| |
               

মূল পাতা জাতীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি তরুণ সমাজে


অর্থমন্ত্রীর কাছে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি তরুণ সমাজে


রহমত ডেস্ক     27 June, 2022     04:12 PM    


২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটকে সামনে রেখে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূয়র-ডরপের তামাক বিরোধী কার্যক্রমের আওতায় ডরপ ইয়ুথ ফোরামের সদস্যরা এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়সহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও সোশ্যাল মিডিয়া ক্যামপেইনের মাধ্যমে তামাক পণ্যে একবারে কয়েকধাপ মূল্য বাড়িয়ে সুনির্দিষ্ট করবৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছিল। অর্থমন্ত্রী বিগত ৯ জুন, জাতীয় সংসদে ২২-২৩ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন। উক্ত বাজেট প্রস্তাবনায় সিগারেটের ৪টি স্তরে নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধি করা হয় এবং বিড়ি, গুল ও জর্দার ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর মতোই মূল্য ও কর হার অপরিবর্তিত রাখা হয়। উক্ত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় ডরপ ২৭ জুন, ২০২২ একটি ওয়েবিনার এর আয়োজন করে।

ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, এবারের বাজেটে যুব সমাজের ও তামাক বিরোধী সংস্থাগুলোর সুনির্দিষ্ট কর প্রস্তাবের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সকল স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে সামান্য মূল্য বৃদ্ধি তরুণ ও জনসাধারণের মাঝে এর ব্যবহারের প্রবণতা কমাবে না বরং বাড়াতে পারে। বিড়ি, গুল ও জর্দার দাম অপরিবর্তিত থাকায় এর প্রকৃত মূল্য কমে যাবে এবং ব্যবহার বেড়ে যাবে। বিড়ি, গুল ও জর্দা সস্তা হওয়ার ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীরা অধিক স্বাস্থ্য ক্ষতির স্বীকার হবে। অন্যদিকে তামাক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বেড়ে যাবে এবং কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। আর এতে বাংলাদেশ সরকার ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে। এ ছাড়াও প্রবন্ধে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তামাককর ও মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর পুনর্বিবেচনা করার জন্য উল্লেখ করা হয়। যথা-

সিগারেট : প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরে খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; মধ্যম স্তরে খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; উচ্চ স্তরে খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৫০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এরফলে সকল মূল্যস্তরে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫ শতাংশ। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

বিড়ি : ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এরফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ। বিড়ির খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল) : প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এরফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ। জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মেজবাহ উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি এ্যাডভাইজার সিটিএফকে বাংলাদেশ ও সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন ডরপ-এর চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আজহার আলী তালুকদার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “ডরপ কর্তৃক উত্থাপিত তামাককর ও মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ও তরুণদের উত্থাপিত দাবিগুলো খুবই যুক্তি সংগত। মূলত এই প্রস্তাব এবং দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এর ঘোষণা “শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহণ করা এবং একই সাথে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা” বাস্তবায়নের একটা অংশ। আমি ডরপ এর প্রস্তাব এবং তরুণদের দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করছি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমি ডরপ ও তরুণদের বাজেট পুনর্বিবেচনার এই দাবিগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”

ডরপ ইয়ুথ ফোরামের পক্ষ থেকে তাহাসিন তাসনিম মোহসী, তাবাচ্ছুম খানম রাত্রী, রবিউল আউয়াল, ডা. রিফাত আল মাজিদ, পর্শ সাহা এবং অমিতাভ রাজন তামাককর ও মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং সাংবাদিক ও প্রধান অতিথির মাধ্যমে তাদের দাবি অর্থমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান।