রহমত টোয়েন্টিফোর ডটকম 29 November, 2020 06:18 PM
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, ‘আমার বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নয়।’ রোববার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা মামুনুল হক জানান, বিভিন্ন সংবাদ ও যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, ইসলামী মাহফিল করতে বাধা প্রদান এবং সরকারদলীয় কিছু সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান জাতির সামনে তুলে ধরতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলেনের আয়োজন করেন।
মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান নেতা ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি। কখনো কোনোভাবে এমন একজন প্রয়াত মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচারণ করি না এবং করাকে সমীচীনও মনে করি না। আবারও স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং বাংলাদেশের একজন বর্ষিয়ান জাতীয় নেতা মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক। তিনি চারদলীয় জোটের শীর্ষ চার নেতার অন্যতম একজন ছিলেন এবং তাঁর দেওয়া আদর্শিক পাঁচ দফা দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক যুগপৎ একটি ঐতিহাসিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন, যা উপমহাদেশে দেওবন্দি ধারা হিসেবে সুপরিচিত।
আমি সেই ধারারই একজন রাজনৈতিক কর্মী। বৃহত্তর সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামের বিজয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণ সাধনই আমার রাজনৈতিক লক্ষ্য। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে পূর্বসূরিদের অনুসৃত পথে স্বচ্ছ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালানোই আমার ব্রত। কোনো ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দেশ-রাষ্ট্র কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।’
মামুনুল হক বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জোটবদ্ধ রাজনীতিতে ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো রাজনৈতিক জোটে যুক্ত নই। আমাদের এমন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এ জন্য জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অমূলক ও কল্পিত অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’
ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ প্রসঙ্গে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যু নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শান্তিপ্রিয় ইসলামপ্রেমী তওহিদি জনতা। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা যেকোনো প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেমসমাজ এর প্রতিবাদ করছে। সেই সূত্রে আমিও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধাচারণ করে বক্তব্য তুলে ধরেছি।
কিন্তু সুকৌশলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান নেতা ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন মরহুম মুসলিম নেতা হিসেবে পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী, অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া প্রমুখ।