| |
               

মূল পাতা রাজনীতি আ’লীগই লবিস্ট নিয়োগে খরচ করেছে : বিএনপি


আ’লীগই লবিস্ট নিয়োগে খরচ করেছে : বিএনপি


রহমত ডেস্ক     20 January, 2022     11:08 PM    


২০১৮ সালে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স বোঝাই করে বিপুল বিজয়ের দাবীদার বর্তমান ‘নিশিরাতের সরকারের’ তথ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, জাতীয় সংসদে এবং নিজেদের অফিসে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ করে নিজেদের দূর্নীতি, অপশাসন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ড নিয়ে দেশ-বিদেশে যে সমালোচনার ঝড় বইছে তা’ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসাবে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অভিযোগ জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি বরং বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বর্জিত এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্থ সরকারের হতাশ মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য জনগণ অক্ষমের আর্তনাদ বলে কৌতুকের রসদ হিসাবে গণ্য করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ৮টি লবিষ্ট ফার্মের সাথে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ অর্থাৎ ১ মিলিয়ন ডলার। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো- সব তথ্য আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী আরেক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, বিএনপি বিভিন্ন নামে ১২টির বেশী লবিষ্ট ফার্মের সাথে চুক্তি করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু তিনি কে, কার সাথে, কত টাকার চুক্তি করেছে সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। অর্থাৎ স্বভাবজাত ফাঁকা আওয়াজ করেছেন। আজ (২০ জানুয়ারি)বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির স্থায়ী কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন তিনি এসব কথা বলেন। এস উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান।

ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, হাজার হাজার গায়েবী মামলা দায়েরের মত একই সরকারের এই দুই মন্ত্রী গায়েবী তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাতে গিয়ে কল্পিত লবিষ্ট ফার্মের সংখ্যা এবং ব্যয়িত অর্থের পরিমান নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ফেঁসে গেছেন এবং জনগণের করুনার পাত্র হয়েছেন। অথচ, সত্য তো এই যে, বিএনপি কোন লবিষ্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনও নেয়নি, লবিষ্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। লবিষ্টগণ যে সব কথা বলবেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না Ñ প্রকাশ্যে। তারা দেশের জনগণের উপর সরকারী নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানী, গ্রেফতার করে সীমাহীন নির্যাতন ও খুন, মৌলিক মানবাধিকার হরণ, সভা-সমাবেশ ও বাক স্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনসহ সকল রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে দূর্বল, ভঙ্গুর ও অকার্যকর করার মাধ্যমে বস্তুতঃ দেশকে ৭৫’র মত একদলীয় স্বৈরশাসনে ফিরিয়ে নেয়ার পরিকল্পিত প্রয়াসকে প্রতিহত করে দেশের মালিক জনগণ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অব্যহত ভাবে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এসব কার্যক্রমের খবর দেশ-বিদেশে প্রচারিত হয় এবং দেশ বিদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এমনকি রাষ্ট্রসমূহকেও তারা তাদের বক্তব্য ও অভিমত প্রকাশ্যেই অবহিত করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যে সব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মাঝে বিলি করেছেন তা’তে কোথাও এমন কোন বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যে বলেননি, মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিম্বা আন্তর্জাতিক বিশে^র দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এসব বক্তব্যের কোনটাই জনগণ কিম্বা দেশের স্বার্থ বিরোধীতো নয়ই বরং জনগণ ও দেশের পক্ষে বিএনপি’র নৈতিক অবস্থান ও দায়িত্বের প্রকাশ। অন্যদিকে এসব বক্তব্য জনগণের কাঁধে অন্যায় ভাবে চেপে বসা সরকারের বিরুদ্ধে হতে পারে এবং সেটাই অনিবার্য, স্বাভাবিক ও অব্যহত রাখার যোগ্য। এক কোটিরও বেশী বাংলাদেশী নাগরিক বিশে^র বিভিন্ন দেশে বাস করেন। তাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের অর্থে আমাদের দেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে। আমরা তাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলে সম্মান জানাই। এই বিশাল জনগোষ্ঠী জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসে থাকলেও তাঁদের শিকড় বাংলাদেশে। এদেশে তাঁদের আত্মীয়, বন্ধু, সহায়-সম্পদ রয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সুশাসনে আনন্দিত হন; আবার বৈষম্য, অপশাসন, দূর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লংঘন এবং এসব কারনে দেশের মর্যাদা হানিতে স্বাভাবিক ভাবেই কষ্ট পান, ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী হন ।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় থেকে অদ্যবধি যখনই তারা দেশে সংকট দেখেছেন, দেশের মানুষের কষ্ট দেখেছেন, অধিকারহীন মানুষের আর্তনাদ শুনেছেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লংঘণ দেখেছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতে দেখেছেন- তখনই তারা নিজেদের হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট দেশে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, এমনকি মিছিল করেছেন। সেব দেশের সরকার, আইন সভার সদস্য, মানবাধিকার সংগঠনে তারা যেমন লবিং করেছেন তেমনি স্বদেশের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সফর কালে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভ, বেদনা ও আকাক্ষার কথা তুলে ধরেছেন। সব কিছুই তাঁরা করেন দেশকে ভালবেসে, দেশ ও প্রিয় দেশের জনগণের স্বার্থে। এসব করতে গিয়ে তারা কাঙ্খিত পরিবর্তন অর্জনের লক্ষ্যে স্ব স্ব দেশের আইন অনুযায়ী আরও যা কিছু করা সম্ভব তাও করেন এবং করতেই পারেন। তাদের এসব উদ্যোগ যেমন বাংলাদেশের কোন রাজিৈনতক দল নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করতে পারেনা, সুবিধাভোগীও হতে পারেনা। কেউ অসুবিধার শিকার হলে তার উচিত অভিযোগ না জানিয়ে তাদের আকাঙ্খা পূরণে উদ্যোগী হওয়া। এটাই প্রত্যাশিত, এটাই গণতান্ত্রিক এবং এটাই উচিত। সরকারের মন্ত্রীদের দাবী, তারা কোন লবিষ্ট নিয়োগ করেননি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, একটি ‘জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান’কে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষে মি. সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিষ্ট ‘অ্যালক্যাডে এন্ড ফো কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫, ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে এই লবিষ্ট ফার্মকে চুক্ত স্বাক্ষরকারী হিসাবে মি. সজীব ওয়াজেদ মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশী দিয়েছেন। এই মি: সজীব ওয়াজেদ কি প্রবাসে আওয়ামী লীগ নেতা? দেশবাসী তো তাকে জানে সরকার ও সরকারী দল প্রধানের বহু মূল্য একজন উপদেষ্টা হিসাবে।

