| |
               

মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি এখনো দেশের মানুষ জাতীয় পাটির প্রতি আস্থা আছে : জিএম কাদের


এখনো দেশের মানুষ জাতীয় পাটির প্রতি আস্থা আছে : জিএম কাদের


রহমত নিউজ ডেস্ক     06 May, 2023     06:19 PM    


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে এখনো অপপ্রচার চলছে। কেউ বলছে আমরা কারো বি-টিম। আমরা সব সময় দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করছি। আমরা কখনোই কারো বি-টিম হতে কাজ করি না। কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে কাজ করি না। জাতীয় পার্টির রাজনীতি কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে নয়। অত্যাচার, নিপিড়ন ও জেল-জুলুম করা হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রতি। জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করা হয়েছে বারবার কিন্তু জাতীয় পার্টি এখনো টিকে আছে। দেশের মানুষ এখনো জাতীয় পাটির প্রতি আস্থা আছে। ক্ষমতা দখল করে লুটপাটের রাজনীতি আমরা বিশ্বাস করি না। যারা ক্ষমতায় আছে আর যারা ক্ষমতায় যেতে চিৎকার করছে তাদের সবার ইতিহাস একই। 

আজ (৬ মে) শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সুমন আশরাফ, আবু সাঈদ স্বপন, আমিনুল হক সাইদুল, এমএ আসাদুজ্জামান মবিন, আবুল হাসনাত আজাদ, নাসির উদ্দিন হাওলাদার নাসিম, আনিসুর রহমান বাবু, মোঃ রনি। উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. আব্দুস সালাম, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু প্রমুখ।

জিএম কাদের বলেন, পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। আমরা পাঁচ সিটিতেই জিততে চাই। আমাদের প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু ভোটারদের অনেক প্রশ্ন - ভোটাররা বলছে আমরা ভোট দিতে পারবো তো? আমরা ভোট দিলে সেই ভোট গণণা হবে তো? নাকি আওয়ামী লীগ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে? এটাই বাস্তবতা। এটা বুঝতে এখন খুব জ্ঞানী হতে হয় না। গ্রামের কৃষক থেকে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত এই প্রশ্ন করছে। যারা গণতন্ত্রের নামে বড় বড় কথা বলে, যারা মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলে, তারাই ভোটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে? রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সাধারণ মানুষ মনে করে আমরা ভোট দেই বা না দেই, সরকার সমর্থকরাই জিতে যাবে। মানুষের মনে শংকা, ভোট দিতে গেলে মার খেতে হবে কিনা, বাড়িতে হামলা হবে কিনা। শংকা ও হতাশা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দেশের মানুষকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করছে। এমন বাস্তবতা থেকে আমরা দেশকে উদ্ধার করতে চাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জনগণের পক্ষে থাকবো। জনগণ যা চায় আমরা তাই করবো সংসদ নির্বাচনে। আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। মানুষের ভাতের অধিকার দরকার হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না। মানুষ আধাপেট খেয়ে জীবন যাপন করছে, সামনে হয়তো আরো খারাপ দিন আসছে। যে সব দেশকে আমার খারাপ দেশ বলি, আমাদের অবস্থা এখন তাদের চেয়েও খারাপ। তাই ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভালো কাজ করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে আমরা তাদের সাথেই কাজ করবো। দেশ ও জাতির সাথে কাজ করবো এটাই আমাদের রাজনীতি। সামনের দিনগুলো হয়তো শুভদিন নয়। দেশ ও জাতির জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের দাবি তোলেন। তারা ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চায়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনে প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে নিজেদের লোক নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু যারা বিরোধী শিবিরে থাকেন তারা তত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষ নিয়ে মানুষের ভোটাধিকারের দাবি তোলেন। ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতায় গেলেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেহারা এক। ১৯৯৬ সালে আমরা মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছিলাম, আওয়ামী লীগও তখন ভোট বর্জন করেছিলো তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। বিএনপির মতই আওয়ামী লীগও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে ছঁক এঁকেছে। নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিতে প্রয়োজন মত সংবিধান সংশোধন করেছে। কেন কারচুপি করে নির্বাচনে জিততে হবে? কেন ভালো কাজ করে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় আসার কথা ভাবে না? বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সব সময় ক্ষমতায় থেকে সংবিধান কাটাকাটি করে নির্বাচনের ফলাফল নিজের পক্ষে নিতে চায়। আবার ক্ষমতার বাইরে থকালেই দল দুটি বলে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার চাই। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেছিলেন, আমরা আজীবন তত্বাবধায়ক সরকার চাই, তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন ভালো হতে পারে না। এখন আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধান ছাড়া নির্বাচন হবে না। আসলে, ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জনগণের রায়কে ভয় পায়। আবার ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও একই কাজ করবে। 

তিনি আরো বলেন, সংবিধানের মূলনীতি মানা হচ্ছে না। চারটি মূলনীতির মধ্যে প্রথম হচ্ছে গণতন্ত্র। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা এখন এক ব্যক্তির হাতে। আর, সমাজতন্ত্র তো অফিসিয়ালী ঘোষণা করে বর্জন করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিভেদ আছে, আওয়ামী লীগ বলে বাঙালী জাতীয়তাবাদ আর বিএনপি বলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এখনো জাতীয়তাবাদও ঠিক করা সম্ভব হয়নি। একমাত্র ধর্ম নিরপেক্ষতা আছে দেশে। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতা ভেঙে রাজনীতি করে। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কথা এলেই আওয়ামী লীগ বলে, জাতীয় পার্টি খারাপ। জাতীয় পার্টি নাকি ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করেছে। জাতীয় পার্টি কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-অবিচার করেনি। জাতীয় পার্টি কখনো ধর্মীয় ইস্যুতে বৈষম্য করেনি। জাতীয় পার্টির আমলে কখনো সংহিংসতা বা নির্যাতন হয়নি সংখ্যালঘুদের ওপর। সংবিধানের মূল নীতি কেউ মানছে না কিন্তু ক্ষমতার জন্য শুধু সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর জাতীয়তাবাদ মানছেনা, শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা বেঁচে আছে সাধারণ মানুষের জন্য। ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কোন কৃতিত্ব নেই। বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-অবিচার করেছে। কিন্তু দোষ দেয়ার সময় দুটি দলই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নাম উচ্চারণ করেন। কারন, পল্লীবন্ধু দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রধর্ম সকল সংখ্যালঘুদের সকল অধিকার সংরক্ষণ করেছে। রাষ্ট্রধর্মে কোথাও সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে কথা নেই।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। জাতীয় পার্টি ও পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার চালিয়েছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সব সময় জনগণের ইচ্ছের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। পল্লীবন্ধুকে যখন ক্ষমতা দেয়া হলো সেই সময়ের ক্ষমতাসীন বিএনপি ছাড়া সকল রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিলো। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তখন প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলো পল্লীবন্ধুর ক্ষমতা গ্রহণকে। পল্লীবন্ধু ও জাতীয় পার্টির প্রতিটি কাজে জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলণ ছিলো। পল্লীবন্ধু কখনোই জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করেননি। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি অনুযায়ী লেভেল প্লেইং ফিল্ডের জন্য তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলেন। ৯১৯১ সালে পল্লীবন্ধু ও জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। জেলে থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে ৫টি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর অপপ্রচার দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। তাই পল্লীবন্ধু এখনো দেশের মানুষের মাঝে বেঁচে আছেন।