রহমত ডেস্ক 21 August, 2022 07:40 PM
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, অনেক বেকার যুবক ডিমের ব্যবসা শুরু করেছেন। এমন সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে কৃষি বাজার ব্যবস্থাপনা না বুঝেই ক্রাইম করছি। ওই অনেকটা অর্থনীতিবিদদের মতো আমাদের সাংবাদিকরাও আশঙ্কায় থাকেন। ৫২০ কোটি টাকা লুটপাট করেছে, এটি ঠিক নয়। যারা এসব কথা বলছেন বা লিখছেন, তারা বাজার ব্যবস্থাপনা না বুঝেই করছেন। এটিকে লুটপাট বলা যাবে না, তারা লাভ করেছেন।
আজ (২১ আগস্ট) রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বত্কব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, কয়েকদিন ধরেই বাজারে ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামে বেশ অস্থিরতা চলছে। একটি মাফিয়া চক্র গত ১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজার থেকে ৫১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চায়লনায় বক্তব্য রাখেন,পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর,বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান,বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান। সংগঠনের সিনিয়র সদস্যরা চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
দেশের অর্থনীতিবিদদের ‘আশঙ্কাবাদী’ আখ্যা দিয়ে অর্থনীতিবিদদের কড়া সমালোচনা করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, অর্থনীতিবিদরা দেশের অর্থনীতির অর্জন ও সম্ভাবনা দেখতে পান না। কিন্তু বিদেশি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সম্ভাবনা তুলে ধরছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক কিছু নিয়ে আশঙ্কা করেন। কিন্তু আমরা অর্থনীতিবিদদের এ আশঙ্কাকে এখন খুব একটা গুরুতরভাবে নিই না। কারণ আমরা যখন অষ্টম-সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করি তখন একজন সম্মানজনক অর্থনীতিবিদ লিখেছিলেন, যেভাবে সরকার বাজার খোলা রাখতে চাচ্ছে, লকডাউন দিচ্ছে না, এতে করে ৫ লাখ লোক মারা যাবে। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু করা মানে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামিয়ে আনা, কারণ মেগা প্রজেক্টগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আসলে বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিবিদরা কোনো সময় পূর্বাভাস দেননি যে, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। কোনো অর্থনীতিবিদ বলেন না বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। অনেকে বলেছেন, কোভিড কালে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু বিআইডিএসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ দারিদ্র্য বেড়েছে। যে দেশে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক, সেই দেশে দারিদ্র্য এত বাড়ে কীভাবে? আমাদের অর্থনীতিবিদরা জ্ঞানে বুদ্ধিতে অনেক এগিয়ে। কিন্তু প্রথাগত ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আশঙ্কা করার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ। তাই তারা পদ্মা সেতু নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তারা অনেক কিছুই আশঙ্কা করেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। তাদের এ আশঙ্কা যদি আমরা আমলে নিই, তাহলে সামনে এগিয়ে যেতে পারব না।
তিনি আরো বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে ইন্ধন দিচ্ছে। এ কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, কথা সত্য। দাম না বাড়িয়ে বিকল্প ছিল না। তবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অক্টোবরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে। বাংলাদেশ পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে। পরিকল্পনায় কোনো দুর্বলতা নেই। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ অস্বস্তিতে আছে, কোনো সংকটে নেই। এলডিসি থেকে উত্তরণ, এসডিজি বাস্তবায়ন সবই ঠিকভাবে হবে। তবে দারিদ্র্য পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। দেশে উন্নতমানের কয়লা মজুত আছে। এক সময় কথা উঠেছিল, উন্নতমানের কয়লা থাকতে আমদানি করা হচ্ছে। সেটা করা হয়েছে দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়ার কারণে। কখনো কখনো অর্থনৈতিক বিবেচনার চেয়ে রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব দিতে হয়। কয়লা উত্তোলনে কৃষি জমি দেবে যেতে পারে, ধসে যেতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে আমাদের জমির স্বল্পতা আছে, সেখানে এ ধরনের আশঙ্কা থাকলে সেটা করা ঠিক না। অনেক দেশে কয়লার খনি এলাকা লেক হয়ে গেছে। বাংলাদেশ সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। এজন্যই কয়লা আমদানির সিদ্ধান্ত।