| |
               

মূল পাতা আরো সম্পাদকীয় ধর্মীয় রাজনীতির খোলস মুক্ত হোন


ধর্মীয় রাজনীতির খোলস মুক্ত হোন


সৈয়দ শামছুল হুদা     09 September, 2022     03:22 PM    


দুদিন পুর্বে আমার রাজনৈতিক উস্তাদ, মুহতারাম মুরুব্বি, আল্লামা উবায়দুর রহমান খান নদভী দা.বা. ছোট্ট একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন নাই। অনেক কঠিন কঠিন কিছু কথা খুব সহজভাবে লিখেছেন। অল্প কয়েকটি বাক্যের মধ্যে দেশের রাজনীতির সামগ্রীক চিত্র গভীর থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। লেখাটির শিরোণাম ছিল, “কার ভাগ্যে শিকা ছিঁড়বে?”। লেখাটির এক জায়গায় তিনি বলেন,  ‘ইসলামপন্থীদের বাইরে রেখে ফুল সেটাপ নতুন করে সাজানো হবে। এক্ষেত্রে স্বার্থ ভাগাভাগির ভিত্তিতে নমনীয় আন্তর্জাতিক সমঝোতার রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হবে।’

লেখাটি পড়ার পর থেকে আমার মধ্যে নানা ভাবনা কাজ করতে থাকে। তিনি কেন এ কথাটি বললেন? কীভাবে ইসলামপন্থীদের সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হবে? এত এত দল থাকতে এটা কি আদৌ সম্ভব? তিনি কি অতিরঞ্জন বলেছেন? আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি ভেবে-চিন্তেই বলেছেন। তখন থেকেই আমার কাছে মনে হয়েছে, যে সকল ইসলামী দল মাঠে বর্তমানে কাজ করছে, তাদের সকলেই  এখন এনএসআই, ডিজিএফআই এর পরামর্শ ছাড়া কোনোরকম মুভমেন্ট করতে পারে না। তাদেরকে মূল ধারার রাজনীতি থেকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ইচ্ছায় হোক-অনিচ্ছায় নিজেদেরকে মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। আর ভাবছে, আমরা ভয়ঙ্কর রকম অবস্থা নিয়ে খুব শীঘ্রই দেশের রাজনীতির মূল অঙ্গনে পৌঁছে যাবো। 

আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছেন যে, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হযেছে। জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের সাংবিধানিক আইন পাশ করা আছে। শুধূ প্রয়োগের জন্য পরিবেশের অপেক্ষা। আমার কাছেও মনে হচ্ছে, সামনে যে দিন আসছে- বাংলাদেশে ধর্মের নামে মূলধারার রাজনীতি করা যাবে না। আর দেশের যে ধর্মীয় রাজনীতির হালচিত্র তা দেখে আমার কাছেও মনে হচ্ছে এসব রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়াই উচিত। এরা না ঠিকমতো রাজনীতি করে, না ঠিকমতো ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করে। এরা বড়জোর মাঝে মাঝে কোনো কোনো ইস্যুতে একটু মাঠ গরম করে। এরা দীর্ঘ সময়ের জন্য কর্মীদের হতাশ করে। গত ৫০টি বছরেও ধর্মীয় রাজনীতি না ধর্মীয় লোকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে? না সাধারণ অঙ্গনে এদের কোনো গুরুত্ব আছে। মৌসুমী রাজনীতি করে এরা ধর্মীয় অঙ্গনে শুধু বিতর্কই ছড়ায়। কাদা ছুঁড়াছুড়ি করে। এক ধরনের উম্মাদনা সৃষ্টি ছাড়া এদের তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জনই নেই। 

আর বর্তমানে ইসলামী দলগুলো যে পর্যায়ে গেছে, সে অবস্থায় সবগুলো ইসলামী দল এখন একেবারে বিলুপ্ত করেই দেওয়া উচিত। কোনো একটি  দলেরই এখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা নেই। তারা এখন অন্যের দ্বারা পরিচালিত। তাদের দল কে চালাবে? কারা দলের নেতৃত্বের আসনে আসবে? তারা কার সাথে কীভাবে জোট করবে? সবকিিছুই এখন অন্য কোথাও থেকে নির্ধারিত হয়। এছাড়া কিছু ইসলামী দল আছে মাদ্রাসা নির্ভর, মুহতামিম নির্ভর, ছাত্র নির্ভর। এভাবে রাজনীতি চলে না। গণসম্পৃক্ততা ছাড়া রাজনীতি চলে না। আর ধর্মীয় ইস্যূতে কথা বলার জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দরকার নেই। বড়জোর হেফাজতে ইসলাম মতো অরাজনৈতিক দল থাকতে পারে। মাঝে মাঝে এগুলো সরকারকে সতর্ক করবে। 

