| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বিএনপি ‘পুলিশ বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিছে’


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

‘পুলিশ বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিছে’


রহমত নিউজ     09 November, 2023     09:58 AM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির যখন একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করছে তখন দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করছে। অভিযোগ উঠছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের আটক করতে না পেরে পরিবারের অন্য সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুক পেইজে দাবি করা হয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর থেকে সারাদেশে তাদের আট হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার এক বিবৃতিতে ‘টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে বাসায় না পেয়ে তাদের পিতা, ভাই কিংবা অন্য সদস্যদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে, এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিবের নজরেও এসেছে। ২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেছেন, অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ অথবা খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার করা না হয়, সেজন্য তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি।

দুই ছেলে আটক, পরে মামলা
গত ৩১  অক্টোবর রাতে বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাকের বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। এর আগে, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক সংঘাতের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন আশফাক। তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে বাড়িতে না পেলে তার ছোট দুই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। আশফাকের বড় ছেলে আনান ইসলাম আকাশ কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। ছোট দুই ছেলে – শহীদুল ইসলাম অনিক ও মাকসুদুল ইসলাম আবিরকে - আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের একজন ডিগ্রি প্রথম বর্ষ এবং আরেকজন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে আশফাক বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেন, তার ছোট দুই ছেলের বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলনা এবং তারা কখনোই রাজনীতির সাথে জড়িতও ছিলো না। আমি ও আমার বড় ছেলে রাজনীতির সাথে জড়িত। এটা ঠিক আছে। আমাদের নামে যত মামলা ছিল সবগুলো মামলায় জামিন ছিল। আমরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেই। তার ছোট দুই ছেলের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুরের মামলা দেয়া হয়েছে আটক করার পরে। অভিযানে গিয়ে পুলিশ ঘরের ভেতরে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। পুলিশ বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিছে। এসব ঘটনা কল্পনার অতীত।

তবে এক্ষেত্রে পুলিশের ভাষ্য আলাদা। পুলিশের তরফ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) মো. আল আমিন হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, যে দুজনকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। আটকের সময় আইন মেনে সবকিছু করা হয়েছে। বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম আশফাকের বাড়ির পাশে সরকারি গাড়ি ভাঙচুর এবং রেল লাইনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে তার ছেলেদের বিরুদ্ধে ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগ পেয়েছে এবং সেজন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

ছোট ভাইকে না পেয়ে বড় ভাই গ্রেফতার
ঢাকার মিরপুর-১৩ এলাকায় একটি বাসায় ৩১শে অক্টোবর অভিযানে যায় পুলিশ। উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করা। তাকে না পেয়ে সেখান থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য শহিদুল্লাহ মুসল্লীকে আটক করা হয়।

শহিদুল্লাহ মুসল্লীর ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওমর সাইফুল্লাহ বলেন, তাদের জানা মতে তার বাবাকে যখন আটক করা হয় তখন তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিলো না। সিভিল ড্রেসে কয়েকজন আসছিলেন বাসায়। ঐ সময় আমার আব্বু, আমার আম্মু আর আমি ছিলাম বাসায়। তারা কাকাকে খুঁজতে আসছিল। কাকাকে না পেয়ে আব্বাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আমার সাথে জঘন্য ব্যবহার করছে। আমার বাবাকে যখন নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমরা জ্ঞিজ্ঞেস করছিলাম – ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? কিন্তু পুলিশ কোন উত্তর দেয়নি।

এদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আমানউল্লাহ আমানকে ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ‘হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বে’ দিয়েছে আমানউল্লাহ আমান।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে হয়েছে, গত ২৯ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আটক করার জন্য তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ইশরাক হোসেনকে না পেয়ে তার ছোট ভাই ও গাড়ির চালককে নিয়ে যায় পুলিশ। পরিবার দাবি করছে, আটকের সময় তার বিরুদ্ধে কোন মামলার বিষয়ে তাদের জানা ছিল না। পুলিশ বলছে, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার অভিযোগে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ছেলে তাজওয়ার এম আউয়ালকে পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
ব্যাপকহারে গ্রেফতারের বিষয়টিকে খুবই ‘আশংকাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, এটা একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে একটা প্রবণতা আছে অসংখ্য মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে রাখা হয়। তারপর সুবিধা মতো যাদের ধরার দরকার হয়, সেখানে একজন দুইজনকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মনে করি। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে অপরাধীকে ধরা। আক্রোশ থেকে কাউকে ধরে নিয়ে আসতে পারে না।

বিক্ষোভকারীদের দমনের জন্য বাংলাদেশ সরকার যাতে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করে সেজন্য আহবান জানিয়েছে আটটি মানবাধিকার সংস্থা। এসব সংগঠনের এক যৌথ বিবৃতিতে ৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য। এসব মানবাধিকার সংগঠনের মধ্যে রয়েছে - অ্যান্টি–ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিকটিমস, ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রেডরেস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।