তিনি আরো বলেন, বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফি’তে নিয়োগ করা হয়েছিলো আরেকটি লবিষ্ট প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডল্যান্ডার’কে। এ ব্যাপারে কেঁচো খুড়তে গেলে আরও বহু বড় বড় সাপ বেড়িয়ে আসবে। এসব চুক্তি সম্পর্কে মন্ত্রীদ্বয় যদি না জেনে থাকেন তাহলে সরকার ও সরকার দলীয় কর্মকান্ড সম্পর্কে অজ্ঞত ও গুরুত্বহীন এসব মন্ত্রীর বিজ্ঞের মত কথা বলা বন্ধ করা উচিত। আর যদি জানেন, তাহলে তথ্য গোপন করার অভিযোগে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রর্থনা করা উচিত। কিন্তু এসব তাদের স্বভাবের সাথে মানাবে না। যারা রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স বোঝাই করে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বলে Ñ ‘আমরা জনগণের বিপুল সমর্থনে, তাদের রায়ে ক্ষমতায় এসেছি’। তাদের মুখে ন্যায় কিম্বা সত্য কোনটারই কোন স্থান থাকেনা। জনবিক্ষোভই তাদের প্রাপ্য এবং রাজনৈতিক বিনাশই তাদের ভবিতব্য। দেশবাসীর দুর্ভাগ্য যে, তাদের উপর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এই জুলুমবাজ অবৈধ সরকার যে অপরাধ করেছে, তা’ ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্যে লবিষ্টদের নিয়োগের জন্য সেই নীপিড়িত দেশবাসীরই ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করছে। অন্যদিকে, যে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার ভয়ের সংস্কৃতি অনুশীলন করছে- সেই একই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিএনপি’কে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। দেশবাসী সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, বিদেশে প্রথম লবিষ্ট নিয়োগকারী মি: সজীব ওয়াজেদের এবং আওয়ামী লীগ ও সরকারের গোপনে স্বাক্ষরিত লবিষ্ট নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর তদন্তও এসব সংস্থাই করবে কি না? জনগণের অর্থ ব্যয় করে সরকার ও সরকারী দল লবিষ্ট নিয়োগের নামে কি পরিমান অর্থ ব্যয় করেছে এবং তার উৎস কি তা’র স্বচ্ছ তদন্ত করে তার রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য আমরা দাবী জানাচ্ছি।