| |
               

মূল পাতা রাজনীতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা : রিজভী


দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা : রিজভী


রহমত ডেস্ক     03 April, 2022     04:38 PM    


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে মানুষ দিশেহারা। দেশে চলছে সরব দুর্ভিক্ষ। ভয়ংকর সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে। একদিকে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত মানুষরা টিসিবির গাড়ির পেছনে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। মানুষ খেয়ে না খেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। অন্যদিকে উন্নয়নের মহাসড়কের দাবীদার নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে রাষ্ট্রের শত কোটি টাকা খরচ করে জমকালো কনসার্টে গান বাজনা আর আমোদ ফুর্তিতে মেতে রয়েছেন। শুধুুমাত্র নিজের পিতাকে মহিমান্বিত করার জন্য রাষ্ট্রের তহবিল দেদারসে খরচ করছে। দেশের মানুষের সঙ্গে এমন মশকরা কেবলমাত্র গণবিরোধী জালিম সরকারই করতে পারে। বিনাভোটের প্রধানমন্ত্রী যখন আমোদ ফুর্তিতে ব্যস্ত তখন দেশে টাকার অভাবে সন্তান বিক্রি করছেন মা। সেচের পানির অভাবে আত্মহত্যা করছেন কৃষক।

আজ (৩ মার্চ) রবিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

রিজভী বলেন, গত ২১ মার্চ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে অভাবের তাড়নায় এক দম্পত্তি তাদের ১৩ মাস বয়সী শিশু সন্তানকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। একজনের নাম রবি মারান্ডি অপরজন অভিনাথ মারান্ডি। এই দুই ভাই জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছিলো তাদের ধান। অথচ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ করেও তারা জমিতে সেচের পানির ব্যবস্থা করতে পারেনি। ফলে, হতাশা আর ব্যর্থতায় গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় এই দুইজন কৃষক আত্মহত্যা করেন। সারাদেশে বিক্ষোভ মানব বন্ধনে উত্তাল জনতাকে সামলাতে কৃষি মন্ত্রণালয় নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি করেছে।এছাড়াও গত ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামের কৃষক শফিউদ্দিন নিজের জমিতে আত্মহত্যার মঞ্চ বানিয়ে আত্মহত্যা করে যে অভিনব প্রতিবাদ দেখিয়েছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজীরবিহীন। কে নেবে এসবের দায়?

তিনি বলেন, আসলে, দেশের বাস্তব পরিস্থিতি হলো, কেবলমাত্র স্বল্প মূল্যের খাবারের আশায় হাজার হাজার বুভুক্ষ মানুষ টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৪২ শতাংশের বেশি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে। দেশের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ এখন অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছে। মানুষের ক্ষুধার জ¦ালা না মিটিয়ে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির ক্ষমতার লালসা মেটাতে গিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘৃণা ও বিদ্বেষ। লোভ-লালসা, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা-এটিই যেন এখন রাষ্ট্রের দর্শণ। ধর্ষণ, আত্মহত্যা, মায়ের হাতে সন্তান হত্যা, সন্তান পিতাকে খুন, সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যে নাভিশ্বাস, গরীব খেতে না পেলেও শত কোটি টাকায় আয়োজন করা হয় কনসার্ট। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যারা শেখ হাসিনার তথাকথিত উন্নয়নের মতো মডেল গ্রহণ করেছিল তাদের দেশে এখন লালবাতি জ¦লছে। আমাদের দেশে যেমন উন্নয়নের নামে লুটপাট হচ্ছে ঠিক তেমনি ঐসব দেশেও তাই হয়েছে। তথাকথিত উন্নয়নে সেসব দেশ এখন দেওলিয়া হয়ে পড়েছে। সেসব দেশে এখন বিদ্যুৎ নেই, কাগজের জন্য পরীক্ষা নিতে পারছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, পাঁচশো টাকা কেজিতেও চাল মিলছে না। ঐসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জনরোষ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এই বিষম চিত্র বাংলাদেশেও বিরাজমান।

তিনি আরো বলেন, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের বিপরীতে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির কারণে, রাষ্ট্র ও সমাজে, মানুষের মনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। খাদ্যের অভাবে মানুষ হা-হুতাশ করছে, কর্মহীন বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ তথা সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের ব্যবস্থা করতে না পেরে স্বচ্ছল কৃষকও প্রান্তিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে কিংবা আত্মহত্যা করছে। বাজার সিন্ডিকেট, মাফিয়াবৃত্তি, মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের দাপটে বাংলাদেশের কৃষি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারণ এরা প্রত্যেকেই ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত। কৃষকের স্বস্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই। সরকারের নীতি যেন গোটা জাতিকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ঠেলে দেয়া। সরকারের হরিলুট হওয়া অর্থভান্ডার পূর্ণ করতেই কৃষি উপকরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কর্মসূচি ঘোষণা করছে — ১। আগামী ০৬ এপ্রিল ২০২২, ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ ২। ০৭ এপ্রিল ২০২২, দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ।