| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘মাস শেষে ৭ দিনের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীর বেতন দিতে হবে’


‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন

‘মাস শেষে ৭ দিনের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীর বেতন দিতে হবে’


রহমত ডেস্ক     28 March, 2022     09:45 PM    


মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করার বিধান রেখে ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২’ সংসদে তোলা হয়েছে। আজ (২৮ মার্চ) সোমবার বিকাল ৫টায় চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিলটি উত্থাপন করলে তা ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল এক মাসের অধিক হবে না। পরবর্তী মাসের সাত কর্মদিবসের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে।প্রতি পাঁচ বছর পর পর গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড গঠন হবে। ওয়েজ বোর্ড সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও নিবন্ধিত অনলাইন মাধ্যমের জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করবে। আগে শুধু সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার জন্য এ ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হতো। গণমাধ্যমে পূর্ণকালীন কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী এবং নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানাসহ নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত কর্মীদের ‘গণমাধ্যমকর্মী’ বলা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনটি বিভাগ করা হয়েছে এই বিলে। সেগুলো হলো; অস্থায়ী বা সাময়িক, শিক্ষানবিশ এবং স্থায়ী।

বিলে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমকর্মীকে সপ্তাহে অন্যূন ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। এর বেশি কাজ করাতে চাইলে ওভার টাইম ভাতা দিতে হবে। আগে গণমাধ্যমকর্মীরা চলতেন ‘দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন- ১৯৭৪’ এর আওতায়। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হচ্ছিল। পরে সাংবাদিকদের শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের শ্রমিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এ বিল পাস হলে গণমাধ্যমকর্মীরা আর শ্রমিক থাকবেন না, তাদের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে অভিহিত করা হবে। দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইনে সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের চাকরির শর্ত, আর্থিক বিষয় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা ছিল। সরকার ওই আইনকে রহিত করে সব শ্রমিকের জন্য ২০০৬ সালে ‘শ্রম আইন’ প্রণয়ন করে, যাতে সংবাদপত্রের সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে বিলটির নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

প্রস্তাবিত এ আইনে বলা হয়েছে, একজন গণমাধ্যমকর্মী বছরে ১৫ দিন নৈমিত্তিক ছুটি পাবেন। এছাড়া প্রতি ১১ দিনে এক দিন অর্জিত ছুটি অর্জন করবেন। এই ছুটি ভোগ না করলে তা জমা থাকবে এবং চাকরি শেষে সর্বোচ্চ ১০০ দিন নগদায়নের সুবিধা পাবেন। চিকিৎসকের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে একজন গণমাধ্যমকর্মী চাকরির মেয়াদের অন্যূন ১৮ ভাগের এক ভাগ অংশ সময় পূর্ণ বেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একজন গণমাধ্যমকর্মী পূর্ণ বেতনে এককালীন বা একাধিকবার অনূর্ধ্ব ১০ দিন পর্যন্ত উৎসব ছুটি ভোগ করতে পারবেন। তিন বছর পরপর ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদন ছুটির কথাও বিলে বলা হয়েছে। প্রতি বছর একজন কর্মী এককালীন বা একাধিকবার অনূর্ধ্ব ১০ দিনের উৎসব ছুটি ভোগ করতে পারবেন। উৎসবের দিন কাজ করালে প্রতি কার্যদিবসের জন্য দুই দিনের মূল বেতন বা দুই দিনের বিকল্প ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। এক বছর চাকরি করার পর ভবিষ্যৎ তহবিলে কর্মী ও মালিকের আট থেকে ১০ শতাংশ চাঁদার কথা বিলে বলা হয়েছে। বিলে প্রতি প্রতিষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী ও মালিকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ‘গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ সমিতি’ গঠন করার বিধান রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার এক বা একাধিক বিভাগীয় এলাকার জন্য গণমাধ্যম আদালত স্থাপন করতে পারবে। এ আদালতের একজন চেয়ারম্যান এবং দুইজন সদস্য থাকবে। কর্মরত জেলা জজদের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান হবেন। দুই সদস্যের একজন গণমাধ্যম মালিক হবেন আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী হবেন। গণমাধ্যম আদালত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে অনুসরণ করবে। প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর ন্যস্ত সকল ক্ষমতা গণমাধ্যম আদালতেরও থাকবে। বিলে গণমাধ্যম আপিল আদালতেরও বিধান রাখা হয়েছে। এর চেয়ারম্যান হবেন হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারক বা অতিরিক্ত বিচারক। চেয়ারম্যানকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সরকার এক বা একাধিক সদস্য নিয়োগ করতে পারবে বলে বিলে বিধান রাখা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম আদালতের আদেশ পালন করতে অস্বীকার করলে বা ব্যর্থ হলে তিন মাসের জেল বা অনূর্ধ্ব পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হবে। কোনো গণমাধ্যম মালিক নারী কর্মীকে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা না দিলে সেই মালিককে ২৫ হাজার টাকা দণ্ড দেওয়া হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। ন্যূনতম বেতন হারের কম বেতন দিলে এক বছরের জেল বা পাঁচ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো গণমাধ্যমকর্মী আদালতে মিথ্যা বিবৃতি দিলে তার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের জেল হবে। গণমাধ্যম মালিক মিথ্যা বিবৃতি দিলে অনূর্ধ্ব পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা তিন মাসের কারাদণ্ড হবে। মালিকের পক্ষ থেকে অন্যায় আচরণ হলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের জেল হবে।

বিলে বলা হয়েছে, এক বছর চাকরিরত অবস্থায় কোনো গণমাধ্যমকর্মী মারা গেলে মৃতের মনোনীত ব্যক্তি বা তার উত্তরাধিকারীকে কর্মীর প্রত্যেক পূর্ণ বছর বা ছয় মাসের অধিক সময় চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ দিনের এবং কর্মরত বা কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারণে ৪৫ দিনের বেতন প্রদান করতে হবে। কোনো স্থায়ী কর্মী ৩০ দিনের নোটিশ এবং অস্থায়ী কর্মী ১৫ দিনের নোটিশ দিয়ে চাকরিতে ইস্তফা দিতে পারবেন। কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত কর্মী ছাঁটাই করতে চাইলে সরকারকে দ্রুত লিখিতভাবে জানাতে হবে। ছাঁটাই করতে হলে কর্মীকে এক মাসের লিখিত নোটিশ দিতে হবে অথবা এক মাসের মূল বেতন দিতে হবে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতি বছর চাকরির জন্য ৩০ দিনের মূল বেতন দিতে হবে।