| |
               

মূল পাতা রাজনীতি মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের কর্মময় জীবনী


মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের কর্মময় জীবনী


রহমত ডেস্ক     21 January, 2022     05:31 PM    


বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাবেক মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান (৭১) ইন্তেকাল করেছেন।  ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। আজ (২১ জানুয়ারি) শুক্রবার জুমার পূর্বে চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া মাদরাসায় সূরা কাহাফ তিলাওয়াতকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসাপাতাল নেওয়ার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহির জানাযা ও দাফন আগামীকাল হযরতের জন্মস্থান নেত্রকোণা পৌরসভার মালনী গ্রামে সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে।

মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান নেত্রকোনা পৌরসভার অন্তর্গত মালনী গ্রামের মদীনাবাগ মহল্লায় এক সম্রান্ত 'খান' পরিবারে ১৯৫১ জন্মগ্রহণ করেন।  পিতার নাম মুহাম্মাদ মশরব উদ্দিন খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। ১৯৫৫ সনে নেত্রকোনার মিফতাহুল উলুমে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হন এবং একটানা ১২ বৎসর লেখাপড়া করেন। ১৯৬৮ সনে মোমেনশাহীর সুবিখ্যাত জামিয়া ইসলামিয়ায় হাদিসের প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সনে ঢাকার ঐতিহাসিক জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়ায় হাদিসের শেষ বর্ষ সমাপ্ত করেন। সাথে সাথে ইলমে তাজবীদ ও অধ্যায়ন করেন।  ১৯৭২ সনে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক দারুল হাটহাজারীতে পুনরায় তাকমিলে ভর্তি হন, এবং ইলমে তাফসিরও চর্চা করেন।

তিনি ইলমে হাদিস ও ইলমে তাফসীর যাদের থেকে অধ্যায়ন করে এজাজতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা হলেন- বিশ্ব বিখ্যাত হাদিস বিশারদ মাওলানা জাফর আহমদ উসমানী সাহেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হাকীমুল ইসলাম মাওলানা কারী মুহাম্মাদ তাইয়্যেব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, যুগশ্রেষ্ঠ ওলি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, শায়খুল হাদীস মাওলান আজিজুল হক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, শায়খুত তাফসীর মুফতী দ্বীন মুহাম্মদ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুফতী আব্দুল মুইজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা আব্দুল কবীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা আব্দুল মজিদ ঢাকুবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হাটহাজারীর মাওলানা আবদুল কাইয়ুমরাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মুফতী আহমাদুল হক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা আবদুল আজীজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,  শায়খত তাফসীর মাওলানা আবুল হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা হামেদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা মুহাম্মদ আলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, চট্টগ্রাম। আর হাদীসে মুসালসালাতের সনদ দিয়েছেন দারুল ঊলূম দেওবন্দের শায়খে সানী শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল হক আজমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। এছাড়া তিনি ইলমে ফিকহ বিষয়ে মুফতীয়ে আজম বাংলাদেশ মুফতী ফয়জুল্লাহরাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে দীক্ষা নিয়েছেন। আধ্যাত্বিক উৎকর্ষ সাধনায় একাধারে ২০ বছর হযরত হাফেজ্জী হুজুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন এবং রাজৈনতিক অঙ্গনেও তার মতাদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন।

তাছাড়া সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতী আল্লামা বিন বায, পাকিস্তানের মুফতীয়ে আজম মাওলানা মুহাম্মদ শফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা ইহতেশামুল হক থানবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,, কুয়েতের আল্লামা শায়খ রেফায়ী, ভারতের মাওলানা মসিহুল্লাহ খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, এবং দেশের মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব হাটহাজারী, মাওলানা আতহার আলী জালালাবাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, খতীবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা সামছুদ্দীন কাসেমী, হাজী ইউনুস ও এডভোকেট ফরীদ আহমদ হন রহমাতুয়া আলাইহিম প্রমুখের সান্নিধ্যে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীরাহমাতুল্লাহি আলাইহির তত্ত্বাবধানে ছিলেন। তিনি তাঁর খলিফাও।

তিনি মনে করতেন যে, বিশ্ব মুসলিমের রাজনৈতিক মুক্তির জন্য আলাদা জাতিসংঘ, আলাদা আন্তর্জাতিক মুদ্রা, আলাদা সম্মিলিত বাহিনী হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি একজন চিন্তাশীল ও সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন। তিনি মাদরাসা নির্মাণ ও পরিচালনা করেছিলেন।  আল কুরআনের তরজমা ও তাফসীরসহ তার লিখিতি গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। বই-পুস্তকের রচনা, গ্রণ্থণা, অনুবাদ ও সম্পাদন এবং তাফসীর, সীরাত, মাওয়ায়েজে হাসানাহও করেছেন।  স্বরচিত পুস্তকের প্রকাশনায় তিনি যারপরনাই আনন্দিত হন। দেশ ভ্রমণ, শিক্ষা গ্রহণ, বই লেখা তার পছন্দ ছিলো। কারো সমালোচনা করা সর্বাধিক অপছন্দ। ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ এবং নেককারগণের সাথে হাশর করণ তাঁর একান্ত প্রার্থনা ছিলো। দাম্পত্য জীবনে তার ১ স্ত্রী, ২ ছেলে , ৭ মেয়ে। তন্মোধ্যে ১ ছেলে ও ২ মেয়ে শিশুকালে ইন্তেকাল করেন।