| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ৩৩ মাস পর কোম্পানীগঞ্জে আসছে ওবায়দুল কাদের, দু’গ্রুপে টানটান উত্তেজনা


৩৩ মাস পর কোম্পানীগঞ্জে আসছে ওবায়দুল কাদের, দু’গ্রুপে টানটান উত্তেজনা


নোয়াখালী প্রতিনিধি     05 May, 2022     01:02 PM    


৩৩ মাস পর নিজ নির্বচানী এলাকায় আসছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাঁর আগমণকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামীলীগের বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। অসুস্থতা ও করোনা সংক্রমণের কারণে গত ৩৩ মাস তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট উপজেলা) আসতে পারেনি। এর আগে তিনি সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট ঈদুল আজহা উদযাপন করতে বাড়িতে আসেন।

আজ (৫ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের বড় রাজাপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁরই ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। অপরদিকে দুপুর ৩টার দিকে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে উপজেলা ডাক বাংলোয় ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করার কথা রয়েছে সেতুমন্ত্রীর। এছাড়াও কবিরহাট উপজেলার ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের সাথেও তিনি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের বিবদমান দুটি গ্রুপই মন্ত্রীকে বরণ করে নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। এ উপলক্ষে নেই আগের মত সাজসাজ রব। গত দেড় বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গেছে। তবে তাঁর এ সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক সচেতন মহল। তবে দেখার বিষয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিবর্ণ রাজনীতিতে এবার কি হবে?

কাদের মির্জা ঘোষিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল বলেন,কয়েক বছর পর নেতার কোম্পানীগঞ্জে আগমণকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মিদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।

সেতুমন্ত্রীর ভাগনে ফখরুল ইসলাম রাহাত বলেন, কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতিতে বর্তমানে নানা রকম প্রেক্ষাপটে মন্ত্রীর উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা ভালোমতো অনুভূত হচ্ছে। মন্ত্রীর আগমণে নেতাকর্মিদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয় লোকজন আশা করছে কোম্পানীগঞ্জের যে রাজনৈতিক সমস্যা, তা সমাধান হবে।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, সেতুমন্ত্রীর আগমণ উপলক্ষে বাড়ির সামনে গার্ড অব অনার মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। পুলিশ মঞ্চস্থল পরিদর্শন করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর নানা ঘটনায় সমালোচনায় পড়তে হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে। আলোচনার সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা। কাদের মির্জার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে সংগঠনের ভেতর থেকেই। বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে বার বার খারাপ সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। সংগঠন পড়েছে নাজুক অবস্থায়। স্থানীয় রাজনীতিতে তার বিরোধী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। তাঁর মূলত খুঁটি হচ্ছে কাদের মির্জার আপন তিন ভাগনে।

বাদল ও ভাগনেদের বিরুদ্ধেও কাদের মির্জা মোটা দাগে নানা অভিযোগ তুলেন। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের এ দ্বন্দ্ব সংঘাতে কাদের মির্জার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় তারই আপন তিন ভাগনে। তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু, ফখরুল ইসলাম রাহাত ও সিরাজিস সালেকিন রিমন। তিন ভাগনে কাদের মির্জার ৪৮ বছরের রাজনীতির ক্যারিয়ারকে টেক্কা দিয়ে শক্ত হাতে নেতৃত্ব দেয় তার প্রতিপক্ষ গ্রুপকে। এক পর্যায়ে কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ শিবিরের আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় তারা।

উল্লেখ্য,বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এর আগে নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি এবং নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-অসংগতি নিয়ে বক্তব্য দেয় প্রায় এক বছর। নির্বাচনের আগে প্রচারণায় আবদুল কাদের মির্জার যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, তিনি তাতে বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন-চারটি আসন বাদে তাদের অন্য এমপিরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও তিনি অনেক খোলামেলা বক্তব্য দেন দীর্ঘ সময়। কাদের মির্জার বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে। আব্দুল কাদের মির্জার সমর্থক এবং তার বিরোধী গ্রুপ মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বাধীন অংশের মধ্যে সংঘর্ষের পর দু'পক্ষই ঘটনার জন্য একে অপরকে ধুষেন।

মূলত কাদের মির্জার পারিবারিক ভুল বুঝাবুঝি সূত্র ধরে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেই এই বিরোধের ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতে এ অভ্যন্তরীণ বিরোধ ছড়িয়ে যায়। সেই বিরোধের জের ধরে গত কয়েকমাসে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে একজন সাংবাদিকসহ দুই জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় এক হাজার নেতাকর্মি। পাল্টাপাল্টি ৭২টি মামলা হয়। এতে আসামি হয় উভয় পক্ষের প্রায় সাত হাজার তৃণমূলের নেতাকর্মি। এখনো বাড়ি ছাড়া রয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মি। ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে অনেকে বাড়ি আসতে পারেনি। তৃণমূলের কর্মিরা আশা করছে এ কোন্দল নিরসন হলে তারা আগের মতো চলাফেরা করতে পারেব।