| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ‘আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না’


‘আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না’


রহমত ডেস্ক     19 June, 2022     10:56 PM    


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-চবিতে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে। ‘আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না’ এই রকম মন্তব্য করেন তারা। অভিযুক্তরা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইলিয়াসের অনুসারী।

সাংবাদিকদের হেনস্থা ও হুমকির সঙ্গে জড়িতরা হলেন-লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের (নিলয়), অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রানা আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ওয়ায়দুল হক লিমন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৬-১৭ সেশনের আশিষ দাশ, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আবির আহমেদ ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জাহিদুল ইসলাম এবং সংস্কৃত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের প্রমিত রুদ্র।

রবিবার (১৯ জুন) বেলা ১২টায় চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি-চবিসাস।

অভিযোগপত্রে বলা হয়,ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের অনেকেই বিভিন্ন হলে অবস্থান করছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের দ্বিতীয় তলায় পূর্ব ব্লকে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরাসহ বেশ কয়েকজন কর্মরত সাংবাদিকের আসন রয়েছে। আমরা অনেকদিন যাবত লক্ষ্য করছি-চবি ছাত্রলীগের কিছু নামধারী কর্মী সাংবাদিকদের অবস্থানরত এসব কক্ষের প্রতি দখলদারি মনোভাব পোষণ করছে। যতবারই এখানকার কক্ষ ও আসন নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, ততবারই সিনিয়রদের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে আমরা বিষয়গুলো সমাধান করেছি। কিন্তু সর্বশেষ গত ১৫ জুন (বুধবার) রাত প্রায় দেড়টার দিকে আমাদের ব্লকে এসে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। পরদিন ১৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টার দিকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার জেরে গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আরও দুই দফায় এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকে। তাদের বক্তব্য ছিলো এরূপ-এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি তোরা? কর। আমরা সাংবাদিক খাই না। প্রক্টর খাই না। এছাড়া ছাত্রলীগের এসব অনুসারীরা বারবার কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয়। তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে রুম ভাঙচুরের চেষ্টাও করে।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এ সময় অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ও ওবায়দুল হক লিমনসহ বাকিরাও অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালি দিতে থাকে। আমরা জেনেছি রানা আহমেদসহ অভিযুক্ত সবার নামে এর আগেও স্থানীয়দের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর, মারধরসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। বিষয়টি ইলিয়াসকে জানানো হলে তিনি দেখছেন বলে ফোনকল কেটে দেন। এরপরও সাংবাদিকদের হেনস্তা অব্যাহত রাখায় মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। আমরা মনে করি-ইলিয়াসের পরোক্ষ মদদেই মূলত তারা বারবার এরকম আচরণ করার সাহস পেয়েছে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম ও এসএএম জিয়াউল ইসলাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই আমরা হুমকি প্রদানকারী নামধারী শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বললে তিনি ব্যঙ্গ করে সাংবাদিকদেরকে ‘মঙ্গলগ্রহের প্রাণী’ বলে অভিহিত করেন।

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের নিলয় বলেন, এখানে উদ্দ্যেশপ্রণোদিতভাবে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। আমি ওখানে ছিলাম। কিন্তু কোনো গালিগালাজের করিনি আমি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমরা প্রগতির চর্চায় সব সময় সাংবাদিকদেরকে সঙ্গে পেয়েছি। সাংবাদিক সমিতির সভাপতির রুমে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় বাক্য বিনিময় এটা নিন্দনীয় কাজ। এটার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো। এটা সত্য হলে এবং তাদের পদ-পদবি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করবো। আর যদি কোনো পদ-পদবি না থাকে তাহলে তারা যাতে ভবিষ্যতে পদ-পদবিতে আসতে না পারে সে সুপারিশও করব।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছি। এছাড়া প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু অডিও রেকর্ডও আমাদের হাতে এসেছে। এমন অশালীন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে কখনোই কাম্য না। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা।’