| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক বেলারুশে রাশিয়া-ইইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু


বেলারুশে রাশিয়া-ইইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     28 February, 2022     05:59 PM    


প্রতিবেশী দুই দেশের চলমান সংঘাতের অবসানে বেলারুশে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে প্রিপিয়াত নদীর কাছে ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তের গোমেল অঞ্চলে এই বৈঠক শুরু হয়েছে। এর আগে, অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতি’ এবং ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায় কিয়েভ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিনিধি জোনাহ হুল পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ শহরে রয়েছেন।  জোনাহ বলেছেন, রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের মাঝে শেষ পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে বিষয়ে আগাম ধারণা করা কঠিন।রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার আগে মস্কো তাদের মূল দাবিগুলো থেকে সরে আসবে কি-না সে বিষয়ে মস্কো কোনো ধরনের ইঙ্গিত দেয়নি। স্ব-ঘোষিত স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেৎস্ক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী লুহানস্কের স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মস্কোর দাবির মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা ও দেশের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঞ্চলকে কিয়েভের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া। রবিবার এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, এই আলোচনা থেকে তেমন কোনো অগ্রগতি আশা করেন না। তবে তিনি বলেছেন, ছোট হলেও এই সুযোগ তাদের ব্যবহার করা উচিত, যাতে কেউ ইউক্রেনকে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা না করার জন্য দোষারোপ করতে না পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের জনগণকে ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন থেকে মুক্ত এবং নাৎসিবাদ হটানোর লক্ষ্যে দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর স্থল, আকাশ এবং নৌপথে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী; যদিও অনেকেই রাশিয়ার এই অভিযানকে আগ্রাসন হিসাবে অভিহিত করেছেন। এর আগে, রবিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বেলারুশে শান্তি আলোচনায় তার দেশ অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দেন। এরপর তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে কোনো ধরনের পূর্ব শর্ত ছাড়া ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় অংশ নেবে বলে জানানো হয়। সোমবার বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের দু’টি হেলিকপ্টার বেলারুশের গোমেল অঞ্চলে পৌঁছায়। জেলেনস্কির কার্যালয় বলেছে, কিয়েভের প্রতিনিধি দলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকজি রেজনিকোভ, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক, ক্ষমতাসীন সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল পার্টির প্রধান ডেভিড আরাখামিয়া, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলে তোচিৎস্কি এবং অন্যান্যরা রয়েছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের পঞ্চম দিনেও সোমবার ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ সৈন্যদের সাথে ব্যাপক সংঘাত চলছে। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হওয়া সবচেয়ে বড় আক্রমণের এই ঘটনার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং পশ্চিমারা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।

বিশ্বের এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে পরমাণু অস্ত্র ‌‘উচ্চ সতর্ক’ অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এমন নির্দেশের পর গোমেলে শান্তি আলোচনায় কোনো ধরনের অগ্রগতি আসবে কি-না তা এখনও পরিষ্কার নয়। মস্কোর প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম ৩০ শতাংশ পড়ে গেছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা।

এদিকে, সোমবার ভোরের দিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান শহর খারকিভে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাশিয়ার স্থল বাহিনীর খারকিভ শহর দখলের চেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জাপোরিঝঝায়া অঞ্চলের দুটি শহর বার্ডিয়ানস্ক এবং এনেরহোদারসহ একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে রুশ সৈন্যরা। তবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছে রুশ বার্তাসংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। তবে রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পতনের দাবি অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। দোনেৎস্কের আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান পাভলো কিরিলেনকো সোমবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিউপোলের আশপাশে রাতভর লড়াই চলেছে। তবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কোনও ভূখণ্ড দখল অথবা হারিয়েছে অথবা কোনো হতাহত ঘটেছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাতে ইউক্রেনে কমপক্ষে ১০২ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩০৪ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা ‘যথেষ্ট বেশি’ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়ে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ৩৫০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এসবের মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।