| |
               

মূল পাতা জাতীয় সংকট মোকাবিলায় আমদানিতে কর ছাড়সহ মন্ত্রিসভার ৬ নির্দেশনা


সংকট মোকাবিলায় আমদানিতে কর ছাড়সহ মন্ত্রিসভার ৬ নির্দেশনা


রহমত নিউজ ডেস্ক     14 November, 2022     04:55 PM    


আগামী বছরের সংকট মোকাবিলায় খাদ্য আমদানিতে উৎসে কর ছাড় দেওয়াসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশে দক্ষ জনবল পাঠানো, রেমিট্যান্স বাড়ানো, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, খাদ্য মজুত স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রাখার বিষয়ে মন্ত্রিসভা নির্দেশনা দিয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়, এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এটা (বার্ষিক প্রতিবেদন) মূলত গত ৩০ জুন পর্যন্ত তথ্য দিচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিস্তারিত ও আনুষঙ্গিক বিষয় মন্ত্রিসভায় এসেছে। আজ (১৪ নভেম্বর) সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূল কথাটা ছিল বৈশ্বিক যে অবস্থাটা আসছে তাতে আমাদের সংকট দেখা যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বিশ্বের অর্থনৈতিক অ্যানালাইসিস যেটা বলছে যে, তিনটি কারণে ২০২৩ খুবই একটা সংকটের বছর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ যেহেতু রেট অব ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি করেছে, এটা একটা। দ্বিতীয়ত কোভিডের রিকভরিটা হওয়ার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে যে উন্নতি হচ্ছিল সেটা আবার নেগেটিভের দিকে চলে যাচ্ছে।তিন নম্বর আরেকটা কারণ তারা বলছে যে, চীন উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন কম করছে। যেটা বিশ্ববাজারকে প্রভাবিত করছে। এ তিনটি বিষয় সামনে রেখে আন্তর্জাতিক যে বিশ্লেষণগুলো আসছে, এ তিনটি কারণে ২০২৩ একটি সংকটের বছর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সবাইকে একটু এ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে।ফাইন্যান্সিয়াল টাইমে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে।

তিনি বলেন, বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। মন্ত্রিসভা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন- প্রথম হলো সর্বাবস্থায় আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। যে যতই খাদ্য আমদানির কথা বলি এ ক্রাইসিসটা থাকবেই। যদিও ইউক্রেন ও রাশিয়াকে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে যে, খাদ্যের ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না। কিন্তু স্টিল এটা ম্যাটার করবে। ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে যেসব দেশ ঋণ নিয়ে কাজ করে বা যাদের আমদানি বেশি, তাদের দুদিক থেকে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা যখন টাকা দিচ্ছি বেশি দিচ্ছি আবার নিচ্ছি কম পাচ্ছি। এ জন্য আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এটার একটা সম্ভাবনাও আছে। আমরা পাঁচ-ছয় মাস ধরে দেখছি কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে বেশকিছু নতুন জাত এসেছে। এগুলো ইতোমধ্যে পরীক্ষিত, এগুলো ধীরে ধীরে রিপ্লেস করলে আগামী এক থেকে তিন বছরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাবে।দ্বিতীয়ত হলো যারা বিদেশে যাচ্ছে আমরা যেন অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠাই। তাহলে তাদের অনেক বেশি বেতনে কাজ করা সম্ভব হবে। যেসব দেশে পাঠাবো সেসব দেশের চাহিদা অনুসরণ করে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হয়, তারা যাতে সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট পায়, না হলে তাদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের কোনো দাম থাকবে না। রেমিট্যান্স বাড়াতে মন্ত্রিসভা কিছু নির্দেশনা দিয়েছে, ‘সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে যে, রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে এখন আর কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটা হ্যান্ডেল করবে, যারা পাঠাবে তাদের সঙ্গে কীভাবে তাদের সুবিধা দেওয়া যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো ক্লিয়ার করেছে বা করবে। গভর্নরের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাইরে থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠাবেন তাদের যেমন অনেকগুলো কলাম ফুলফিল করতে হয়, সেখানে তাদের কমফোর্ট (শর্ত শিথিল) দেওয়া যায় কি না। নাম ও এনআইডি দিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা বা এক-দুই-তিন-চারটা আইটেম দিয়ে পাঠানো যায় কি না- বাকিগুলো ডাটাবেজ থেকে নেওয়া যায় কি না? তাহলে বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। চার নম্বর হলো সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। এ জন্য বিনিয়োগের শর্ত আরও শিথিল করা যায় কি না? এ বিষয়ে কাজ চলছে। যাতে বিনিয়োগকারী শুধু বিডাতেই (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যাবে। সেখানেই তিন-চারটা উইন্ডো থাকবে। সিটি করপোরেশন ও এনবিআরে যেন যেতে না হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তো বলেই দিয়েছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত তাদের কাছে যেতে হবে না। এটা ভালো একটা উদ্যোগ। বিডা-ই এর অনুমোদন দিতে পারবে। পাঁচ নম্বরে বলা হয়েছে, খাদ্য মজুতকে সবসময় সন্তোষজনক অবস্থায় রাখতে হবে। এখন আমাদের মজুত সন্তোষজনক। বেসরকারি খাতকেও ১৫ লাখ টন খাদ্য আমদানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, বড় বড় দেশ যারা বিভিন্ন সাপ্লিমেটারি ফুড যেমন তেল বা মসলা রপ্তানি করে তাদের সঙ্গে সরাসরি আমদানিকারকদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে তৃতীয় পক্ষ ছাড়া সরাসরি আমদানি করা যায় কি না, সেই বিষয়ে বলা হয়েছে। সরাসরি গেলে কম দামে পাওয়া যাবে, যা আমাদের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।ট্যাক্স কমফোর্টের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমাদের খাদ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আলোচনা করেছেন যে, উৎসে কর সংক্রান্ত কিছু বিষয় আছে, এগুলো দিতে হয়। এ বিষয়ে এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে শিগগির যেন সন্তোষজনক ও কমফোর্টেবল একটা প্রভিশনের মধ্য দিয়ে চলে যায়। যারা খাদ্য আমদানি করেন তারা যাতে একটা সুবিধাজনক জায়গায় আসতে পারে।