| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ‘অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হকসহ গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি দিতে হবে’


১৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও ১১ মার্চ ঢাকায় উলামা সম্মেলন করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

‘অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হকসহ গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি দিতে হবে’


রহমত নিউজ ডেস্ক     07 February, 2023     06:38 PM    


বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী বলেছেন, আমাদের সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বি-বাড়ীয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাওলানা মঈনুল ইসলামসহ শীর্ষ কয়েকজন আলেম প্রায় ২২ মাস যাবত কারাগারে বন্দি রয়েছেন। একজন দাগী আসামির মতো হাতে হ্যান্ডকাপ, মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পরিয়ে কোমরে রশি বেধে আলেম-উলামাদের আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়। যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এতে তারা শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। এটা সম্পূর্ণ জুলুম ও অন্যায়। সরকারের এ আচরণে দেশের মানুষ ক্ষুদ্ধ। আলেমদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ সরকারের ক্ষতি ঢেকে আনবে। আদালতে আলেমদের অসসম্মানজনকভাবে আনা-নেয়া বন্ধ করুন। অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হক সহ গ্রেফতারকৃত আলেমদের মুক্তি ও সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হয় রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আজ (৭ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার  সকাল ১০ টায়  রাজধানীর গুলিস্তান পার্কস্থ কাজী বশির মিলনায়তনের বাহিরের চত্তরে মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণের দাবী এবং জাতীয় পাঠ্যক্রমে ইসলামী শিক্ষা সংকোচনের প্রতিবাদে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী বলেন, জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও ইসলম বিরোধী শিক্ষা সংযোজন এবং ইসলামী শিক্ষা সংকোচন করার অপরাধে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করতে হবে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম বিরোধী পাঠ্যপুস্তক চলতে পারে না। বর্তমান পাঠ্যপুস্তক বাজেয়াপ্ত করে সংশোধিত নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে হবে। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আদর্শ নৈতিকতা সম্পূর্ণ নাগরিক সৃষ্টি হচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থীরা অনৈতিক ও অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। মা বাপকে হত্যা করার মত জগণ্যতম পাপ করতেও তারা ইতস্তবোধ করছে না। আমরা মনে করি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষা না থাকার কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রে অনৈতিকতার সয়লাভ হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও পারিবারিক বন্ধন প্রতিনিয়ত হৃাস পাচ্ছে। তাই সরকারকে বলবো শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের দিকে কোনো দৃষ্টি পাত করছে না। মানুষ জীবন পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সমন্বয় নেই। চাল, ডাল, তেলসহ সকল পণ্যের দাম আকাশচুম্বী যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। আবার গ্যাস বিদ্যুতের দাম ও বার বার বাড়ানো হচ্ছে। মানুষ কিভাবে সংসার চলাবে তা নিয়ে রীতিমত হাপিয়ে উঠছে। সামনে পবিত্র রমজান মাস আসতেছে তাই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে, বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা নিন। মানুষকে বাঁচতে দিন। খেলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজ ও রাষ্ট্রে কেউ চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করার সাহসও পাবে না। সুদ-ঘুষ অনৈতিক কর্মকা- সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারবে। তাই আমাদেরকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও তিতিক্ষার নজরানা পেশ করতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভঙ্গুর। এখন আর মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে চায় না। যার প্রমাণ কয়েক দিন আগে উপনির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের চিত্র যা গণমাধ্যমে এসেছে। দেশের মানুষ নিরপেক্ষ স্বচ্চ ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পরিবেশ দেখতে চায়। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজীজ ও সংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালীর যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব এডভোকেট আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সদস্য মাওলানা আবুল কালাম, নায়েবে আমীর মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মুফতী সাঈদ নূর, যুগ্ম-মহাসিচব মাওলানা মাহবুবুল হক, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল, মুফতি ওজায়ের আমীন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নিয়ামতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা হারুনুর রশীদ ভূইয়া, সহ-বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক মাওলানা শরীফ হোসাইন, নির্বাহী সদস্য মাওলানা সাব্বির আহমদ উসমানী, মাওলানা রুহুল আমীন খান, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল মুমিন ও ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি মুহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

১০ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দেশব্যাপী ও ঢাকার বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ এবং ১১ মার্চ ঢাকায় জাতীয় উলামা সম্মেলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। সমাবেশে নিন্মোক্ত ১০ দফা দাবী পেশ করা হয় : আল্লাহ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান জাতীয় সংসদে পাশ করতে হবে, কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা ও তাদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে, কারাবন্দী সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ আলেম-উলামাদের দ্রুত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ইসলাম বিরোধী ও বিবর্তনবাদসহ বিতর্কিত শিক্ষা যুক্ত পাঠ্যপুস্তক বাজেয়াপ্ত করে সংশোধিত নতুন পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে হবে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সকল দলের অংশ অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে, শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে, সকল রাজনৈতিক দলের নির্বিগ্নে সভা সমাবেশ করার সুযোগ দিতে হবে, জনগণের মৌলিক অধিকার ও শান্তি সুখি ও সম্মৃদ্ধশীল দেশ গড়ার লক্ষ্যে খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে শরীক হওয়ার আহ্বান।

সমাবেশে গণসেবা আন্দোলন থেকে মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদী, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা নুরুল আমীন এবং জাতীয় পার্টি থেকে মুফতী মোস্তফা আল-ফারুকী বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে যোগদান করেন।