| |
               

মূল পাতা ইসলাম অন্যের বিপদে আনন্দ প্রকাশ করা হারাম


অন্যের বিপদে আনন্দ প্রকাশ করা হারাম


মাওলানা রাদ তানবীর     21 July, 2022     09:05 PM    


আমরা মুসলমান। মুসলিম সবাই একে অপরের ভাই। সুখে-দুঃখে আমাদের উচিত একে অপরের পাশে থাকা। প্রতিটি মুসলিম বরং একটি দেহের সমতুল্য। একজন ব্যথিত হলে ব্যথিত হওয়া উচিত সবার। একজন কষ্টে থাকলে এগিয়ে আসা উচিত অন্য সবার। একজনকে বিপদমুক্ত করতে সবার উপর কর্তব্য সহযোগিতা করা। একজনকে সুখী করতে সবটুকু দেওয়া উচিত অন্যদের। সূরা হুজুরাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 
انما المؤمنون اخوة فاصلحوا بين اخويكم و اتقوا الله لعلكم ترحمون (سورة الحجرات:١٠)
অনুবাদ: মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা ভ্রাতৃগণের মধ্যে শান্তিস্থাপন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তােমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও। (সূরা হুজুরাত: ১০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 
«لا تحاسدوا و لا تناجشوا, و لا تباغضوا, و لا تدابروا, و لا يبع بعضكم على بيع بعض, وكونوا عباد الله إخوانا, المسلم أخو المسلم, لا يظلمهُ, و لا يخذله ، و لا يحقره (رواه الإمام مسلم رح)
অনুবাদ: তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, (ক্রয় করার ভান করে) মূল্য বৃদ্ধি করে ধোঁকা দিও না, একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন (অবজ্ঞা প্রকাশ) করবে না এবং তোমাদের একজনের বেচাকেনা শেষ না হলে ঐ বস্তুর কেনাবেচার প্রস্তাব করবে না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমদের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না, অসম্মান করতে পারে না, তুচ্ছ ভাবতে পারে না। (সহীহ মুসলিম)
কিন্তু আমাদের সমাজের দৃশ্যটা এর উল্টো। আমরা অপর মুসলিমের দুঃখ ও কষ্টে সহযোগিতা তো করিই না, বরং তার দুঃখ ও কষ্ট দেখে দেখে আনন্দ প্রকাশ করি কখনও কখনও! বিপদগ্রস্ত অন্য মুসলমানকে দেখে আমরা এগিয়ে যাই না, সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি না, বরং তার দুঃখগুলো পুঁজি করে আমরা রসগল্প করি, দশের কাছে তা বর্ণনা করি, কখনও ভিডিও বা পিক তুলে ছড়িয়ে দিয়ে মজা নেই! বড় দুঃখজনক ব্যাপার! আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনা ও আমাদের কর্ম গ্রহণের রুচি আজ পচে গিয়ে নর্দমায় পরিণত হয়েছে। আমরা আর মানুষ নেই, মানুষরূপী জানোয়ারে পরিণত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। মুসলিম জাতির মধ্যে একসময় মনুষ্যত্বের যে দুর্দান্ত গতি ছিল তা আজ শূন্যের কোটায়। দিন দিন ভাটা পড়ে তা আজ লজ্জাজনক কলঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে। আমাদের মধ্যে নেই ভ্রাতৃত্ববোধ, সহযোগিতার প্রবণতা ও অন্যের কল্যাণকামনার ইচ্ছা। আমাদের মধ্যে নেই মানবতা ও সহমর্মিতা। অথচ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্ষনিঃসৃত পবিত্র বাণী,
عن واثلة بن الأسقع  (رض) عن النبي صلى الله عليه وسلم: لا تظهر الشماتة لأخيك فيرحمه الله و يبتليك (رواه الترميذي) 
অনুবাদ: ওয়াসিলাহ্ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি তোমার কোন মুসলিম ভাইকে বিপদগ্রস্ত দেখে আনন্দ প্রকাশ করো না, হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনুগ্রহ করবেন, আর তোমাকে অধঃপতিত করে দেবেন। (সুনানে তিরমীযি)
عن جرير بن عبد الله (رض) أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من لا يرحم الناس لا يرحمه الله (متفق عليه)
অনুবাদ: জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ:) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
আচ্ছা, এই যে অন্যের বিপদে আমরা উল্লাস করি এতে কি বিপদগ্রস্ত মানুষটির হৃদয়ে আঘাত লাগে না? তার মনে কি কষ্ট লাগে না? মুসলমানকে বিনা কারণে কষ্ট দেওয়া কি হারাম নয়? একজনের বিপদের মুহূর্তে আনন্দ প্রকাশ কি কোনো সুস্থ মানুষের দ্বারা হওয়া সম্ভব? কোনো মুসলিম থেকে কি এটা কিছুতেই কাম্য? 
আরে ভাই, ঐ বিপদগ্রস্ত মানুষটির স্থলে আমরা নিজেকে কল্পনা করে দেখি না একটু! ঐ বিপদগ্রস্ত মানুষটি যদি আপনি বা আমি হই তাহলে কি কামনা করবো আমাদের বিপদের অন্য কেউ আনন্দ প্রকাশ করুক? আমাদের বিপদে অন্য কেউ উল্লাস প্রকাশ করলে কি আমাদের ভিতরটা ভেঙে খান খান হয়ে যাবে না? খুব কষ্ট পাবো না তখন? অবশ্যই! অবশ্যই! তাহলে অন্যের বিপদে আমরা কীভাবে উল্লাস প্রকাশ করছি? এটা কি আদৌ ঠিক হচ্ছে? যা আমার জন্য চাই না তা কেন অন্যের সাথে করছি? এটা কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না! বরং আমাদের ভয় করা উচিত এই ভেবে যে, আল্লাহ তায়ালা চাইলে ঐ বিপদে আমাকেও ফেলতে পারেন! ভয় করা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করে আমাকে ছুড়ে ফেলবেন ঐ দুঃখে, ঐ বিপদে, তখন কী পরিণতিটাই না হবে! কাজেই আমাদের সব মুসলিমের উচিত ভাই ভাই হয়ে থাকা, একে অপরের বিপদে এগিয়ে আসা, পরস্পর সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন।