রহমত নিউজ 28 June, 2025 03:25 PM
বিনা পারিশ্রমিকে মৃত ব্যক্তিদের কবর খোঁড়ে দেওয়া কিশোরগঞ্জের মনু মিয়া আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মনু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নে। মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জয়সিদ্দি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম।
এর আগে দীর্ঘদিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩ হাজারেরও বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া।
জানা যায়, দুই ভাই ও তিন বোনের সংসারে মনু মিয়া ছিলেন তৃতীয়। কবর খোঁড়ার কাজে বাহন হিসেবে এ পর্যন্ত তিনি ১৪টি ঘোড়াও কিনেছেন। আর এ জন্য বিক্রি করতে হয়েছে তার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি। সম্পত্তি বন্ধক দিয়েই চলছিল নিঃসন্তান মনু মিয়ার সংসার ও কবর খোঁড়ার কাজ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কবর খোঁড়ার কাজ করতে খুন্তি-কোদাল বস্তায় ভরে ঘোড়ায় চড়ে তিনি পৌঁছে যেতেন। কবর খোঁড়ার সেই নিখুঁত কারিগর আজ তার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন সুদক্ষ গোরখোদক হিসেবে মনু মিয়ার সুনাম রয়েছে দুর্গম হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জসহ পাশের এলাকায়। এছাড়া রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের নানা প্রান্তে তার সুনাম রয়েছে। শুধু কবর খনন করেই ক্ষান্ত হন না মনু মিয়া। এ পর্যন্ত যাদের কবর খুঁড়েছেন তাদের মৃত্যুর দিন তারিখ সব লিখে রেখেছিলেন নিজের ডায়েরিতে। দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানী জমি বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছেন ঘোড়াটি। সেই ঘোড়ার পিঠে তিনি তুলে নেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া ছুটে চলতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। তবে সে ঘোড়াটিও মারা যায় এ বছর ১৬ মে।
ঢাকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকন রেজা বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে বলেছিলাম, অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। কিন্তু তিনি বলেন, আমি এই কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না। একজন মানবিক মানুষ ছিলেন তিনি।
জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন, ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হয়ে ওঠেননি। তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার না। আল্লাহ উনাকে বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুক আমিন।
কবর খুঁড়ে তিনি পার করে দিয়েছেন তার ৬৭ বছরের জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯টি বছর। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক কিংবা বখশিস না নিয়ে এ পর্যন্ত খনন করেছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর।