| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ৪ দাবিতে ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক


৪ দাবিতে ঢাবি উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিলো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক


রহমত নিউজ     18 October, 2022     09:01 AM    


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাই এখন আর নেই। মূল দায়িত্বে আছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের ধারাবাহিক হামলা-মামলা এবং তাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চার দফা দাবি জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। চার দফা দাবি  হলো:- ১. উপরেল্লিখিত ঘটনাগুলোর পূর্ণ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত ছাত্রদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা। ২. ভবিষ্যতে এই ধরনের সহিংস ঘটনা যাতে আর সংঘটিত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ৩. প্রক্টোরিয়াল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ শিক্ষক গোলাম রাব্বানীকে অবিলম্বে অপসারণ করে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একজন নিরপেক্ষ শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান। ৪. হলগুলিকে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দখল মুক্ত করে শিক্ষকদের দায়িত্বে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সংগঠনের পক্ষে স্মারকলিপি দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সংঘটিত কয়েকটি সহিংস ঘটনায় এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন বোধ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সর্বোচ্চ ব্যক্তি হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত ছয় মাসে তিনটি বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা গেছে বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিসোটা, লোহার পাইপ, রড জাতীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে এবং নির্মম ভাবে পিটিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মীরা। এই বছরের মে মাসে ছাত্রদলের এক সমাবেশে ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের দুই দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করে দেয়া হয়। এই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো নেয়নি উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা এক মামলায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। মে মাসের ওই ঘটনার পর ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে দেয়া হয়। এরপর ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটির নেতারা ২৭শে সেপ্টেম্বর আপনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে ফুল ও মিষ্টি নিয়ে দেখা করতে আসেন। উপাচার্যের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গনতন্ত্র তোরণের সামনে তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। যথারীতি এই ঘটনাতেও এখনো পর্যন্ত দায়ী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরপর, মাত্র কয়েকদিন আগে, অক্টোবরের ৭ তারিখ শুক্রবার বিকেলে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় নির্মম হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। আহত ছাত্ররা ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে সেখানেও পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা । পুলিশ এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মীকেই গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আর ছাত্রলীগই আবার ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। মাত্র কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ নিপীড়নমূলক ঘটনার বিচার বা দোষীদের শাস্তি দেবার বিষয়ে আপনার অধীনস্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন উদ্যোগ এখনো আমাদের নজরে আসে নি। উল্লিখিত সংঘাতমূলক ঘটনার নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যেই ব্যক্তিটির সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখার কথা সেই ব্যক্তিটি হলেন প্রক্টর এবং তার প্রক্টোরিয়াল টিম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রক্টরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৮ সালের কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময় থেকেই দেখা গেছে যে ছাত্রলীগ সংঘটিত নিপীড়ন আর নির্মম অত্যাচারের সব ঘটনাতেই নিপীড়নকারী ছাত্র নামধারী গুন্ডাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কোন উদ্যোগ তিনি কখনো নেননি। উল্টো নির্যাতিত শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানিতে ছাত্রলীগের সহযোগী হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গত কয়েকমাসের ঘটনাতেও আমরা এর কোন ব্যতিক্রম এখনো দেখিনি।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, শুধু প্রক্টর নন, বর্তমানের সব ঘটনা পরম্পরা দেখে মনে হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রিত কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থাই এখন আর নেই। এখানে নামে মাত্র আছেন উপাচার্য, নামে মাত্র আছেন প্রভোস্ট, নামে মাত্র আছেন প্রক্টর। মূল দায়িত্বে আছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ইচ্ছে মতন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো চলছে, সেইখানে ছাত্রদের নামে সন্ত্রাসীদের লালন পালন করা হচ্ছে এবং যখন প্রয়োজন তখন এই সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের দমন করা হচ্ছে। কিছু কিছু হলের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা হয় এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন অথবা সক্রিয় ভাবে সহযোগিতা করছেন। গত অগাস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এক শিক্ষার্থীকে তার মেসেঞ্জার গ্রুপে দেওয়া এক মেসেজকে কেন্দ্র করে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ। পরে পুলিশ তদন্ত করে কোন অভিযোগের পক্ষে প্রমান না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন ছাত্রের সবচেয়ে বড় অভিভাবক। সেই অভিভাবক একজন নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের এই ক্যাম্পাসে কি বিন্দুমাত্র নিরাপদ বোধ করবে? আর গত কয়েকমাসের এইসব ঘটনা প্রবাহ পুরো দেশের সামগ্রিক রাজনীতি থেকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেও মনে হচ্ছে না। পুরো দেশ জুড়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর উপর যেরকম নির্বিচারে আক্রমন চালানো হচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনাগুলো ঘটতে পারে। সেইক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই ক্যাম্পাসে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের উপর এই নিপীড়ন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জ্বার আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আপনাদের মতন শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত মানহানিকর। আমরা আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরপর প্রশাসনের উদ্যোগ পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমাদের কর্মসূচীর পরবর্তী কার্যক্রমের ঘোষণা দেয়া হবে।