আমাদের খাদ্যব্যবস্থাকে শিল্পে রূপ দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, কৃষি যেমন দেশের একটি বড় শিল্পে রূপ নিয়েছে, তেমনি আমাদের খাদ্য বা খাদ্য ব্যবস্থাকে শিল্পে রূপ দিতে হবে। বৈচিত্র্যময় খাদ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে পারলে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষেরর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার পাওয়া সহজ হবে। আমাদের সরকার দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আর এটা সফল করার জন্য প্রয়োজন আজকের তরুণ সমাজের অংশগ্রহণ।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে  সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহে উৎসাহিত করতে এবং সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত ‘ফুড ফ্রন্টিয়ার্স ২.০’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সহযোগিতা করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রেশন এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম।  আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশের উন্নয়নে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। চাকরির পেছনে না ঘুরে চাকরি ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আর এজন্য নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। আর কৃষিতে স্বল্প বিনিয়োগে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আজ বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে ছোট্ট বাংলাদেশ কৃষির বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ স্থানে এসেছে। এর মূল কারণ আমাদের শিক্ষিত তরুণরা আজ কৃষিতে তথা খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে। একটা সময় দেশ যখন খাদ্য ঘাটতিতে ছিল, তখন আমরা চিন্তা করেছি দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করার জন্য। এভাবে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের প্রধান খাদ্য ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আগামী দিনে দেশের বাড়তি জনসংখ্যার জন্য চিন্তা করে এ ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। এখন আবার নুতন করে ভাবছি দেশের খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতাই যথেষ্ট নয়, সবার জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা চাই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশে স্কেলিং আপ নিউট্রিশনের কান্ট্রি ফোকাল পয়েন্ট কাজী জেবুন্নেসা বেগম। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- গেইনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড আশেক মাহফুজ, সান বিজনেস নেটওয়ার্ক, গেইনের ভারপ্রাপ্ত কোঅর্ডিনেটর এম মাহমুদুল হাসান, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. লুৎফর হাসান, জাতীয় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল গনি শোভন প্রমুখ।

এদিন বিজয়ীদের তাদের উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়ন, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মোট ৩৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের অনুদান ও প্রি-সিড তহবিল দেওয়া হয়। তিন ক্যাটাগরিতে ৫ জন উদ্যোক্তা এবং বিশেষ একজন ব্যক্তিকে পৃথকভাবে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তিন ক্যাটাগরির মধ্যে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক মডেল’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী এগ্রিভেঞ্চার পেয়েছে ১০ হাজার মার্কিন ডলার। রানার আপ ফার্মজিলা পেয়েছে ৫ হাজার মার্কিন ডলার। ‘যুগান্তকারী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ধারণা’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ীরা হলেন কুক্যান্টস (চ্যাম্পিয়ন পেয়েছে ৮ হাজার মার্কিন ডলার) ও কৃষি স্বপ্ন (রানার আপ পেয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার)। এছাড়া, ‘উদ্ভাবনী বিপণন প্রচারাভিযান’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন কন্যা ওয়েলবিয়িং (চ্যাম্পিয়ন ৫ হাজার মার্কিন ডলার)। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল পুষ্টিকর খাদ্য পণ্যকে নিম্ন বা সীমিত আয়ের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্যে উদ্ভাবনী উপায়গুলি চিহ্নিত করা। পাশাপাশি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা আনয়ন ও সামাজিক উদ্যোগে ব্যবসায়িক দক্ষতা আনতে তরুণ উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা তৈরি করা। একই সঙ্গে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য পণ্যের চাহিদা তৈরি করা ও উদ্ভাবনী বিপণন ক্যাম্পেইন চিহ্নিত করা।