দেশে ধর্মীয় রাজনীতির ওপর ঝড় আসার পুর্বেই ইসলামী দলের ব্যানার ছুঁড়ে ফেলে মূল ধারার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। কেউ গণ অধিকার পরিষদে জায়গা করে নেন। কেউ এবি পার্টিতে জায়গা নেন। কেউ জোনোয়েদ সাকীর দলে যোগ দেন। কেউ বা বিএনপি, আওয়ামীলীগও যোগ দিতে পারেন। ৪৭ সালের দেশ বিভাগপুর্ব পর্যন্ত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। মোহনলাল করম চাঁদ গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, বল্লভ ভাই প্যাটেল প্রমুখের মতো বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদদের সাথে মূলধারার রাজনীতি করেছেন। তিনি প্রখর মেধার আলেম ছিলেন। মাওলানা আতহার আলী রহ. খতীবে আযম সিদ্দীক রহ. সাইয়েদ মুসলেহ উদ্দীন রহ. প্রমুখ জমিয়তের সামাজিক রাজনীতির সীমাবদ্ধ গন্ডী থেকে বের হয়ে নেজামে ইসলাম নামে স্বতন্ত্র ধারার রাজনীতির সূচনা করে ১৯৫৪সনের যুক্তফ্রন্ট সরকারের অংশ হয়ে রাজনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। মুফতি আমিনী, শায়খুল হাদীস প্রমুখ ৪দলীয় জোট সরকারের অংশ হয়ে ২০০১সালে সরকার গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তারা রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বর্তমানে মূলধারার রাজনীতি ত্যাগ করে আমরা-আমরা, হুজুররাই দেশ দখল কইরা ফালামোর ভুয়া স্বপ্ন দেখাইয়া বেহুঁশ রাজনীতির গ্যারাকলে ফালাই দিছে সরকার। এজন্যই নদভী সাহেব এ কথা বলতে পেরেছেন যে, সামনে সরকারে ইসলামপন্থীদের কোনোই ভূমিকা থাকবে না। তাদেরকে ফুল মাইনাস করে দেওয়া হবে। বিষয়টিকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর একটি মুসলিম দেশে সবকিছুর সাথেই আলাদাভাবে ইসলাম লাগানোর অর্থ হলো, এদেশে মুসলিমরা স্বাধীন না। এটা বৃটিশ আমলে ছিল। 

সুতরাং হে তরুণ, হয় গন্ডিবদ্ধ, মাসলাকসমৃদ্ধ, তথাকথিত রাজনীতির গ্যারাকল থেকে বের হয়ে মূল ধারার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে সকল ইসলামী দলের তরুণদের নিয়ে নতুন ধারার রাজনীতির ডাক দাও, নতুবা নতুন প্রজন্মের বিভিন্ন দলে ঢুকে যাও। সেখানে গিয়ে মেধার খরচ করলে মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মতো ভালো একটি অবস্থান তৈরি করা সম্ভব। ইসলামী দলগুলোতে সারাজীবন পড়ে থেকেও কোনো কিছুই অর্জন হবে না। দলের নেতারাই সেই সুযোগ দিবে  না। দলের নেতারা এক ধরনের স্বার্থের রাজনীতির বেড়াজালে বন্দি। খুব কাছ থেকে তাদের রাজনীতির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পর্যবেক্ষণ করলে যে কোনো মানুষই হতাশ হবে। দূর থেকে আমার শাইখ, আমার শাইখ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও তারা কর্মীদের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না। 

সময় এসেছে ধর্মীয় আবরণের রাজনতি নিয়ে নতুন করে ভেবে দেখার। আমি মনে করি, ব্রাকেটবন্দি রাজনীতি না করে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য গণমুখি রাজনীতি করেন। রাজনৈতিক মডেল হিসেবে কোনো ধর্মীয় দলকে অনুসরণ না করে ব্যক্তি রজব তাইয়েব এরদোয়ান, মাহাথির মোহাম্মদ অথবা ইমরান খান কে ফলো করতে পারেন। এর মাধ্যমে গণমুখি রাজনৈতিক দলে ঢুকে নিজের মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে জাতিকে কিছু উপহার দেন। 


লেখক : জেনারেল সেক্রেটারি,বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট-বিআইএম