| |
               

মূল পাতা জাতীয় আগস্টে ৪০৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৮, আহত ৭৯৪


আগস্টে ৪০৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৮, আহত ৭৯৪


রহমত নিউজ ডেস্ক     09 September, 2023     02:29 PM    


গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত ৩৭৮ জন এবং আহত ৭৯৪ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৪৪, শিশু ৫১। ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৪৬ জন, যা মোট নিহতের ৩৮.৬২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৫.২৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪.৬০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, অর্থাৎ ১৫.০৭ শতাংশ। এই সময়ে ১১টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত, ৯ জন আহত এবং ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩৭ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

আজ (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র : দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪৬ জন (৩৮.৬২%), বাস যাত্রী ১৮ জন (৪.৭৬%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-লরি আরোহী ১৭ জন (৪.৪৯%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-পুলিশভ্যান আরোহী ২১ জন (৫.৫৫%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-লেগুনা) ৫৬ জন (১৪.৮১%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু) ১৩ জন (৩.৪৩%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৪ জন (৩.৭০%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরণ : রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৯টি (৪১.৯৩%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি (৩৬.৭২%) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৫টি (১১.১৬%) গ্রামীণ সড়কে, ৩৭টি (৯.১৮%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০.৯৯%) সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ : দুর্ঘটনাসমূহের ৬৮টি (১৬.৮৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮২টি (৪৫.১৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৪টি (২৩.৩২%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৪২টি (১০.৪২%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৭টি (৪.২১%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-হ্যান্ডট্রলি  তেলবাহী ট্যাঙ্কার-চল্লিশ টনের লং ভেহিক্যাল-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৫.১৯%, যাত্রীবাহী বাস ১৭.৬১%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো-পুলিশভ্যান ৫.৫৬%, মোটরসাইকেল ২৩.০২%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-মিশুক লেগুনা) ১৬.৫৩%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাইসু-লাটাহাম্বা) ৪.৯৪%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩.৭০% এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৩.৪০%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা : দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৬৪৭টি। (বাস ১১৪, ট্রাক ৯৪, কাভার্ডভ্যান ২২, পিকআপ ১৫,  ট্রাক্টর ৩, ট্রলি ৭, লরি ৮, হ্যান্ডট্রলি ১, ড্রাম ট্রাক ৫, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৬, চল্লিশ টনের লং ভেহিক্যাল ১, সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ১, মাইক্রোবাস ১৪, প্রাইভেটকার ১২, অ্যাম্বুলেন্স ৭, পাজেরো ২, পুলিশ ভ্যান ১, মোটরসাইকেল ১৪৯, থ্রি-হুইলার ১০৭ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-স্কুলভ্যান-মিশুক-লেগুনা), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩২ (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র-টমটম-ডাইসু-লাটাহাম্বা), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২৪ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২২ টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ : দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ২.৯৭%, সকালে ২৭.২৯%, দুপুরে ২৬.৭৯%, বিকালে ১৫.৩৮%, সন্ধ্যায় ৫.৭০% এবং রাতে ২১.৮৩%।

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান : দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৫.৪৮%, প্রাণহানি ৩৩.৩৩%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১১.১৬%, প্রাণহানি ১০.৫৮%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.১৫%, প্রাণহানি ১৫.০৭%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৮৯%, প্রাণহানি ১৪.৮১%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৬৯%, প্রাণহানি ৬.৬১%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭১%, প্রাণহানি ৪.২৩%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৮%, প্রাণহানি ১০.৩১% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৭১%, প্রাণহানি ৫.০২% ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪৩টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে গাজীপুর জেলা’য় সবচেয়ে বেশি ৩১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও মৌলভীবাজার জেলায়। এই ৫টি জেলায় সামান্য মাত্রার ৯ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং ৩২ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের পেশাগত পরিচয় : গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে সাবেক এমপি ১ জন, পুলিশ সদস্য ৫ জন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৭ জন, চিকিৎসক ৪ জন, নার্স ১ জন, সাংবাদিক ৪ জন, প্রকৌশলী ২ জন, বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ও কর্মচারী ৪ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৯ জন, পরিসংখ্যান অফিসার ১ জন, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ১ জন, ঔষধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৮ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৩ জন, ইউপি সদস্যসহ  স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ১১ জন, পোশাক শ্রমিক ৮ জন, রঙ মিস্ত্রি ১ জন, পাটকল শ্রমিক ১ জন, মানসিক প্রতিবন্ধী ২ জন এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসা-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ : ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ : ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্য : গত জুলাই মাসে ৫১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৩ জন নিহত হয়েছিল। এই হিসাবে আগস্ট মাসে দুর্ঘটনা কমেছে ২১.১৩ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ৩৪.০৩ শতাংশ। তবে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমার এই হার কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। কারণ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। বর্তমানে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। অর্থাৎ অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনি দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন। যানবাহনে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে, যার মাধ্যমে গতিসীমা নজরদারি ও রেকর্ড করা যায়। পথচারী নিহতের ঘটনা ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের সড়ক ব্যবহারে অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

উল্লেখ্য, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপসহ পণ্যবাহী ভারী যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। ভারী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ দরকার। মোটরসাইকেল চালকদের বিরাট অংশ কিশোর-যুবক। এরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেল বেপরোয়া চালানোর সাথে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত গতিতে যানবাহন চালানোর জন্য গণমাধ্যমে উৎসাহমূলক জীবনমুখি প্রচারণা চালাতে হবে। একইসাথে গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত করে, যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।