| |
               

মূল পাতা জাতীয় রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনীকে ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করলেন প্রধানমন্ত্রী


রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনীকে ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করলেন প্রধানমন্ত্রী


রহমত নিউজ ডেস্ক     08 February, 2023     12:04 AM    


রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনীকে জাতির জন্য একটি ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যার মাধ্যমে জনগণ দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।তিনি (আব্দুল হামিদ) রাষ্ট্রপতি হবেন না (ভবিষ্যতে) কারণ তিনি সংবিধান অনুযায়ী পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু, তিনি আমাদেরকে একটি অমূল্য সম্পদ দিয়েছেন (তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ এর মাধ্যমে)। আমরা তাঁর জীবনের সেই অংশ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি যা তিনি আত্মজীবনীতে তুলে ধরেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে তাঁর বাকি জীবন, বিশেষ করে যখন তিনি অবসরে যাবেন তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে যে সময় অতিবাহিত করেছিলেন তা লিখে রাখার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব  কথা বলেন। একটি বই বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি’ শিরোনামের আত্মজীবনী এবং আরেকটি বইয়ের দুটি অংশের সংকলন ‘স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা’ শিরোনামে রাষ্ট্রপতির ভাষণ। আলোচনা পর্ব শেষে আগত বিশিষ্ট অতিথি ও সংসদ সদস্যদের সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজ ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, তাঁর সহধর্মিনী রাশিদা খানম, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রবীণ সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন অঙ্গনের  বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি ও তাঁর পত্নী তাঁকে স্বাগত জানান।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আর রাষ্ট্রপতি থাকবেন না, কিন্তু তিনি অমূল্য সম্পদটা আমাদের দিয়ে গেলেন তাঁর স্মৃতিকথার ভেতর দিয়ে। তাঁর জীবনের যে অংশটা তিনি উল্লেখ করেছেন এটা আমি মনে করি যে, একজন রাজনীতিবিদের জীবন থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনেক কিছু আমরা জানতে পারবো। তাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে, তাঁর পরবর্তী জীবনটা নিয়েও যেন তিনি একটু লিখে যান। আর বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি হিসেব তাঁর অভিজ্ঞতাটা। কারণ তাঁর আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হয়েছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর যে দেশপ্রেম এবং দায়িত্বরোধ সেটারই তিনি প্রকাশ ঘটিয়েছেন। অত্যন্ত সার্থক তাঁর জীবন, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি তিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এবং দেশের গণমানুষের কল্যাণে অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। কাজেই তিনি একটা অমূল্য সম্পদ আমাদের দিয়ে যাচ্ছেন তাঁর এই লেখনির মধ্যথেকেই সেটা উঠে এসেছে এবং যখন অবসরে যাবেন তখন পরবর্তী অংশটাও লিখবেন সেটাই সকলের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি থাকলো মহামাণ্যের কাছে। তিনি রাষ্ট্রপতির পাশে থাকার জন্য এবং প্রেরণা দেয়ার জন্য তাঁর স্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা। আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই তাঁর ভূমিকা রয়েছে। সেই পাকিস্তান আমল থেকেই শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতি নিয়েই তিনি বইটি লিখেছেন। তাঁর জীবনের অনেক কথাই বইটিতে আছে (আমার জীবননীতি আমার রাজনীতি)। তাঁর চমৎকার হাস্যরসে ভরা জীবনী গ্রন্থটি পড়লে অনেক মজার মজার তথ্য পাওয়া যাবে। তাঁর স্কুল জীবনের স্মৃতি সেই হাওড় অঞ্চলে বসবাস। আসলে বাংলাদেশের কাদামাটি মেখেই তিনি বড় হয়েছেন। সেখানকার শ্যামল সুন্দর পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন। হাওড়ের কঠিন জীবনের সাথে লড়াই করেই তিনি বড় হয়েছেন। তিনি একজন স্বার্থক পিতা, সার্থক স্বামী। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন যেমন সার্থকতায় ভরপুর তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অল্প বয়সে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৭০ সালে এবং এরপর থেকে সাত সাতবার তিনি সংসদ সদস্য। ঐ হাওড় অঞ্চলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে কেউ কখনও পরাজিত করতে পারেনি। 

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচনের অনেক চেহারা আমরা দেখেছি। ভোট ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি- অনেক কিছুই আমরা দেখেছি। কিন্তু এই জায়গাটা কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারেনি। কারণ তাঁর সঙ্গে ছিল মাটি ও মানুষের যোগাযোগ। এইযে মানুষের আস্থা অর্জন করা, বিশ^াস অর্জন করা, মানুষের কাছে যাওয়া এবং মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়া এটাই তাঁর সবথেকে বড় গুণ। তিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন কিন্তু একজন সাদাসিদে স্বচ্ছ বাঙালির মতই তিনি জীবন যাপন করেছেন। একটা সাদাসিদে জীবন যাপনের মধ্যদিয়ে সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা, এটা তাঁর ছিল। যেটাকে একটি বড় গুণ বলেই আমি মনেকরি।আজকে তিনি নিজের স্মৃতিকথা যে রিখে গেছেন এবং যে পর্যন্ত লিখেছেন সেক্ষেত্রে আমি বলবো যে এর পরবর্তীটাও লেখা দরকার। কারণ আমরা রাজনীতি যারা করি অনেকেই স্মৃতিকথা লেখেনা। আমাদের দেশের যে ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সংগ্রামের ইতিহাস, যে সংগ্রাম বার বার এসেছে। সেই পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এরপর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরে যে হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের যে রাজনীতি, তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম- এই সংগ্রামগুলোর সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। গত দুই টার্ম তিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যখন আমরা বিরোধী দলে তিনি সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি ডেপুটি স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন। স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে  সংসদকে অত্যন্ত প্রানবন্ত রাখতেন। কারণ তাঁর একটা গুণ আছে বক্তৃতার মধ্য দিয়েও তিনি মানুষের সাথে ভালভাবে মিশে যেতে পারেন।