| |
               

মূল পাতা জাতীয় বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমলে বাংলাদেশে লাগামছাড়া : সিপিডি


বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমলে বাংলাদেশে লাগামছাড়া : সিপিডি


রহমত নিউজ ডেস্ক     27 March, 2023     05:49 PM    


বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকায় বিশ্ববাজারে কমলে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। এছাড়া পণ্যের সংকটের সুযোগ নিয়ে সীমিত আমদানিকারকরা সেসব পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। গরুর মাংস, চিনি, সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারের তুলনায় বাংলাদেশে অনেকে বেশি। সবসময় যে বিশ্ববাজারকে দোষারোপ করবো সেটি নয়। কর কিছুটা কমিয়ে এনে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা রয়েছে। যেকোনো সংকটে হলে, তার সুযোগ নিয়ে বাজারে যে সীমিত প্লেয়ার আছে, সীমিত সংখ্যক আমদানিকারক যারা এক একটি পণ্য আমদানি করে, তারাই কিন্তু সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিয়ে হিসাব করলে ঢাকায় চারজনের পরিবারে খাদ্যের পিছনে ব্যয় হবে ৭১৩১ টাকা। সেখানে মাছ-মাংস যুক্ত হলে ব্যয় তিনগুণ বেড়ে ২২৬৬৪ টাকায় দাঁড়াবে। একজন শ্রমিকের মিনিমাম আয় এর চেয়ে অনেক কম।

আজ (২৭ মার্চ) সোমবার দুপুরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাজারের অব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজার প্রক্রিয়া ক্রমশই দুর্বল হচ্ছে। বাজারে কোনো ধরনের মেকানিজম কাজ করছে না। বাজারের ভেতর ছোটদের প্রভাব ও অংশগ্রহণ ক্রমেই সীমিত হচ্ছে। বড়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাড়ছে।

বাজেট প্রসঙ্গে ফাহমিদা খাতুন বলেন, এমন একটি সময়ে বাজেট প্রণীত হচ্ছে যখন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্যাংক খাতের তারল্যে ব্যাপক নিম্নগামী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তারল্য ৬৬ হাজার ৫৮১ টাকা কমে গেছে। কারেন্সি সার্কুলেশন ব্যাংকগুলোর বাইরে বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় করার প্রবণতাও কমছে। বাজারে অনিশ্চয়তা দেখছি। আর্থিক খাতে সুশাসনের কথা বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) সেটা বলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম নিম্নমুখী হলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। আমদানি ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকলেও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে উল্লম্ফন দেখতে পারছি না, এক ধরনের অবনমন দেখা যাচ্ছে। পোশাক খাতের রপ্তানি বাড়ছে, তবে পোশাকবহির্ভূত রপ্তানি কমছে। নেট ফরেন এইড ১২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। যদিও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। ট্রেড ক্রেডিটে নেতিবাচক প্রভাব দেখছি।

তিনি আরো বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দুঃসময়ের কারণ হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধকে আর অজুহাত করার সুযোগ নেই, ইউক্রেন যুদ্ধকে সবসময় একটা কারণ হিসেবে বলে এসেছি। সেটা আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়া কিংবা অর্থনীতির ওপর বিভিন্ন চাপের ক্ষেত্রে বলেছি। সেটা আর একমাত্র অজুহাত বললে হবে না। অর্থনীতির ভেতরে যে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধের ফলাফল কিছুটা থাকলেও বাকিটা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার ওপরে নির্ভর করছে। কীভাবে সংকটময় সময় পার করেছে। অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, সুশাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করার কারণে যে দুর্লতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটাই মূল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইরের প্রতিঘাত এখন বড় বিবেচ্য বিষয়, কিন্তু মূল নিয়ামক নয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে সেটা করতে গেলে সরকারকে বেশকিছু শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচনের আগের বছর সেটা নেওয়া কতটা সম্ভব হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। রাজস্ব আহরণে দুর্বলতা রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ ৭৫ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে। আমরা গত ডিসেম্বরে বলেছি, এর পরিমাণটা ৬৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। চলতি ও আগামী বাজেটে রাজস্ব আহরণের গতি বাড়ানো সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতির কথা মাথায় রেখে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো, পোশাকখাত বাদে অন্য রপ্তানি খাতে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, সিগারেট-কোমল পানীয়তে কর বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।