| |
               

মূল পাতা রাজনীতি বাম দল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি নাই : মেনন


পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি নাই : মেনন


রহমত নিউজ ডেস্ক     20 December, 2022     05:07 PM    


বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পাহাড়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এই জন্য নয় যে পাহাড়িরা সেটিকে অনিরাপদ করে তুলেছে। এটি এ জন্য যে সেখানে জঙ্গিগোষ্ঠী ট্রেনিং ক্যাম্প তৈরি করেছে। এরা দেশের অভ্যন্তরে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এটি প্রমাণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি শুধু পার্বত্যবাসীদের জন্য নয়, সব বাঙালি ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রয়োজন। এই শান্তিচুক্তির জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই ইউনেসকো শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি নাই।

আজ (২০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত গণমিছিল শেষে গণসমাবেশে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্য দেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হোসেন প্রিন্স, বাসদ সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য ড. গন্ধরাজ মাহাত, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রুপা কবির, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল প্রমুখ

মেনন বলেন, ‘এ লড়াইকে যদি আমরা বাংলাদেশের মূল ধারার লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি, তাহলে আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারবো না। একসময় আমরা এটি পেরেছিলাম। আমরা পেরেছিলাম বলে ১৯৯১-তে যখন বিএনপি সরকার গঠন করে, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, তার জন্য জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং এর পেছনে কাজ করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার সংরক্ষণ কমিটি। তখন মনে হয়েছে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যেন শুধু পার্বত্য মানুষের। কিন্তু দায়িত্ব শুধু পাহাড়ি মানুষের নয়, এই দায়িত্ব বাংলাদেশের সব মানুষের, সব গণতান্ত্রিক শক্তির। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিপূর্ণ হলে কেবল বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ হয় এমন নয়, বাংলাদেশ অনিরাপদ হয়ে পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হলে কী হবে, তা আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। দেশের অভ্যন্তরে যেই জঙ্গিদক্ষতা, তাদের কিছু অংশ সেটার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি হবে উপজাতি অঞ্চল। এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা হবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই আমরা জানি সেখানে ডেমোগ্রাফি পাল্টে গেছে, বাংলাদেশ এখানে সংখ্যাধিক্য জনগোষ্ঠীতে পরিণত হওয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। এটাই বলা হয়েছিল পাহাড়ে যারা গেছে, সমতল থেকে তাদের আবার সমতলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। যে উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল, এর ফলে ওই পার্বত্যবাসীরা এখন ক্রমাগত সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম সংগ্রাম সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় চিনিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু এই বিজয়ের রং গুটি কয়েক মানুষের মাঝে পৌঁছালেও, সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মাঝে পৌঁছায়নি। যে কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি রয়েছে। এখনও ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন, শোষণ, নিপীড়ন অব্যাহত আছে। গত ২৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনও সেখানে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করে। শুধু রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমাদের দাবি না রেখে সারা দেশের মানুষের কাছে উত্থাপন করতে হবে এবং তাদের সচেতন করতে হবে। আমরা মনে করি পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। সারা দেশে গরিব, কৃষক, শ্রমিকের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন চলছে, তার একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের দাবি। সরকার বারবার বলে অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু কতটুকু হয়েছে? অন্য জেলা প্রশাসকরা যেভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করেন, ঠিক একই শাসন সেখানে রয়েছে। তাহলে সেখানে বিশেষ শাসন কোথায়? বরং সেখানে আলাদা করে সামরিক শাসন বহাল রয়েছে।

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ককাসের আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে আদিবাসী শব্দটা নেই। কিন্তু আমরা পার্লামেন্টে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ‘ককাস’ তৈরি করেছিলাম। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছিলেন। আমরা সংখ্যায় ছিলাম কম। কিন্তু আমাদের দাবিটা ছিল শক্তিশালী। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাইরের জনগোষ্ঠীকে পাহাড়ে বসতি দিয়ে পাহাড়িদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর করার প্রয়াস, আর অন্যদিকে শান্তিচুক্তি করা, এটি একধরনের দ্বিচারিতা।’

সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক  খায়রুজ্জামান পাঁচ দফা উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি বিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ করতে হবে; পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে; পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারতীয় প্রত্যাগত জম্মু শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; দেশের মূল স্রোতোধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।