহিত ও অনিয়ন্ত্রিত-আইইউইউ মৎস্য শিকার বন্ধ করতে একটি ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন গ্রহণ এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি নতুন মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া নির্ধারণ করাসহ পাঁচটি নতুন প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। অন্য তিনটি প্রতিশ্রুতি হচ্ছে- ২০২৩ সাল নাগাদ নিরাপদ জাহাজ রিসাইক্লিং নিশ্চিতকরণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২১ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য সুনীল অর্থনীতির আওতায় টেকসই উপায়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পালাউয়ের কররে ‘৭ম আওয়ার ওশান কনফারেন্স’-এর দ্বিতীয় দিনে আজ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে জন কেরি জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এসময় উভয় নেতা বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
সমুদ্র-সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের যথেষ্ট সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। জন কেরি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সক্ষমতাসহ বেড়িবাঁধের উচ্চতা বৃদ্ধি ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পে মার্কিন সহায়তার আশ্বাস দেন। ‘আওয়ার ওশান কনফারেন্স’র আলোচ্য বিষয়ের অংশ হিসেবে সমুদ্র-দূষণরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারেও উভয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। জন কেরি কঠিন বর্জ্য থেকে নির্গমন কমাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা লাভের লক্ষ্যে ‘বৈশ্বিক মিথেন অঙ্গীকার’-এ যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম এফেয়ারস ইউনিট প্রধান মো. খুরশিদ আলম এবং পালাউয়ে সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সম্মেলনের সাইডলাইনে পালাউয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুস্তাভ আইতারোর সাথেও বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। এ বৈঠকে দুদেশের মধ্যে পর্যটন, ঔষধ সামগ্রী, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্ভাবনা এবং দু'দেশের মধ্যে সদ্য প্রতিষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নিয়মিত কূটনৈতিক যোগাযোগের বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। ড. মোমেন সকালে সম্মেলনের উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।