রহমত ডেস্ক 14 April, 2022 02:02 PM
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সুপ্রিমকোর্ট মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই- এই পবিত্র আদালত দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। এখানে কোনো প্রকার দুর্নীতি অনিয়মের ন্যূনতম উপস্থিতি বরদাস্ত করবো না। এখানের অনিয়ম দুর্নীতি নির্মূল করতে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না। অনিয়ম বা দুর্নীতি পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের সব কর্মফলের হিসাব আল্লাহর কাছে দিতে হবে। এটা কিন্তু ভাবতে হবে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে কিন্তু মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি সুপ্রিমকোর্ট অডিটোরিয়ামে সুপ্রিমকোর্টে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার ও সেকশন সুপারদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বক্তৃতা করেন।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আমি হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছ থেকে কেউ যদি সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেন তাহলে কোনোভাবেই বরদাস্ত করবো না। এরইমধ্যে একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, ডেপুটি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কমিটি করে দিয়েছি। তাদের খেয়াল রাখতে বলেছি কোথাও কোনো অনিয়ম বা সাধারণ মানুষকে কেউ হয়রানি করছে কিনা। মেধা, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন করা হবে। যিনি যে কাজের উপযুক্ত তাকে সেই পদে পদায়ন করা হবে। অযোগ্য ও চাটুকারদের মাধ্যমে সঠিক সেবা দেয়া সম্ভব না। বরং এরা নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় থাকবে। তারা কর্মঘণ্টা নষ্ট করে বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। যারা সঠিকভাবে ও সৎভাবে কাজ সম্পন্ন করবেন তাদের প্রত্যেকের পেছনে শুধু আমি নয় প্রত্যেক বিচারপতি থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই যে দেখেন আমরা কোট পরে আছি, এই কোটের কেউ সুতা তৈরি করেছেন, কেউ কাপড় তৈরি করেছেন, এইভাবে একজন মানুষ অন্য মানুষের সহায়তায় চলে। এখন আমরা যদি নিজেরা ভাবি এইভাবে দেশের প্রতিটি লোকই আমাদের সহায়তা করছেন। এই সহায়তার বিনিময়ে আমরা কি দিচ্ছি। এটা যদি চিন্তা করা যায় তাহলে কিন্তু জনগণের জন্য আমাদের কিছু করার আগ্রহ তৈরি হবে। আমাদের যে বেতন হয়, সেটা কিন্তু জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। সে হিসেবে আমরা জনগণকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছি তা চিন্তা করতে হবে। যদি আমরা সেবা দিতে না পারি তাহলে সেটা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আমি শপথ নেয়ার পরেই হাইকোর্টের সেকশনগুলো পরিদর্শন করেছি। তাতে যে অবস্থা দেখেছি, সেখানে কাজ করার মত পরিবেশ নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের কনসার্ন দিয়েছেন যে প্রশাসনিক কাজের জন্য পৃথক একটি ভবন তৈরি করে দেবেন। যেখানে পৃথক রেকর্ড রুম থাকবে।
তিনি আরো বলেন, সুপ্রিমকোর্টের সব কর্মকর্তা কর্মচারীর অদম্য উৎসাহ নিয়ে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় বেঞ্চ অফিসার, বেঞ্চ রিডার এবং বিভিন্ন সেকশনের সুপারসহ অসাধু কিছু কর্মকর্তার জন্য তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। একজন সেকশন সুপার বা একজন বেঞ্চ অফিসারের জন্য পুরো বেঞ্চের বদনাম হয়ে যায়। এটা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিমান, দুর্বল, ধনী, গরিব সবার মধ্যে যাতে একই বিশ্বাস জন্মে যে তারা সবাই সমান। আদালতের কাছে শুধুমাত্র আইন অনুযায়ী ন্যায় বিচার পাবেন সেই ব্যবস্থা করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে প্রতারক, অসাধু সিন্ডিকেট উচ্ছেদ করতে আইনজীবীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।