| |
               

মূল পাতা জাতীয় মিয়ানমার নিয়ে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ


মিয়ানমার নিয়ে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ


রহমত ডেস্ক     20 September, 2022     09:34 PM    


রোহিঙ্গাদের যাতে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিতে না হয়, সে কারণে মিয়ানমার সরকার সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এই অভিমত জানিয়ে সেনাশাসিত দেশটি যাতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করে ফায়দা লুটতে না পারে, সে জন্য বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। আজ (২০ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি সহযোগিতার এই আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আরব বিশ্ব এবং চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ জন রাষ্ট্রদূত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম অংশের ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম এসব বিদেশি কূটনীতিককে ব্রিফ করেন।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে নতুন করে গোলাগুলি শুরু হয়। ওই দিন রাতে একটি মর্টার শেল এসে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে। এতে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। রাষ্ট্রদূতকে একটি প্রতিবাদলিপি দেওয়া হয়। এই প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে এই অস্থিতিশীলতার পেছনে আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা দায়ী। মিয়ানমার সেনাবাহিনী নয়, আরাকান আর্মির ছোড়া মর্টারের গোলা বাংলাদেশের সীমান্তে পড়েছে।

তবে তাদের এই বক্তব্য মানতে পারছেন না, নৌবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে কাজ করে আসা মো. খুরশেদ আলম। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ হলো পশ্চিমে আর আরাকান আর্মি দক্ষিণে। তাদের গোলা কোনোভাবেই বাংলাদেশে আসার কথা নয়। গোলা তো পশ্চিমে আসার কথা না। কাজেই এটা ভৌগোলিকভাবে হয় না, যদি কেউ ইচ্ছে করে না করে। মিয়ানমার ইচ্ছে করে করুক বা না করুক, এটা এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে ফেলবে। ইচ্ছা করে আমাদের এই সংঘাতে জড়ানোর যে প্রচেষ্টা, আমরা বলছি, আমরা সেটাতে জড়িত হব না। এটা আমরা তাদের অবহিত করলাম। রাষ্ট্রদূতদের বলেছি, আপনারা যে অ্যাকশন নেওয়ার মনে করবেন, সেটার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আমরা সর্বস্তরেই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেছি। যাতে মিয়ানমার বুঝতে পারে এ রকম একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের জন্যও বিপজ্জনক। বাংলাদেশ এটা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যে প্রাণহানি ঘটছে, এ পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমেই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে কোনো গোলা যেন এপাশে না আসে সে জন্য তাঁকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। পরে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকেও একইভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছিল, মিয়ানমারের গোলা যেন বাংলাদেশে না আসে, সে বিষয়ে তাঁরা যেন ভূমিকা রাখেন। আজকে অন্যান্য যেসব রাষ্ট্রদূত এসেছেন, তাঁদেরও একই কথা বলেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। আসলেই আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করি নাই, যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের জনগণ যারা সীমান্তের ভেতরে আছে তাদের জানমালেরর নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। তারা গরু–বাছুর নিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, তারা ধানখেতে যেতে পারবে না, তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না; এটা তো হতে দেওয়া যায় না।  এ কারণে রাষ্ট্রদূতদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যাতে করে মিয়ানমার এ অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে ফায়দা লুটতে না পারে, যাতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে না হয়। আমরা এটাও বলে দিয়েছি, আমরা চরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করতেছি এবং আমরা কোনোভাবেই চাই না এখানে জড়িত হতে। এখানে জড়িত হলে মিয়ানমার একটা সুযোগ পাবে। রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার বিষয়ে একটা অজুহাত পাবে। সে রকম কোনো অজুহাত মিয়ানমারকে দিতে চায় না বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা মিয়ানমার ইস্যুতে ঢাকার অবস্থানের প্রশংসা করেছেন। আমরা সবাইকে (দূতদের) বলেছি। মোটামুটি সবাই (দূতেরা) এসেছিলেন। তাঁদের যে মতামত, তাঁরা প্রশংসা করেছেন খুবই। আমরা যে চরম ধৈর্য দেখাচ্ছি এবং আমরা যে মিয়ানমারের কোনো উসকানিতে পা দিচ্ছি না, তাঁরা এটার প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের রাজধানীতে তাঁরা জানাবেন। যাতে ভবিষ্যতে তাঁদের যদি করণীয় কিছু থাকে, বিশেষ করে জাতিসংঘে কিছু করার থাকলে—তাঁরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আজকে অন্যান্য যেসব রাষ্ট্রদূত এসেছেন, তাঁদেরও একই কথা বলেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। আসলেই আমরা ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করি নাই যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের জনগণ যারা সীমান্তের ভেতরে আছে, তাদের জান-মালের নিরাপত্তা ব্যাহত করবে। তারা গরু-বাছুর নিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, তারা ধানখেতে যেতে পারবে না, তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না; এটা তো হতে দেওয়া যায় না।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসিয়ানের সঙ্গে গতকালের আলোচনার তুলনায় আজকের আলোচনা অনেক বেশি প্রাণবন্ত ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে কয়েকজন কথা বলেছিলেন। সেখানে আজকে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডেসহ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বেশ কয়েকটি বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এবং বাংলাদেশের চিন্তাভাবনা ও অবস্থান সম্পর্কে খোলামেলা জানতে চেয়েছিলেন। পশ্চিমের দুটি দেশের রাষ্ট্রদূত ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের ব্রিফিং শেষে আলাদাভাবে জানতে চান, সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তাতে মানবিক সহায়তা লাগবে কি না। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব তাদের সহমর্মিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ মুহূর্তে ব্যাপক সংখ্যায় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ফলে এখন যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা বাংলাদেশ নিজেই সামাল দিতে পারবে।পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মিয়ানমার সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে বিষয়টি কীভাবে উপস্থাপনের কথা ভাবছে। জবাবে বলা হয়, বাংলাদেশ মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের মাধ্যমে সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরার পরিকল্পনা করছে। তখন পশ্চিমা দেশগুলো এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘে সহযোগিতার জোরালো আশ্বাস দেয়।

ইউরোপের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত ব্রিফিংয়ে জানতে চান, চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রত্যাবাসনের আলোচনায় কতটা অগ্রগতি হলো। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব অকপটে জানিয়ে দেন, ত্রিপক্ষীয় ওই উদ্যোগে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের জের পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে বলে আলোচনায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন কূটনীতিক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।