| |
               

মূল পাতা জাতীয় করোনায় ত্রাণ বিতরণে ক্ষমতাশালীদের অনৈতিক প্রভাব : টিআইবি


করোনায় ত্রাণ বিতরণে ক্ষমতাশালীদের অনৈতিক প্রভাব : টিআইবি


রহমত ডেস্ক     13 January, 2022     03:58 PM    


স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণে উপযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি সংস্থাগুলো সহায়তা দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ১৮ শতাংশ সংস্থা তাদের কার্যক্রমে প্রভাবের শিকার হয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অসহযোগিতা করেছে। তবে প্রায় ২৩ শতাংশ ঋণগ্রহীতার অভিযোগ ছিল করোনাকালে তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এমনকি কিস্তি আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অশোভন আচরণ করেছেন। যদিও বহুমুখী প্রতিকূলতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকাকে প্রশংসনীয় বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

আজ (১৩ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় সাড়াদানকারী বেসরকারি সংস্থাসমূহের ভূমিকা : চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর সময়ে গবেষণার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস-কোয়ান্টিটেটিভ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান সাখিদার।

টিআইবির গবেষণা বলেছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৫৩ শতাংশ সংস্থা উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণে উপযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও উপকারভোগীকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ করেছে। ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ সংস্থা তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং স্থানীয় ক্ষমতাশালীদের প্রভাবে শিকার হয়েছে। সহায়তা প্রার্থীদের হার বেশি থাকার কারণে তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও সংস্থাগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৪১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বহুমুখী প্রতিকূলতা ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি সংস্থাগুলো ভূমিকা পালন করেছে। সংকটাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছে। আরও হয়ত ভালো হতে পারত। তবে যতটুকু করেছে, সেটা প্রশংসনীয়। তাদের আর্থিক মূল উৎস ছিল নিজেদের সংগ্রহ করা অর্থ। সহায়তা প্রদানে স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোনো অবৈধ আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মোটাদাগে মনে করি করোনা মোকাবিলায় বেসরকারি সংস্থাগুলো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পেরেছে।

ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে অনিয়ম প্রসঙ্গে গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাকালে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা ও সুবিধাজনক সময়ে ঋণ বা কিস্তি পরিশোধের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর একাংশের বিরুদ্ধে ঋণের কিস্তি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী উপকার ভোগীর ৭১ শতাংশ কোনো না কোনো এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের নিয়মিত উপকারভোগী। এদের প্রায় ২৬ শতাংশ করোনাকালে ঋণের কিস্তি পরিশোধে সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রায় ২৩ শতাংশ ঋণগ্রহীতার অভিযোগ ছিল করোনাকালে তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আর ৮ দশমিক ৩ শতাংশ কিস্তি আদায়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীর দ্বারা অশোভন আচরণের ও হুমকির শিকার হয়েছেন।

গবেষণা জরিপের অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংস্থার তহবিলের মূল উৎস ছিল সাধারণ তহবিল (জেনারেল ফান্ড) ও তাদের চলমান প্রকল্পগুলোর তহবিল। এছাড়া ৩৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান করোনা সংক্রান্ত নতুন তহবিল সংগ্রহ করেছে। সংকটে পড়ে করোনার সময়ে দাতা সংস্থাগুলো গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ তহবিল হ্রাস করে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। যে কারণে ক্ষুদ্রঋণ কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ সময়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনার সময়ে (মার্চ ২০২০-জুন ২০২১) প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা কম ঋণ বিতরণ হয়েছে।