| |
               

মূল পাতা জাতীয় ইসলামেও সকল ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী


ইসলামেও সকল ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     18 August, 2022     10:38 PM    


পবিত্র কুরআনের ‘সুরা কাফেরুন’-এর আয়াত ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানব ধর্মে বিশ্বাস করেন এবং আমাদের ইসলাম ধর্মেও সকল ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে । কাজেই কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। অন্তত তাঁর সরকার এবং আওয়ামী লীগ সে নীতিতেই বিশ্বাসী এবং যথেষ্ট সচেতন। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং দেশের মানুষ সকল অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সকল গৃহহীন-ভূমিহীনকে ঘর করে দেয়ার পাশাপাশি তাঁর সরকার জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কোন সম্প্রদায় বেছে নয়, সার্বজনীনভাবে তা করা হচ্ছে। কেননা মানব প্রেম, মানবতার জন্য কাজ করা এবং মানবতার উন্নতি করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য।

আজ (১৮ আগস্ট) বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও চট্টগ্রামের জে.এম.সেন হলে ‘শুভ জন্মষ্টমী’ উপলক্ষে জন্মষ্টমী উদযাপন পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবেন। আমরা এখানে চাই যে আমাদের সকল ধর্মের মানুষ নিজেদের সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। এদেশের মাটিতে সকলের সমান অধিকার, আমারও যতটুকু অধিকার আপনাদেরতো ততটুকু অধিকার রয়েছে। আমাদের সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়কে বলবো আপনারা এদেশের মানুষ। নিজেদেরকে সংখ্যালঘু মনে না করে আপনারা মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। তাই সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরাও সেইভাবে আপনাদেরকে দেখতে চাই। কখনো নিজেদের মনে কোন হীনমন্যতা নিয়ে আসবেন না। কারণ আপনারা যারা এদেশের নাগরিক তারা সবাই দেশের মালিক এবং নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি চলতে পারেন তাহলে আর দুষ্টু লোকেরা কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর দুষ্টু লোক সবধর্মেই রয়েছে। কাজেই এই ঐক্য ও বিশ্বাসটা সকলের মধ্যে থাকতে হবে এবং সেটা নিয়েই আপনারা চলবেন, সেটাই আমি চাই।

৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল কেনার এবং প্রায় এক কোটি লোককে বিশেষ পারিবারিক কার্ডের আওতায় ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ করে দেয়ার তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিকে তিনি ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’। প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেমন ইংল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতি ১০ দশমিক ১ শতাংশে উঠে গেছে। প্রতিটি দেশে দ্র্ব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। আমাদের যেসব জিনিস আমদানি করতে হয় তার দামও যেমন বেড়েছে তেমনি পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই আমাদের কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। আমি জানি আমরা তেলের দাম বাড়ানোর পর দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে, তবে স্বাভাবিকভাবে বাড়ছে সেটা নয়, কেউ আবার অধিক মুনাফার জন্য অতিরঞ্জিত করছে। তাই আমরা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছি এবং খোঁজ-খবর নিচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা ব্যবস্থাও নেব।  এজন্য তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং দ্রব্যমূল্য যেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, মানুষ যেন কষ্ট না পায় সে জন্য সবধরনের পদক্ষেপই তাঁর সরকার নেবে এবং নিচ্ছে। আবারো সমাজের বিত্তবানদের দুস্থ জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। এটা তাদের দায়িত্ব। কারণ নিজে ভোগ করলে কিন্তু শান্তি আসে না বরং মানুষের সেবা করলেই শান্তি আসবে, এটা হচ্ছে বাস্তব কথা।

তিনি বলেন, আমরা যদি ধর্মের কথাই চিন্তা করি প্রত্যেক ধর্মই কিন্তু মানবতার কথা বলে গেছে। প্রত্যেক ধর্মই অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলে গেছে। শান্তির ও প্রগতির কথা বলেছে, মানুষের ক্ষতি করার কথা বলেনি, শ্রী কৃষ্ণও সে কথাই বলে গেছেন। আর এদেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার সেভাবেই আমরা উৎসব উদযাপন করবো। দেশে বিদেশ অবস্থানকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি ও প্রতিটি জলাধারকে ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোয় দেশবাসীকে এগিয়ে আসায় তাঁর আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সকলকে করোনা বিষয়ে সতর্ক করে যাদের টিকা নেয়া হয়নি তাদের ডোজ সম্পূর্ণ করতে বলেন তিনি।

শোকের এই মাসে ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাটিতে যেন সকলে স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম-কর্ম পালন করে এবং নিজেদের ধর্মমত নিয়ে চলতে পারে সেই লক্ষ্যে জাতির পিতা এদেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে সপরিবারে হত্যার পর এদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরই আঘাতটা আসে সবচেয়ে বেশি। কেননা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী চক্র বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু জনমতের চাপে সেটা করতে পারেনি। আর পরাজিত শক্তিতো দেশের স্বাধীনতাই মেনে নিতে না পেরে বার বার এদেশে যে সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে তা নষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে।

দেশে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি  বলেন, যখনই একটা কিছু ঘটে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, যখন কোন ঘটনা ঘটে তখন দেশে বিদেশে সে জিনিসটাকে এমনভাবে প্রচার করা হয় যে, দেশে হিন্দু ধর্মের মানুষের কোন অধিকারই নাই। কিন্তু আমরা সে যেই হোক, যে ধর্মেরই হোক তাদের যে গ্রেপ্তার করি বা ব্যবস্থা নেই সেটা কিন্তু তুলে ধরা হয় না। মন্দির রক্ষা করতে গিয়ে মুসলমানরা জীবন দিয়েছে সে কথাটাও কিন্তু বলা হয় না।